রবীন যখন স্টেশনে নামলো তখন সন্ধ্যে নেমে গেছে,ওদের শহর হলে হয়ত তেমন করে অন্ধকার বোঝা যেত না। স্টেশনের লাগোয়া দোকানগুলোতে জ্বলত আলো। পথ চলতি মানুষজন সেখানে কেনাকাটা করত,অথবা একটা মোগলাই বা রোল খেত গপগপ করে ক্ষিদের পেটে।
সুতরাং ট্রেন থেকে নেমে ঐ পথ দিয়ে সিঙাড়া আর গরম চপ ভাজার গন্ধ নাকে নিয়ে হেঁটে যেতে বেশ লাগত। তবে ওর ঠিকাদারি কাজের সূত্রে অর্জুনপুরে এসে প্রথমেই একটা ধাক্কা খেল। বেশ নিরিবিলি জায়গাটা। ট্রেন থেকে বোধহয় এখানে চার পাঁচটা লোকও নেমেছে কিনা সন্দেহ।
সুতরাং কিছু করার নেই পিঠের ব্যাগটা আর হাতের বাক্সটা ধরে এগোতে থাকে স্টেশন থেকে বেরিয়ে। তার আগেই লোকটাকে ফোন করেছিল কিন্তু লোকটা ধরেনি। কী একটা বাবুরাম না কিছু নাম.. বলেছিল তো স্টেশনের বাইরেই থাকবে কিন্তু এখন তো ফোনও ধরছে না। বাইরে কিছুটা এগোনোর পর টিমটিমে আলোতে একটা চায়ের দোকান দেখতে পায়। মনে তো হচ্ছে খোলা। ওখানেই বরং একটু দাঁড়িয়ে বাবুরামকে আবার ফোন করে এগোবে। আর যদি সে অগত্যাই না আসে তো জিজ্ঞেস করেই এগোতে হবে।
ফোনটা হঠাৎই বেজে ওঠে,ও তন্দ্রার ফোন। বেচারার খুবই মন খারাপ। কান্নাকাটি করে অস্থির ওর বুকে মাথা রেখে। মাত্র ছমাস হয়েছে ওদের বিয়ে হয়েছে।
-'পৌঁছে গেছো? অনেকক্ষণ ধরে ফোন করছি তোমাকে। কিছুতেই কানেক্ট হচ্ছে না। কী যে চিন্তা হয় তা বোঝো না।'
-' আমিও চেষ্টা করেছিলাম,কিন্তু টাওয়ার ছিল না। অত চিন্তা কোর না। সব ঠিক আছে,আমি নেমে একটু চা খাবো ভাবছি। ততক্ষণে লোকটা এসে পড়বে ঠিক।'
-'পৌঁছে আমাকে ফোন কোরো,আমার মন ভালো লাগছে না। কবে নিয়ে যাবে আমাকে?'
-' দাঁড়াও,আগে দেখি জায়গাটা কেমন তারপর তোমাকে নিয়ে আসব।'
তখনকার মত তন্দ্রাকে বুঝিয়ে ফোনটা রাখে রবীন। পায়ে পায়ে এগোয় চায়ের দোকানের দিকে। ওখানেই বেঞ্চে বসে আবার একটা ফোন করবে লোকটাকে। আর চাও খাবে।
হঠাৎই পাশে একটা বাইক থামে,রবীনকে বলে লোকটা...' স্যার আমি বাবুরাম,আপনাকে নিতে এসেছি।'
-' আমি ফোন করেছিলাম একটু আগে।'
-'ও গাড়ি চালাচ্ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি।'
হাতের ব্যাগটা রবীনই ঝুলিয়ে দেয় পাশে। পিঠের ব্যাগ নিয়ে চেপে পড়ে বাইকে।
গ্ৰামের রাস্তা দিয়ে অনেকটা পথ যাবার পর বেশ একটা নিরিবিলি জায়গাতে বাগান ঘেরা একটা বাড়ির সামনে দাঁড়ালো বাবুরাম। এখানে রাস্তায় আলো জ্বলে না তবে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ আর নিস্তব্ধতা মিলিয়ে বেশ ভালো লাগলো রবীনের। বাড়িটা দেখে মনে হচ্ছে বাগানবাড়ি মত,চারদিকে বেশ অনেক গাছ। যদিও রাতে ভালো করে বোঝা যাচ্ছে না তবে ফুলের সুবাস ভেসে আসছে নাকে।
-' আসুন স্যার,এখানেই আপনার থাকার ব্যবস্থা করেছি। আসলে এই গ্ৰামে সব মোটামুটি কাঁচা বাড়ি। আপনি তো জানেন গ্ৰামটা আদিবাসী গ্ৰাম। ঐ দু একটা পাকা বাড়ি আছে। তবে সেগুলো খালি নেই।'
