Age is just a number এই কথাটা এখন সবাই জানি সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে। আরেকটা কথাও খুব শোনা যায় অনেক দায়িত্ব পালন করেছি এবার নিজের মত বাঁচব। আমিও কিছু দিন এই সব ইমোশনাল লেখা টেখা পড়ে বেশ ভেবেছি যে সত্যিই তো বয়েস একটা সংখ্যা মাত্র। তারপর সেটাকে কাজে লাগাতে গিয়ে দেখেছি আসলে সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়। এক বয়েসে যা করেছি এখন আর তা করতে পারি না। স্কুলে পড়া কালীন আমার রোগা ঢ্যাঙা চেহারায় একসাথে তিনটে সিঁড়ি টপকে উঠতাম দোতলায় এখন এক পা গুণে সিঁড়ি দিয়ে নামা ওঠা করি। বয়েস যে সংখ্যায় বেড়েছে অনেক তা মনে করিয়ে দেয় প্রতি মুহূর্তে। আসলে যে বয়েসে যা সেটাই ভালো আর সুন্দর। তাই বয়েস সত্যি একটা সংখ্যা হলেও সংখ্যাটা ছয় না ষাট? নয় না নব্বই তা ছয় বা নয়ে মনে না এলেও ষাট বা নব্বই প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেয়।
এই প্রসঙ্গে আমার কমবয়েসে দেখা একটা ঘটনার কথা মনে হল। আমাদের গ্ৰামের কিছু ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক মানুষ ঠিক করলেন তারা একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট করবেন। চারিদিকে হই হই রব,এই প্রসঙ্গে বলি সবাই একসময় বেশ ভালো ফুটবল খেলতেন।
যেদিন খেলা হবে সেদিন সারা গ্ৰামের মানুষ ভেঙে পড়লো খেলা দেখতে। খেলা শুরু হওয়ার কিছুটা বাদেই বাদ সাধলো বয়েস। অনেকেই পড়ে গিয়ে চোট পেলেন আর দুজন কোমর আর পা ভেঙে শয্যা নিলেন। তবে অনেকেই টিকে রইলেন শেষ পর্যন্ত নিয়মিত অনুশীলনের ফলে। সুতরাং এই অনুশীলনটা জরুরী। তবুও কুড়ির শারীরিক অনুশীলন আর ষাটের অনুশীলন এক হয় না। কিন্তু নিজে সুস্থ থাকতে হলে আর আপনার প্রিয়জনকে ভালো রাখতে হলে নিয়ন্ত্রিত অনুশীলন সবারই জরুরী। সেটা আপনার খাওয়া দাওয়া আচার ব্যবহার সবেতেই।
সুতরাং বয়েস সংখ্যা ভেবে অযথা লাফালাফি করা ভালো নয়। এতে হোঁচট খেয়ে পড়ে হাত পা ভাঙতে পারে। বয়েস সংখ্যা ভেবে অনেকেই নিজের পুরোনো সঙ্গীকে ছেড়ে চলেছেন নতুন করে গাঁটছড়া ভাবতে। কারও পঁচিশ বছরে সংসার কারও বা কুড়ি,তিরিশের সংসার আর ভালো লাগছে না। ফোকলা দাঁতে,অথবা টুপিতে টাক ঢেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নতুন সঙ্গী সঙ্গিনীকে নিয়ে বিদেশে। অথচ এই আনন্দ কখনও হয়ত দিতে পারেননি এতগুলো বছর যাকে সাথে নিয়ে ছিলেন তাকে। আসলে তখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না,কেউ আপনার মাথায় ঢোকায়নি এবার নিজের মত বাঁচো আর বয়েস শুধু একটা সংখ্যা।
যে সন্তানেরা আপনাকে ভালোবাসত আপনার ওপর তাদের নির্ভরতা ছিল। যেহেতু তারাও এখন প্রেম করছে সুতরাং আপনাকেও একটা প্রেম করতে হবে। আসলে এই পরকীয়ার বিষ আগেও ছিল এখনও আছে। আপনি যদি নিঃসঙ্গ হন,স্বামী বা স্ত্রী না থাকে তাহলে ভাবুন কোন সমস্যা নেই। কিন্তু অনেকগুলো বছর সুখে অসুখে যেখানে কাটিয়েছেন হঠাৎই সে জায়গা ছাড়বেন কেন? অসুখ বড় ছোঁয়াচে,কে বলতে পারে মাথাভর্তি সাদা চুল অথবা ফোকলা দাঁতে যে হাসি আপনি আজ হাসছেন তা আবার অসুখে আক্রান্ত হল।
আমাদের একটা বয়েসে যে জামাকাপড় পরতে দেওয়া হয়নি। তা এখন পরি,কিন্তু কুড়ির সেই সৌন্দর্য কী এখন আর আছে? তবুও নিজেকে জোর করে সাজাই জীবন তো একটাই ভেবে। তাতে খুব একটা কোন দোষ নেই,কারণ নিজেকে সাজিয়ে আমি কারও ক্ষতি করছি না। ভাঙছি না কোন সংসার। আমি আমার পছন্দের কাজ করে ভালো আছি,ভালো থাকার জন্য আমাকে কাউকে দলে টেনে কারও সংসারে আগুন লাগাতে হচ্ছে না।
কে বলতে পারে কারও সাজানো সংসারে যে আগুন আপনি ধরাচ্ছেন এবার নিজের মত বাঁচবেন বলে সে আগুন আপনাকে কোনদিন স্পর্শ করবে না?
যেখানে অবহেলা আর অপমান সেখানে থাকতে মন না চাইলে সরে যান। কিন্তু বয়েস একটা সংখ্যা ভেবে অযথা লাফালাফি করে যা খুশি করব তা ভাববেন না। পরে গিয়ে কোমর ভাঙবে। আপনি লাফান,দুই হাত ওপরে তুলে,আকাশ দেখুন..কত কী জীবনে দেখা হল না সেগুলো দেখুন। বাঁচুন অবশ্যই নিজের মত করে তবে তাতে যেন আপনার পরিবারের ক্ষতি না হয়। পথ আমাদের আশ্রয় দেয় না,পথ আমাদের চলতে হয় দেখে শুনে কারণ প্রতি পদেই বিপদ আছে। আছে ঠকার ভয়ও। ঘর আমাদের আশ্রয় দেয় তাই নিজের ঘরকে ভালোবাসুন,আপনার মধ্যে যে অপূর্ণতা আছে তার বিষ অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে তাদের সংসারে আগুন লাগাতে আসবেন না।
বরং পাশে দাঁড়ান,সাহায্য করুন বা হাত ধরুন তাদের যাদের সাহায্যের দরকার।
এবার নিজের মত বাঁচতে হবে এই বুলি যারা সারাক্ষণ আওড়ায় তারা কখনই নিজের মত বাঁচতে পারেনি আর পারবেও না। আপনার সন্তানের ছোটবেলার ছোট ছোট কথা আর হাসি আপনার নিজের সুখ,আপনার স্বামী বা স্ত্রীর সাথে কাটানো একটা সুন্দর বিকেল আপনার নিজের মত সুখ,আপনার মা বাবার সাথে কাটানো একটা সুন্দর দিন আপনার নিজের মত সুখ। যারা এগুলো উপভোগ করতে পারেননি তারা কোনদিনই সুখের সন্ধান পাননি। সুখের সন্ধান ফেসবুকের সাজানো গোছানো ছবিতে হাজার লাইকে হয় না। সুখ আসে সবাইকে নিয়ে ভালো থাকায় আর রাখায়।