বাবুরাম সদর দরজার তালা খোলে,একটা ক্যাচ করে আওয়াজ হয়। রবীন বুঝতে পারে এই বাড়িটাতে অনেকদিন কেউ থাকে না।
ওরা ভেতরে ঢোকে,বাবুরাম আলো জ্বালায়। তবুও ভালো ইলেকট্রিক আছে এখানে। কাজের সূত্রে এমন অনেক জায়গাতেই ওকে যেতে হয় যেখানে আলো নেই। যাক শরীরটা ক্লান্ত,ঘুমটা ভালো হবে।
রবীন বুঝতে পারে বাবুরাম সব সাফসুতরো করিয়ে রেখেছে লোকজন দিয়ে। বাড়িতে তিনটে ঘর,রান্নাঘর,বাথরুম সব আছে। পাশ দিয়ে উঠে গেছে ছাদে ওঠার সিঁড়ি। তবে সবটাই ঘরের ভিতরে। দরজা বন্ধ করে দিলেই নিশ্চিন্ত। ছাদের দরজাতেও তালা দেওয়া আছে সুতরাং সদর দোর আটকে দিলে এই বাড়িতে আর কোন চিন্তা নেই।
-' স্যার বাড়িতে গ্যাস,ফ্রীজ সবই আছে। আজকের খাবার এখানে রাখা আছে। কাল সকালে একজনকে নিয়ে আসব পছন্দ হলে রাখবেন। কাজকর্ম করে দেবে।'
বাবুরামের কথাবার্তা বেশ ভালো,এখানে ও রবীনের সহকারী হিসেবে কাজ করবে। ওদের প্রজেক্টটা একটু দূরে। একটা নদীর ওপর বাঁধ হবে সেই ব্যাপারেই এখানে আসা। রবীনের দায়িত্ব যেহেতু পুরোটা দেখা তাই ওকে এখানে থাকতে হবে।
বাবুরামকে বিদায় দিয়ে,গেট বন্ধ করে ভেতরে আসে রবীন। যাক এমন জায়গাতে যে এত কম ভাড়ায় এত সুন্দর একটা বাড়ি পাওয়া গেছে তাই রক্ষা। দেখা যাক তন্দ্রাকে বলবে যদি ও মোটামুটি সারাদিন একা এখানে থাকতে পারে তো ওকে কয়েকদিনের জন্য এনে রাখাই যেতে পারে। দেখা যাক যখন বাড়ি যাবে তখন না হয় বলবে কদিন এসে ঘুরে যেতে। তারপর যদি ভালো লাগে তাহলে পরে এসে থাকবে। রবীনের কাজ মোটামুটি বছর দুয়েক এখানে।
বাবুরাম রুটি আর তরকারি রেখে গিয়েছিল,আর শোওয়ার জন্য একটা ঘর দেখিয়ে গেছিল,আর পাশের ঘরটাও ব্যবহার করতে বলেছিল। তৃতীয় ঘরটাও খুলেছিল রবীন,তবে সেই বিছানাটা দেখেছিল ঢাকা দেওয়া। একটা আলমারী,ড্রেসিং টেবিল আর আলনা ঘরটাতে। ড্রেসিং টেবিলের কাঁচে বড় সাইজের কয়েকটা টিপ লাগানো। মেয়েদের এই একটা বাজে অভ্যেস যে তারা যেখানে সেখানে টিপ আটকে রাখে।
বাবুরাম জানিয়েছিল বাড়ির মালিকের সব জিনিসপত্র। ব্যবহার করতে পারে রবীন ইচ্ছে হলে। তবে বেশি ঘরের দরকার হবে না তাই আর তেমন করে গুছোয়নি। ওদিকের ঘর দুটোই পরিস্কার করে রেখেছে। যদি দরকার হয় তো পরে গুছিয়ে নেওয়া যাবে।
বাবুরাম দরজাটা বন্ধ করতে যাবার সময় হঠাৎই রবীনের খেয়াল হয় যে জানলাটা খোলা। ও জানলাটা বন্ধ করতে বলাতে বাবুরাম বলে,' ওটা খোলাই থাকে স্যার। একটু আলো বাতাস ঢোকার জন্য না হলে ঘর নষ্ট হয়ে যাবে। যদি বৃষ্টি ঝড় হয় তো বন্ধ করে দেবেন। অবশ্য বৃষ্টির জল ঢোকার চান্স নেই, কারণ চওড়া শেড আছে। যাক সকালে সব দেখবেন।'
বাবুরাম চলে গেছে কিছুটা আগে। একটু ফ্রেশ হয়ে এবার তন্দ্রাকে একটা ফোন করে। বেশ কিছুটা কথা বলে জানায় বাড়িটার কথা। তন্দ্রার সাথে মজাও করে এই বলে যে দরকার হলেই ও এখানে এসে থাকতে পারে। তবে বেশিদিনের জন্য নয়,মাঝেমধ্যে থাকবে। বাকি সময়টুকু রবীন একদম ব্যাচেলার লাইফ কাটাবে।