তাই বয়স নিশ্চয় সংখ্যা তবে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে,আর তার ওজন বাড়তে থাকে। সুতরাং সেই ওজন বুঝে নিজেকে পরিণত করুন ভালো থাকবেন।
অনেক করেছি দায়িত্ব পালন,এবার নিজের মত বাঁচবো। নিশ্চয় বাঁচবেন,নিজেকে ভালো রাখুন,ভালোবাসুন আপন মানুষজনকে। পছন্দের কাজ করুন যা অন্যের ক্ষতি করছে না। এতদিন নিজের কাজ বা চাকরির জন্য যে সময় একে অপরকে দিতে পারেননি তা দিন। ভালো থাকবেন।
বয়েস সংখ্যা,সময় সীমিত কখন হব মৃত সবই অজানা। তাই ভালো থাকবো ভালোবেসে,কাউকে কষ্ট দিয়ে নয়।
সুখের চাবিকাঠি
সুখ কথাটা খুবই আপেক্ষিক,এক একজন এক এক জিনিসে খুশি। আমি যে কথাটা বললাম সেটা খুশি,সুখী নয়। তবে আমরা এই খুশি আর সুখটাকে মিলিয়ে মিশিয়ে ফেলি সবসময়ই।
অবশ্য সুখ আর খুশি দুই বন্ধুর মতই,কখনও পাশাপাশি থাকে গলাগলি করে। আবার কখনও বা ঝগড়া আর লাঠালাঠি হয় দুজনের। অনেক সময়ই আবার এই খুশি বন্ধুটির আকাশছোঁয়া চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমরা আমাদের প্রিয় বন্ধু সুখকে হারিয়ে ফেলি হঠাৎই।
আমার চেনাজানা একটা পরিবারের কথা খুব মনে হল এই প্রসঙ্গে। আমি মাঝেমধ্যেই ওদের বাড়িতে যেতাম। খুব ছোট্ট একটা কোয়ার্টার ছিল ওদের,তাতে একটাই ঘর আর একটা ছোট বিছানা। খাটের নীচে সব জিনিসপত্র থাকত। ওরা আমার দেশের বাড়ির লোক ছিল আর ছেলেটা ছিল আমার বন্ধু। সরকারি গ্ৰুপ ডি চাকরি পেয়েছিল বাবা মারা যাবার পর। বিয়ে করেছিল ভালোবেসে শহরের একটা মেয়েকে। মেয়েটার বাড়ির অবস্থা ওদের বাড়ির অবস্থার চেয়ে কিছুটা ভালো ছিল।
ওদের ছোট্ট সংসার আমাকে টানতো,আমরা মাঝেমধ্যে ওদের ওখানে যেতাম। দেখতাম ওর বৌ একফালি বারান্দায় উনুন জ্বালিয়ে বসে রান্না করছে। রান্না করতে করতেই কত গল্প করত হাসিমুখে। আমার দেখতে বড় ভালো লাগত যে ঐটুকু একটা ছোট্ট ঘর এত সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে কত সুন্দর করে হাসিমুখে ওরা আছে।
উনুনের তপ্ত আঁচে তখন তরকারি ফুটছে। চারদিকে ছড়িয়েছে রান্নার সুবাস। আর গৃহিণীর লালচে মুখে পরিতৃপ্তির হাসি। বেশ রসিয়ে কষিয়ে রান্না করত একটাই পদ,অনেকদিন দেখেছি আলু পেঁপের তরকারি বা আলুপটলের তরকারি করছে। কখনও দেখেছি ডিমের ডালনা করছে। সেই তরকারির রঙ আর সুবাসে মন ভরে যেত। আমি বলতাম আর কিছু করবে? বলত না গো একটা পদ দিয়েই খাই,তাই তো একটু তেল ঝাল দিয়ে রান্না করি। সকালে ওকে রুটি আলুভাজা করে দিয়েছি টিফিনে নিয়ে গেছে। ভাত অফিসে খায় ক্যান্টিনে।