-' বাইরে বেরোতে না বেরোতেই ব্যাচেলার হয়ে গেলে তাই না? কাল আমাকে বাড়িটার একটা ছবি পাঠাবে আর ভিডিও কল করবে।'
-' আচ্ছা সে হবে।'
রুটি তরকারি খেয়ে বিছানায় হেলান দেয় রবীন। শোবার ঘরের আলোটা আর নেভায় না। তবে দরজাটা বন্ধ করেই শোয়। এই ঘরের লাগোয়া একটা ছোট বাথরুম আছে তাই অসুবিধা নেই।
ক্লান্ত শরীরে অঘোরে ঘুমিয়ে পড়ে রবীন,শুধু তারমধ্যেই নাকে যেন একটা সুন্দর চন্দনের গন্ধ এসে লাগে। কী সুন্দর সেই গন্ধ,চোখ বুজেই অনুভব করে রবীন। কিন্তু চোখ খুলতে ইচ্ছে করে না। সেই মিষ্টি গন্ধটা যেন ওকে পরম মায়াতে চোখ বন্ধ করিয়ে রাখে।
পরেরদিন সকালে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় রবীনের। জানলায় এসে দাঁড়ায়,বাগানে গাছে পাখিদের প্রভাতী গলা সাধা চলছে।
ঘর থেকে বেরোয় রবীন তারপরে সদর দরজা খুলে বাগানে এসে দাঁড়ায়। কত সুন্দর সুন্দর গাছ বাগানটায়। তারমধ্যে ফুলের গাছও আছে। জায়গাটা গ্ৰাম থেকে একটু দূরে আর এখানকার মানুষজন ভালো তাই নাহলে ফুল চুরি করতেই লোক এসে বিরক্ত করত।
বাগানে কিছু আগাছা থাকলেও মোটামুটি চারপাশটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। বাড়ির মালিক কোথাও একটা দূরে থাকে বাবুরাম বলেছিল। হয়ত শখ করেই গ্ৰামে এসে থাকবে বলে বাড়িটা বানিয়েছিল। তারপর আর পোষায়নি।
তুলসীতলার কাছে এসে একটু থমকে দাঁড়ায় রবীন। কেউ যেন খুব সকালে এসে ফুল রেখে গেছে এখানে। টিনের গেটটার দিকে তাকায় রবীন। ওটা তো আটকানো। হয়ত কোন ছেলেপুলে ঢুকেছিল পাঁচিল টপকে ফুল নিতে এটা তারই কাজ।
আবার ভেতরে আসে রবীন,এবার মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু চারধারে ঘুরে আসবে। বাবুরাম আসবে বলেছে নটা নাগাদ। হঠাৎই বন্ধ ঘরটার সামনে এসে একটু অবাক লাগে রবীনের,কাল তো এই ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিল বাবুরাম। এটা খুলে গেল কেন?
খোলা জানলাটার দিকে তাকিয়ে নিজেই ভাবে হয়ত জানলা দিয়ে আসা বাতাসে খুলে গেছে। আজ রাতে জানলাটা বরং বন্ধ করে রাখবে। দিনের বেলা খুলে দেবে। হঠাৎই ওর নাকে আসে একটা গন্ধ। কী যেন মনে করার চেষ্টা করে রবীন...হ্যাঁ গতকাল রাতে ঘুমের ঘোরে এই গন্ধটাই পেয়েছিল ও। সুন্দর একটা চন্দনের গন্ধ।
বাড়িটা ভালো লাগে রবীনের। দিনের বেলাতে আরও সুন্দর আর শান্তির নীড় লাগে বাড়িটাকে। সঙ্গে একটু চায়ের সরঞ্জাম আর বিস্কুট, কেক তন্দ্রা গুছিয়ে দিয়েছিল। সুতরাং চা বসালো রবীন গ্যাসটা জ্বালিয়ে। বাসনপত্র সবই আছে সুন্দর করে গোছানো।
ফ্রেশ হয়ে চা খেয়ে একবার ছাদে উঠবে ভাবে। ওখানে গেলে মোটামুটি তন্দ্রাকে পুরো বাগানটা দেখানো যাবে ওপর থেকেই। রবীন চাবির থোকাটা ঝুলিয়ে গেছিলো কী হোল্ডারে। বাড়ির সাজসজ্জা বেশ সুন্দর। অনেক ঠাকুরের ছবি চারদিকে,মনে হয় বাড়ির মালিক ঠাকুর ভক্ত। তবে নিজেদের ব্যবহার করা জিনিসপত্র সমেত এভাবে কেন ভাড়া দিলেন কে জানে? আসতেও তো পারেন মাঝেমধ্যে এখানে?
চাবি ঘুরিয়ে ছাদের দরজার তালা খোলে রবীন। বাইরের গেটে আর ছাদের গেটে দুই জায়গাতেই লোহার কোলাপসিবল গেট রয়েছে। সুতরাং নিরাপত্তা মোটামুটি ভালো। তবে জায়গাটা খুবই শান্তিপূর্ণ, জনবহুল শহরতলি থেকে এখানে এসে বেশ লাগছে রবীনের। তন্দ্রা এখানে এলে খুশি হবে।
ছাদে এসে চোখ জুড়িয়ে গেল রবীনের,আমগাছে যে এত আম রয়েছে আর কাঁঠাল গাছে কাঁঠাল তা বুঝতেই পারেনি একদম। ছাদের রেলিং ছাপিয়ে আমগাছটা নুয়ে পড়েছে। আমগুলো দেখে দোলা দিল রবীনের প্রাণেও। কেমন মালিক কে জানে? এত কিছু ছেড়ে কোথায় গিয়ে আছে তার ঠিক নেই। হয়ত বা চলে গেছে ছেলের কাছে বিদেশে।
ছাদে একটা ঘরও আছে,রবীন একটু ঠেলতেই দরজাটা খুলে গেলো। ওহ্ এতে তালা,শেকল কিছু নেই। ঘরটা ঠাকুর ঘর,এখনও শিবলিঙ্গ আর কৃষ্ণের মূর্তি আছে। তবে আবার অবাক হয়ে গেল রবীন শিবলিঙ্গের মাথায় ফুল আর বেলপাতা দেখে। মনে হচ্ছে কেউ সকালেই পুজো করে গেছে,হঠাৎই সেই চন্দনের গন্ধটা আবার নাকে ভাসে।
রবীনের কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয় হঠাৎই। নীচের ফুলটা হয়ত কেউ রেখে গেছে,তবে সে ছাদে উঠল কী করে?
তবে কী সত্যিই কেউ আসে এখানে? কিন্তু কোথা দিয়ে উঠবে সে? আর কেনই বা আসবে?
লোকে আসে ফলমূল চুরি করতে। পুজো দিতে কেউ দেওয়াল বা গাছ বেয়ে দোতলার ছাদে এসে উঠবে এমন গল্প কখনও শোনেনি জীবনে।
গেটের আওয়াজ হয়,রবীন ছাদ থেকেই দেখতে পায় বাইরে বাইক রেখে বাবুরাম ঢুকছে। তখনকার মত চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে রবীন নীচে নেমে আসে। বাবুরামকে নিয়ে ওদের কাজের জায়গাতে যেতে হবে।
সুতরাং ওকে এবার মোটামুটি রেডি হতে হবে। নীচে এসে দেখে বাবুরাম আবার রুটি তরকারি বানিয়ে এনেছে বাড়ি থেকে। কাজ করার জন্য একজনকে ঠিক করেছে বাবুরাম। সে বিকেলে আসবে শুনলো।
অনেকটা সময় লাগলো পুরো জায়গাটা ঘুরে আসতে। তবে জায়গাটা খুব ভালো চারদিকে সবুজে সবুজ আর তার মাঝে ঐ খরস্রোতা নদী বয়ে চলেছে আপন স্রোতে কলকলিয়ে। কিছুক্ষণ নদীর পাড়ে বসে থাকলে মনটা উদাস হয়ে যায়। এমন জায়গাতে চুপ করে বসে প্রকৃতিকে দেখার একটা আলাদাই আনন্দ আছে। কাজ শুরু হতে এখনও কয়েকদিন লাগবে অনেকটাই তোড়জোড় চলছে তার। তবুও এই কয়েকটা দিনে রবীনকে ভালো করে চিনে নিতে হবে জায়গাটা। একটা সাইকেলও জোগাড় করতে হবে,কারণ জায়গাটা বাড়ি থেকে একটু দূরে।
অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক কারণ এই জায়গাটাতে জনবসতি থাকা খুব একটা সম্ভব নয়।
দুপুরের খাওয়া একটা ছোট হোটেলে সেরে বাবুরামের সাথেই ফিরে এলো রবীন। পড়ন্ত বিকেলের আলোতে বেশ ঝকঝক করছে চারপাশটা। সত্যিই বাড়িটা খুব সুন্দর। তবে রবীনের জন্য এত বড় বাড়ি না হলেও চলত। কিন্তু এখানে তেমন কোন ভালো বাড়ি নেই তাই এই বাড়িটাই নিয়েছে বাবুরাম। তাছাড়া ভাড়াটাও বেশ কম।
বাবুরাম ওকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল বললো কাজের মেয়েকে নিয়ে আসবে খানিক বাদে।বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই ঐ চন্দনের গন্ধটা পেল রবীন। অবাক লাগে ওর,কাছাকাছি কোন বাড়ি নেই অথচ এমন ধূপের গন্ধ বাড়িটাকে ভরিয়ে রেখেছে। তবে কী বাগানে কোন চন্দনের গাছ আছে? যা হয়ত কেউ খেয়াল করেনি।
যাক পরে দেখবে কখনও। রবীন ফ্রেশ হয়ে নেয়,তারপর তন্দ্রাকে ফোন করে।
-' তুমি সাথে থাকলে ভালো হত। এতবড় একটা বাড়ি। আর আমি একা।'
-' বুঝতে পারছি এবার আমার কথা মনে পড়ছে। যাওয়ার আগে তো খুব বললে। আমি তাহলে চলে যাই। আমারও তোমাকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগছে না।'
-' সবে তো একটা দিন গেছে,এখনই? না না তোমার এখন যা অবস্থা এখানে একা রাখা যাবে না। আর আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ব কাজ নিয়ে। তুমি কী করবে সারাদিন? শরীর খারাপ হলেই বা কে দেখবে?'