ছেলেটার প্রমোশন হল,ওদের একটা দুই ঘরের বড় কোয়ার্টার হল। আরেকটু ভালো থাকতে শুরু করল ওরা। ঘরের চাদর,বালিশে লাগলো রুচির ছোঁয়া। দরজা জানলাতে ঝুললো বাহারী পর্দা। রান্নাঘর আলাদা হতেই বাড়লো রান্নার পদ। দেখলাম এখন আর মশলা বেটে রান্না করে না ওর স্ত্রী। আমি গেলেই নতুন জিনিস দেখায় আর খুশির হাসি হাসে মেয়েটা। আমার ভালো লাগে,বলি একটা ঘরে অনেক কষ্ট করেছো এবার একটু ভালো থাকো।
ওদের সংসার বাড়লো বৌটার কোল ভরে এল ছেলে। তখনও আমি গেছি যখনই ইচ্ছে হয়েছে। ওদের বাড়িতে আমি কাছের মানুষের ছোঁয়া পেতাম।
একদিন গিয়ে একটু অস্বস্তি হল,দেখলাম ঘর ভর্তি লোকজন। শুনলাম বাপের বাড়ির লোকজন কয়েকদিন থাকবে। রান্নাঘর থেকে ভেসে এল মাংস রান্নার গন্ধ,ওর বোন মাংস রাঁধছে। ফ্রায়েডরাইস হচ্ছে। আমাকেও বললো খেয়ে যেতে। মাংস এনে দিল প্লেটে করে।
তারপর আরও দুএকবার গেছি যখনই গেছি তখনি দেখেছি বাড়িতে লোকজন। প্রচুর রান্নাবান্না হচ্ছে। বৌটার স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে,চুলে আধুনিক ছাট। ঘরে নতুন আসবাব। আমাকে খেতে দিল দামী প্লেটে,আগে ঘরে তৈরী কিছু খেলেও সেদিন বাইরের খাবার খেলাম। ওর বোন অনেক গল্প করল।
তারপর আমার অনেকদিন যাওয়া হয়নি,আমিও মা হয়েছি ততদিনে। আমার ব্যস্ততা বেড়েছে।
অনেকদিন বাদে শুনলাম ছেলেটার জেল হয়েছে। একদিন ওর বৌ হঠাৎই আমাদের বাড়িতে এল,ওকে আগে দেখা চেহারার সাথে মেলাতে পারলাম না। সারাক্ষণই কান্নাকাটি করল আর ছেলেটাকে অভিসম্পাত করল।
ছেলেটা নাকি প্রচুর টাকা নয়ছয় করেছে মানুষের তাদের চাকরি দেবে বলে। এখন জেলে আছে মানুষকে ঠকানোর দায়ে। সবরকম নেশা করত,খারাপ পাড়াতেও নাকি যেত।
আমি অবাক হয়ে বললাম কেন? ও তো এরকম ছিল না। বললো বন্ধুবান্ধব প্রচুর জুটেছিল,সারাক্ষণ আড্ডা দিত। বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা নিয়েছে নানা ছুতোতে।
মাস ছয়েক পর ও ছাড়া পেল,চাকরি থেকে সাসপেন্ড হল হাফ স্যালারীতে। সংসার তখন টালমাটাল।
আমাদের বাড়ি একদিন হঠাৎই এল,যাদের সাথে এতটা আন্তরিকতা ছিল তার কুকর্মে আমিও স্তম্ভিত। রীতিমত অস্বস্তি হল দেখে,দেখলাম কোটরে ঢুকে যাওয়া কঙ্কালসার চেহারা।
জিজ্ঞেস করলাম কেন এইসব করলি? বললো বৌয়ের চাহিদা মেটাতে। অবাক হলাম শুনে,ও তো খুবই সাধারণ ছিল রে।
বললো বৌ আর শ্বশুরবাড়ির মানুষের ঠ্যালা সামলানো আর ওর মাইনেতে সম্ভব ছিল না। তাই ওকে ধার করতে হত।
জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করল না নেশা,খারাপ পাড়া ইত্যাদির কথা। কে জানে কোনটা সত্যি আর মিথ্যে?