-' কিছু হবে না। আমি একা থাকতে পারব। ফোন তো আছেই।'
-' না তন্দ্রা আগে আমাদের ছোট্টটা আসুক তারপর হবে। এখন না। আমি তো থাকব এখানে কিছুদিন। তাছাড়া প্রতি সপ্তাহেই তো বাড়ি যাবো।'
দূরত্ব ভালোবাসা বাড়ায়,রবীন বুঝতে পারে। কিন্তু বেশি আয়ও দরকার তাই এখানে আসতেই হল। এই সময়ে তন্দ্রার পাশে থাকলে ভালো হত।
বাবুরাম এসে গেছে,সাথে একটা ছেলেকে নিয়ে এসেছে কাজের জন্য। রবীন অবাক হয় দেখে,ছেলেটা রান্নাবান্না কাজকর্ম করতে পারবে?
-' হ্যাঁ হ্যাঁ সব পারবে। ও বাজার দোকান সব করে আনবে হাট থেকে। আপনাকে কিছু ভাবতে হবে না।'
-' কিন্তু কয়েকমাস বাদে তো আমার ফ্যামেলি আসবে তখন কী ও পারবে নাকি সব সামলাতে?'
-' বাবু তখন আমার মাকে নিয়ে আসবো,দিদিমণির সাথে থাকবে।'
ছেলেটা ভালোই কথাবার্তা বলে। ঠিকই আছে,ওর জন্য কারণ মহিলা রাখা একটু ঝামেলারও। তার চেয়ে বরং এই ভালো। আসবে টুকটাক রাঁধবে আর দোকান বাজার করে চলে যাবে।
তবে ঐ একটাই যে সন্ধ্যের পর আর সে থাকবে না,কারণ তার বাড়ি বেশ কিছুটা দূরে। সেখানে পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে। রবীন ঠিক করল এক সেট চাবি ওকে দিয়ে রাখবে। ওর সুবিধামত এসে বাজার করে রাতের রান্না করে রেখে যাবে।
ছেলেটা চটপটে আছে,তাড়াতাড়ি করে রান্নাঘরে গিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে আসে। বেশ ভালো করেছে চা। তারপর রবীনের রান্নাঘর মোটামুটি ওর ব্যাগ থেকে বের করা জিনিসে গুছিয়ে ফেলে। আসলে রান্নাঘরে অনেক জিনিস ছিলই। ঠিক যেন একটা চালু সংসার ফেলে কেউ চলে গেছে হঠাৎই।
বাবুরামকে আবার বলে রবীন সেই কথা,বাড়িটা এত ভালো অথচ দেখো মালিক কেন যে চলে গেলো?
কত গাছগাছালি সারা বাড়ি জুড়ে।
বাবুরাম হাসে,এমন বাড়ি এখানে কম তাই তো আপনার থাকার ব্যবস্থা এখানেই করে দিলাম।
ভালো লাগবে দেখবেন এখানে,তাছাড়া আমি তো আছিই।
আচ্ছা বাবুরাম,কাছাকাছি কী কেউ থাকে যে এখানে পুজো করতে আসে?
বাবুরাম হঠাৎই একটু চমকে ওঠে,তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে..হ্যাঁ এককালে যখন মালিকরা থাকতেন এখানে তখন তো কত লোকজন আসত, ওপরের মন্দিরে পুজো হত দোলে আর শিবরাত্রিতে। শিবের মাথাতে জল দিতেও আসত কেউ কেউ।
রবীন আবার যেন একটু চিন্তায় পড়ে,কিন্তু ছাদে উঠবে কী করে কেউ? তাহলে কী বাইরের দিকে কোন সিঁড়ি আছে?
বুধিয়া নামের ছেলেটা রান্নাঘর থেকে ডাকে,ও বাবু কটা রুটি খাবেন রাতে? সাথে ডিম কষা করে দিই? সব করে আমি চলে যাব বাবুরাম দাদার সাথে।
রবীনের চিন্তার জাল কেটে যায় বুধিয়ার ডাকে।
তারপর আবার অন্য কথাতে চলে যায়। বুধিয়ার ডিম কষার গন্ধ নাকে আসে। বাবুরাম নাক টানে,ভালোই খুসবু ছড়াইছে বেটা। কোন অসুবিধা হবে না থাকুন আমাদের গ্ৰামে। আপনার মন বইসে যাবে।
রবীন বলে,আচ্ছা বাবুরাম এখানে কী কোন চন্দনের গাছ আছে? রাতে ঘুমের ঘোরে চন্দনের গন্ধ পেয়েছিলাম। এখন অবশ্য নেই। ছাদেও সেই গন্ধ। সকালে গেছিলাম ছাদে।
বাবুরাম আমার চোখে চোখ রাখে,কী দরকার স্যার ছাদে ওঠার? কতদিন কেউ ওঠে না শ্যাওলা হয়ে গেছে। আমি তো ছাদ পরিস্কার করাই নাই।
-কিন্তু আমি তো দেখলাম সব ঠিকঠাকই আছে,এমন কী ঠাকুর ঘরের দরজা খোলা আর শিবের মাথাতে ফুল দেওয়া। আমি দরজা বন্ধ করতে গিয়ে দেখি শেকল নেই। আচ্ছা ওটা বন্ধ করা যায় না?
- মন্দির বন্ধ করা ঠিক নয় বাবু,ঠাকুর একটু ফুল জল পাচ্ছে পাক। ঐ বাহির পানে একটা সিঁড়ি আছে হয়ত কেউ আসে পূজা করতে।
রবীনের একটু চিন্তা হয় তাই বলে, ছাদে লোক উঠছে সে আবার নীচে ঢুকে পড়বে না তো?
আরে না স্যার,এখানে চোর নেই। তাও আপনি তালা দিয়ে রাখবেন সিঁড়ির লোহার গেটে আর দরজায়।
ওরা চলে গেছে অনেকক্ষণ,রাত্রিটা এখানে একঘেয়ে। টিভিটাও খারাপ,দেখা যাক একটা টিভির ব্যবস্থা করতে হবে। কতক্ষণ আর ফোন ঘাটা যায়? বাড়িতে অবশ্য অনেক বই আছে। তবে বই পড়ার অভ্যেস তেমন নেই ওর। বেশ কিছুটা সময় তন্দ্রার সাথে ফোনে কথা বলে খেতে বসে রবীন। নাহ্ বুধিয়া ভালোই রান্না করেছে।
ভালো করে সব দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে রবীন। বেশ কিছুটা সময় পরে ঘুমিয়ে যায়। ভোর রাতে নাকে ভেসে আসে অনেক দূর থেকে চন্দনের গন্ধ। রবীনের ঘুম ভেঙে যায় হঠাৎই, কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করে না। হয়ত বা পা অসাড় লাগে মনে হয় ঝিঝি ধরেছে। কিছুটা সময় জেগে আবার চোখের পাতা ভারী হয়। ঘুমের মধ্যেই শোনে পাতা নড়ার শব্দ,কারও হাঁটার শব্দ।
একটু বেলা করে ঘুম ভাঙে রবীনের চারদিকটা ঝলমল করছে রোদে। নীচের বাগানের দরজাটা খুলে বাগানে এসে দাঁড়ায়। তুলসীতলাতে আজও ফুল,তবে আজ হলুদ ফুল। ওপরের দিকে তাকায় রবীন দেখে কলকে ফুলের গাছটা নড়ছে হাওয়ায়। নিজের বোকামিতে হাসি পায়। তুলসীতলার ওপরেই তো ফুলের গাছ। ওখান থেকেই হয়ত ফুল ঝরে পড়েছে।
আজ আর ছাদে উঠতে ইচ্ছে করে না। বাবুরাম যখন বারণ করেছে তখন ঠিক করে আর খুব একটা ছাদে যাবে না। গেলেও ওকে নিয়েই যাবে। দরজাটা না খোলাই ভালো।
দেখতে দেখতে কেটে গেছে বেশ কিছুদিন,এর মাঝে রবীন বাড়িতেও ঘুরে এসেছে বেশ কয়েকবার। কাজও এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। সকাল থেকেই রবীনের শরীরটা খারাপ লাগছিল সেটাকে অগ্ৰাহ্য করেই সাইটে এসেছিল। কিন্তু বিকেলে ফিরে শরীরটা আরও খারাপ লাগছে,আজ বুধিয়াও আসেনি। ও একটা বিয়েবাড়ি গেছে। কিছু তেমন খেতেও ইচ্ছে করে না রবীনের। কিন্তু বাড়িতে আর বলে না শরীর খারাপের কথা,তন্দ্রার শরীর ঠিক নেই অযথা চিন্তা করবে। হাতের কাছে ওষুধের বাক্সটা থেকে একটা ট্যাবলেট নিয়ে গিলে ফেলে রবীন। তারপর ঘুমিয়ে পড়ে,শরীর এতটাই অবসন্ন যে নাড়ানোর ক্ষমতাও যেন নেই। মাথা যন্ত্রণায় চোখ খুলতে পারে না।
শরীরের কষ্টে মুখ দিয়ে মা ছাড়া আর কোন শব্দই বেরোয় না রবীনের। চোখ খুলতে পারে না রবীন কিন্তু অনুভব করে কেউ ওর মাথাতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে পরম মমতায়। কপালে পায় শীতল জলের স্পর্শ। রবীনের মুখ দিয়ে আবার বেরোয় উঃ মা মাগো। তারপর আর কিছু মনে নেই ওর। সকালবেলা অনেকবার বেল বাজানোর শব্দে ঘুম ভাঙে রবীনের। তখন বেশ বেলা হয়েছে,শরীরে তখনও যন্ত্রণা। তবুও তার মধ্যেই গিয়ে দরজা খোলে। অপরিচিত কাউকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
জিজ্ঞেস করে,'আপনি কে?'