যে বৌকে আর তাদের পরিবারকে খুশি করতে চুরি করলো,সে ওকে ছেড়ে চলে গেল। আসলে যতটা ক্ষমতা আমাদের তাই দিয়েই আমাদের চলা উচিৎ। খুশি হওয়া এক একজনের এক এক রকম। কেউ খুশি হই উপহার পেলে,কেউ বা বেড়াতে গেলে,কেউ বা ভালোমন্দ খাবার খেয়ে,আবার কেউ বা নেশা করলে,আবার কারও খুশি চুরি করে,কেউ বা খুশি হয় জীবজন্তুর সেবা করে বা পরোপকার করে।
একেকজন একেক ভাবে খুশি হয়। কে জানে কেন হঠাৎই ওদের খুশির সমীকরণ এতটা জটিল হয়ে গেছিল? বেশ তো ছিল ওরা হাসিখুশি প্রাথমিক চাহিদা টুকু মিটিয়ে। ওদের পরিবারের হাসিখুশি ছবির ফ্রেমটা আমার চোখে এখনও অমলিন। তবে ডিমের ঝোল ফোটার গন্ধ কোথায় যেন চাপা পড়ে গেছে বড়লোক হবার নেশার ঝাঁঝালো গন্ধে।
অনেকগুলো বছর কেটে গেছে,ও চাকরিতে আবার বহাল হয়েছে। ওর বৌ ছেলে নিয়ে ফিরে এসেছে। তবে আর আগের মত কোন কিছুই হয়নি।
তিক্ততার বিষে সুখ হয়েছে অসুখ,খুশিগুলো দীর্ঘশ্বাস ফেলে গুমরে ওঠে স্বামী স্ত্রীর মাঝে গড়ে ওঠা দুর্ভেদ্য দেওয়ালে।
অনেকেই আনন্দ,খুশি,সুখ সব কিছু এক করে ভাবেন। খুশি থাকা মানেই সে সুখী। ঝলমলে ছবি আর মুখের হাসি দেখেই ভাবেন মানুষটা কত সুখী তাই সারাক্ষণ মুখে তার হাসি ঝলমল করছে।
খুশি থাকাটা জরুরী তবে খুশি থাকার সরল সাধাসিধে উপায়গুলো ভাবুন। কারও টাকা না মেরে,চুরি বা খুন না করেও আপনি খুশি থাকতে পারেন নিজের মত। নিজেকে খুশি রাখতে অন্যকে কাজে লাগাবেন না। এতে সাময়িক খুশি মিললেও তার অভিশাপে পুড়বে আপনার জীবন।
সুখী হতে আমরা সবাই চাই কিন্তু তবুও নানা সমস্যা আমাদের ঘিরে ধরে। সুখ পাই না ইচ্ছেমত,যার ফলে হতে হয় চরম অসুখী। আসলে আমার আপনার সুখে আগুন দেবার জন্য আমাদের চারপাশেই আছে অনেকে। তবুও আমরা কিছু সুখের পেছনে ছুটি,হয়ত পাই কিংবা পাই না। সব খুশি হবার জিনিস ছোঁয়া সম্ভব নয়,যা পেয়েছি তাতেই যদি সন্তুষ্টি আসে ভালো থাকা যায়। আমার যা আছে তাকে যত্ন করে রাখলে সুদে বাড়বে মূল অযথা খুশি পাবার নেশায় ফাটকা খেলতে গেলে সবই হারাবে।
সুখ বড় চঞ্চল,তাকে ধরা কঠিন তবুও সুখে থাকার প্রথম সোপান খুশি থাকতে শেখা। তা থাকতে শিখলে নিজের অজান্তেই সুখের চাবি এসে যায় হাতের মুঠোয়।
●●●●●●●●●●●
পরকীয়া
পরকীয়া বহুল পরিচিত আর চর্চিত একটা কথা যা শুনলে আমরা ছি ছি করে কানে হাত দিলেও গোপনে চোখ রাখি ঐ খবরগুলোতে। আমার মনে হয় পরকীয়ার খবর পড়েন না এমন মানুষ কম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনেক আগের সময় থেকে এই পরকীয়া ছিল,আছে থাকবে। আর বিদেশী সাহিত্যেও এই বিষয় বহুল পরিচিত। অনেকেই আবার বলেন রাধাকৃষ্ণের প্রেমও তো পরকীয়া ছিল। আমি সেই প্রসঙ্গে বা কোন বিতর্কিত বিষয়ে কথা বলতে চাই না।
অনেকেই বলেন সংসারের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে পরকীয়া খোলা বাতাস। সংসারের দায়িত্ব কর্তব্য তো করছি সবই,তার বাইরে যদি আমার একজন বন্ধু বা বান্ধবী থাকে তাতে দোষ কী?