ভদ্রলোক বলেন,' আমি এখানকার ডাক্তার,কিছুটা দূরে থাকি। একটা ফোন পেলাম,শুনলাম আপনি খুব অসুস্থ। এখনি যেন যাই ওখানে।তখন ভোর হয়েছে সবে। আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।'
অবাক হয় রবীন,কে ফোন করেছিল উনাকে? তবে কী বাবুরাম? না বুধিয়া?
বুধিয়া তো চলে গেছে বিয়েবাড়ি। আর বাবুরাম?
-' কে ফোন করেছিল আপনাকে?বাবুরাম?'
-' না একজন মহিলা,বাড়িটা আমি চিনি তাই আসতে অসুবিধা হয়নি।'
অবাক লাগে রবীনের,তেমন কোন চেনা মহিলা এখানে নেই ওর। আর ওর বৌ তো অনেক দূরে,তাছাড়া তেমনভাবে শরীর খারাপের কথা ওকেও বলেনি রবীন। সুতরাং কে আবার ফোন করল?
ডাক্তারবাবু ততক্ষণে ভেতরে এসেছেন। তারপর ওকে দেখেশুনে পরীক্ষা করে বললেন,'আসলে মনে হয় খুব ঠান্ডা লাগিয়েছেন বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে পুড়েছেন। কী তাই তো?
-' আমার কাজই তো এমন ডাক্তারবাবু। তা কিছু মারাত্মক নয় তো? আসলে আমি একা থাকি তো,তাই তেমন কিছু হলে অসুবিধায় পড়ব।'
-' একা থাকেন,কিন্তু আপনার পরিচিত পরিবার যারা আছেন এখানে তারা তো ভালোই। তাদের খবর পেয়েই তো আমি এলাম। তেমন বুঝলে তাদের বলবেন কেউ রাতে থাকবে। অবশ্য যা ওষুধ দিলাম তাতে কাজ হবে। তবে দিন তিনেক আর বেরোবেন না বুঝলেন।'
রবীন ওষুধ বুঝতে শুরু করে,একটা সুবিধা এখানকার ডাক্তারদের কাছে কিছু ওষুধ ইঞ্জেকশন থাকে। তবুও ওর মনটা ছটফট করতে থাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে।
তাই জিঞ্জাসা করেই ফেলে,' একটা কথা,হ্যাঁ আপনি এই বাড়িতে আগে এসেছেন? বললেন যে বাড়িটা চেনেন। আর কে ফোন করেছেন তার নম্বরটা একটু দেবেন আমাকে? তার সাথে একটু কথা বলে ধন্যবাদ দিতাম।'
-' হ্যাঁ এসেছি বইকি আগে,এই বাড়িতে দুজন বয়স্ক স্বামী স্ত্রী থাকতেন। কী যেন নাম..হ্যাঁ মনে পড়েছে শিবেন বাবু আর তার স্ত্রী। ভদ্রমহিলা হঠাৎ অসুস্থ হন,তাই আমি এসেছি কয়েকবার। আর এই অঞ্চলে এমন বাড়ি কটা আছে বলুন? স্ত্রীর আবদারে বাড়ি করে এলেন,তারপর বছর পাঁচেক থেকে চলে গেলেন। আসলে ভদ্রমহিলা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আর এখানে রাখা যাচ্ছিলো না।'
-' তারপর,কী হল?'
-' ঠিক জানি না,শুনেছি ভদ্রমহিলা মারা গেছেন। ভদ্রলোক এসেছেন কখনও তবে আর থাকেননি।'
এই গল্প মোটামুটি জানা রবীনের তাই জিঞ্জেস করল,' আচ্ছা ডাক্তারবাবু একটু ফোন নংটা যদি দেন।'
ডাক্তারবাবু কথা থামিয়ে ফোনে মন দিলেন,রবীন উৎসুক হয়ে রইলো। উনি সমানে ফোন দেখে যাচ্ছেন তখনও।
-' আরে কোথায় গেল? আমিও ঘুমের চোখে ফোনটা পেলাম। এখন দেখছি না তো নংটা। তাহলে কী ভুল করে ডিলিট করে ফেললাম?'
অন্যের ফোন কখনও হাতে নিয়ে দেখতে পারে না সে,তবুও ঝুঁকে দেখতে চাইল কে ফোন করতে পারে। কিন্তু কিছু দেখতে পেল না।
ডাক্তারবাবু এবার একটু ব্যস্ত হলেন,' হ্যাঁ আমি যদিও একটু দূরে থাকি,তবুও চেষ্টা করি মানুষের বিপদে আসতে। আমার নংটা রেখে দিন দরকারে ফোন করবেন। আর অসুবিধা হলে আসতেও পারেন খুব বেশি দূর নয়।'
ডাক্তারবাবু চলে গেছেন। রবীনের মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে,আসেপাশে কোন পরিচিত বাড়ি নেই। একটু দূরে বাড়িঘর আছে তবে তাও গুটিকয়েক। রবীন কারও সাথে তেমন করে মেশে না।অথচ কে তার শরীর খারাপের খবর রাখলো? ডাক্তারবাবুকে ফোন করল?