দোষ হয়ত কিছুই না শুধু বন্ধু থাকলে,তবে এই সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্বেই আটকে থাকেনা। আমরা নির্ভর করতে থাকি অপরের ওপর নিজেকে খুশি রাখতে। তার সাথে কথা বললে মন ভোমরা হঠাৎই গুনগুনিয়ে ওঠে। মনটা অস্থির হয় তার মেসেজ না পেলে। বারবার লাস্ট সীন খুলে দেখতে থাকি। সম্পর্কে যদি শুধুই বন্ধুত্ব থাকে কোন অবশেসন না থাকে তাহলে এত উতলা হওয়ার কী আছে?
আমাদের তো স্কুলে বা কলেজে পড়াকালীন এমন অনেক বন্ধু বান্ধব থাকে যাদের সাথে অনেকদিন কথা না হলেও কোন হারানোর ভয় থাকে না।
আমাদের জীবন আমরাই একঘেয়ে করে ফেলি,আর তেমনভাবে থাকতে পারি না সুখে দুঃখে যে মানুষটা আমার পাশে ছিল তার পাশে। অনেকে অবশ্যই মানসিক শান্তি পেতে জড়ান সম্পর্কে।
কিন্তু সত্যিই কী শান্তি আসে? নাকি একটা সরল সাধামাটা মনের বিশ্বাসে আকাশের কোণে জমে ওঠে কালো সন্দেহের মেঘ।
অনেকে একটা বয়েসের পর নিজেকে আবার নতুন করে আয়নাতে দেখতে চান। যে প্রশংসা কোনদিনই আপনার স্বামী বা স্ত্রী আপনাকে করে না। তা যদি অন্য কেউ করে তাহলে মনে খুশির নৌকা হঠাৎই বৈঠা বাইতে থাকে তরতর করে।
যে মানুষ কখনও ডিও মাখতেন না তার গায়ে ভুরভুর করতে থাকে হঠাৎই বডিস্প্রের গন্ধ। আফটার শেভ লোশনের ব্রান্ড বদলায়। শার্ট বদলাতে ইচ্ছে করে রোজই।
বাড়ির যে গিন্নী বান্নী বৌটা এতদিন তাকে সাজাতে হিমসিম খেয়েছে সেও খুশি হয় দেখে যে তার অগোছালো বরটা একটু গুছোতে শিখেছে নিজেকে।
প্রথম প্রথম ভালো লাগে,আজকাল বরের ভালোবাসা রাতে একটু বেশিই পাচ্ছে। হঠাৎই ভোর রাতে উঠে আদরের ছড়াছড়ি। কখনও সে গান শোনাচ্ছে। মনটা খুশিতে দুলে ওঠে সাদামাটা বৌটার।
কিন্তু ঐ যে হঠাৎই একদিন সে বুঝতে পারে,কখনও বা বুঝতেও পারে না যে এই আবেগে ভেসে যাওয়া মানুষটা আসলে বানভাসি আবেগে ভাসছে।
আর সন্দেহের বিষ এমনি তীব্র যাতে মরণ হয় একটু একটু করে আর সেই মৃত্যুযন্ত্রণা সহ্য করা অসহনীয়।
যে বৌ বরকে ছেড়ে দিনের পর দিন গিয়ে বাপের বাড়ি থাকতো। তখন কোনদিনই মনে হয়নি বর কিছু করতে পারে,সেই এখন লুকিয়ে বরের কললিস্ট চেক করে।
পরকীয়ার পোকার মৃত্যু কখনও বা হয় তবে সেই পোকা যে কোটর তৈরী করে ফেলে মস্তিষ্কের প্রতিটা কোটরে কোটরে সেই ক্ষতি অপূরণীয়।
সেই স্বামী বা স্ত্রীকে কেউ বা ক্ষমা করে,কেউ বা ক্ষমা না করে আবার প্রতিশোধ নিয়ে জ্বালা মেটায়। অনেকেই আবার নিজেকে জড়ান নতুন সম্পর্কে অথবা দাস হন নেশার।
কিন্তু বা মায়ের এই স্বেচ্ছাচারিতায় কে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় জানেন?