ওষুধটা খেয়ে একটু ঘুম ঘুম ভাব আসে। বাবুরামকে একটা ফোন করে যে আজ আর সে যাবে না সাইটে। বাবুরাম চিন্তিত হয়ে ওঠে শরীর খারাপ শুনে,' তাহলে আমি কী যাব স্যার? বুধিয়াতো নেই। কাল আসবে।'
-' না না তুমি ব্যস্ত হয়ো না। বুধিয়া কিছু রান্না করে রেখে গেছে। আমার এখন ঘুম পাচ্ছে,উঠে খাবো।'
-' কিন্তু ডাক্তার তো দেখাতে হবে। আমি কী আপনাকে নিয়ে যাব,পাশের গাঁয়েই আছেন একজন।'
-' আরে না না,সে তো কোন সকালে ডাক্তারবাবু নিজে থেকেই এসেছিলেন। বললেন কে যেন ফোন করেছিল উনাকে। কোন মহিলা। অথচ নম্বর দিতে পারলেন না বললেন মুছে গেছে। কে বল তো?'
বাবুরাম চুপ করে যায় কিছুক্ষণ,' তারপর বলে,কি জানি..আচ্ছা আমি যাবো একবার। আপনার কী লাগবে দেখে আসব।'
রবীনের শরীরটা ক্লান্ত লাগে ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রবীন ভেসে যায় এক স্বপ্নের জগতে। কে যেন চন্দনের গন্ধ মেখে ওর মাথার কাছে বসে। ঘুমের মধ্যেই ওষুধের জন্য ঘাম হয় ওর,গরম লাগে কিন্তু চোখ খুলতে ইচ্ছে করে না। তারপরেই একটা ঠান্ডা অনুভূতি পায় আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
কলিং বেল কয়েকবার বাজিয়ে সাড়া না পেয়ে বাবুরাম ফোন করে। দুবার রিং হবার পর ওদিক থেকে সাড়া আসে হ্যালো,কে?
-' স্যার আপনি কী ঘুমাচ্ছেন? আমি বাবুরাম,একটু দরজাটা খুলুন।'
রবীন দরজা খুলতে যায় শরীর এখন অনেক হাল্কা। ডাক্তারবাবুর ওষুধে কাজ হয়েছে। ভাগ্যিস ডাক্তারবাবুকে পাওয়া গেছিল। তবে এভাবে ডাক্তার হঠাৎই হাজির হল কার তলবে তা বুঝতে না পেরে রবীনের ভীষণ একটা চাপা অশান্তি হয়। তবে কী কেউ ওকে নজরে রেখেছে? নাকি অন্য কিছু?
অবশ্য বেশ কিছুদিন এই বাড়িতে আছে,মাঝে বাড়িতেও ঘুরে এসেছে তেমন কোন অসুবিধা ওর হয়নি। মাঝেমধ্যে ঐ চন্দনের সুবাসটা নাকে লাগে,তবে ঐ গন্ধটা ভালো লাগে রবীনের। এখন সুবাসটা তার অভ্যেস হয়ে গেছে।
নিজেই সকালে তুলসীতলাতে ধূপ আর ফুল দিয়ে আসে। ছাদে উঠে ঠাকুরঘরে একটু ফুল দিয়ে দেয়। ভালোই লাগে এখানে থাকতে। ভেবেছে বাচ্চাটা হবার পর একটু বড় হলে তন্দ্রাকে এখানে নিয়ে আসবে।
বুধিয়া বলেছে তখন ওর মাকে নিয়ে চলে আসবে,সারাদিন তন্দ্রার কাছে থাকবে।
বাবুরামকে দরজা খুলে দেয় রবীন। ওর হাতে টিফিন ক্যারিয়ার রবীন বোঝে ওর জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।
এরা ওকে খুবই সাহায্য করে। বাবুরাম জিজ্ঞেস করে,' আপনি চা খেয়েছেন?
-'না খাওয়া হয়নি,একটু বিস্কুট খেয়ে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।'
-' আচ্ছা,আমি একটু চা বসাই। খেলে আপনার ভালো লাগবে।'
ওকে না করতে পারে না,করলেও শুনবে না। বাবুরাম রান্নাঘরের দিকে যায়। তারপর চা করে নিয়ে একটু বাদেই আসে। গরম পাউরুটির সাথে চা খেয়ে একটু ভালো লাগে রবীনের।
-' গরম খাবার করে এনেছি,স্নান করে খেয়ে নিন। ভালো লাগবে।'
-' হ্যাঁ খাবো। তুমি আবার এসব করলে কেন? খাবার তো কিছু ছিল ফ্রীজে। ওগুলোই..'
-' না,বৌ বললো একটু গরম মাছের ঝোল ভাত নিয়ে যেতে। তাই আনলাম।'
-' আচ্ছা,ডাক্তারকে কে ডেকে আনলো ভোরে বল দেখি? আমি তো কাউকেই কিছু বলিনি।'
Comments
Post a Comment