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্তানেরা। তাদের নিত্যনতুন খাবারও তখন মুখে রোচে না যখন তারা দেখে বাড়ির ছন্দপতন।
বাবা মায়ের মধ্যে সামান্য অশান্তির আগুনের ধোঁয়ার গন্ধ সবচেয়ে আগে তাদের নাকেই যায়।
হঠাৎই দুলতে শুরু করে তাদের পায়ের তলার মাটি আর মেঘলা হয় মনের আকাশ। তাকিয়ে থাকে চেনা মানুষগুলোর মুখের দিকে সবই যেন অচেনা মনে হয়।
কেউ বা এই সুযোগে হতাশায় নিজেও খুঁজে নেয় এক অন্য জগৎ। আচ্ছন্ন হয় নেশাতে অথবা খারাপ কাজে। আবার কারও ঠাঁই হয় বাবা মায়ের ভাঙা নৌকো ছেড়ে নতুন কেনা নৌকোতে। মেনে আর মানিয়ে টালমাটাল জীবন তরীর হাল বাইতে থাকে।
নিজেকে একটু ভালো রাখার জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করবেন না। সেই মানুষও কখনও বেশি জড়িয়ে যখন পড়বেন তখন আপনাকে ইগনোর করতে পারে।
তখন মনে হবে এতটা সময় কেন ফালতু খরচ করে নিজেকে সস্তা করলেন অন্যের কাছে?
আমাদের পাড়ার একটা বৌ জানি না পরপুরুষের সঙ্গ পাওয়া ওর নেশা না প্রয়োজন? এককালে দেখা হাসিখুশি মেয়েটাকে একসময় মেলাতে পারিনি। আমাদের সাথে কথা বলার মাঝেমাঝেই ফোনে চোখ আর অন্যমনস্ক ভাব।
আড়ালে সরে গিয়ে ফোনে কথা। একটা সময় ঘর ছাড়লো হঠাৎই একদিন। ছোটছেলেটা কেঁদে ভাসালো,মাকে দেখেছো গো তোমরা? সবাই বলে পালিয়ে গেছে আমার মা।
দুতিন মাস বাদে আবার ফিরলো হঠাৎই, সবাই বললো স্বামী কেন নিল? জানি না কেন.. হয়ত বা ছোট ছেলেটার মুখ চেয়ে। কেউ বা বললো বরটাই খারাপ বৌকে শায়েস্তা করতে পারে না। কেউ বা বললো বরটারই দোষ তাই তো বৌ পরকীয়া করে।
পরকীয়ার নেশা ছাড়তে পারেনি বৌটা। হাল ছেড়েছে লোকটা। বাচ্চাটা বাবার হাত ধরে স্কুলে যায়। মা রাতে ঘুরে আসে,মুখ দিয়ে ভুরভুর করে বেরোয় মদের গন্ধ। আগে লোকেরা ওকে নিয়ে সমালোচনা করত। এখন আর কেউ খোঁজ রাখে না কত নম্বর প্রেমিকের সাথে ঘুরছে।
দিনের চাকা ঘোরে নিজের খেয়ালে,ছেলেটা মার খায়। চিৎকার করে কাঁদে,মা চিৎকার করে তারস্বরে। বাচ্চাটা আজকাল গর্জায়। জানি না সেই গর্জন একদিন কোথায় গিয়ে পৌঁছোবে?
বাচ্চাটার চিৎকারে ভারী হয় বাতাস। এভাবেই পড়ে কত দীর্ঘশ্বাস। সঙ্গী চাই? চাইলে তাদের কাছে যান যাদের সংসার নেই। পরকীয়ার জালে আটকে নষ্ট করবেন না নিজের বা অন্যের সংসার।
সাময়িকভাবে পাওয়া যে কোন সুখ কখনও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই সংসার আর সমাজের অবক্ষয় বন্ধ করুন। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই কার বিয়ে ভাঙছে সেই ছোঁয়াচে খবর থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। নিজের ছোট ছোট আনন্দ আর অপরের খুশি সবটুকু নিয়েই ভালো থাকুন।
বিবাহিত হলে অনেক দায়িত্ব থাকে,সেগুলো এড়ানো মুশকিল। তাই দিল্লীকা লাড্ডু খাওয়ার আগে ভেবে খান। বারবারই লাড্ডু খাবো লাড্ডু খাবো বলে লাফালাফি করবেন না।
Comments
Post a Comment