Skip to main content

Athens trip

লালের প্রতি একটা দূর্বলতা বোধহয় আমার মত অনেকেরই আছে। শ‍্যামলা আর কালো রঙে লাল রঙ বড্ড বেশি মানায় বলে আমার ধারণা। লাল বেনারসী পরে তার আলোর ছটায় দশদিক আলো করেন স্বয়ং মা কালী। লাল রঙ আমাদের কাছে শুভ,লাল রঙ নারীকে করে লাবণ‍্যময়ী। আর তাই বোধহয় জীবন থেকে লাল কেড়ে নেওয়ার লোকেরও কোন অভাব নেই। যে কোন কারণেই আগেই লালকে সরিয়ে দেওয়া হয় জীবন থেকে তোমাকে অসুন্দর করার জন‍্য। আমরাও লোকে কু কথা বলবে এই ভেবে পছন্দের রঙখানা পরতে ইচ্ছে হলেও তা গায়ে চড়ানোর সাহস পাই না অনেক সময়ই। বছর দুয়েক আগে আমি কোন একটা বিয়েতে লাল বেনারসী পরে নাকি আত্মীয়মহলে সমালোচিত হয়েছিলাম। আমি অবশ‍্য সেটা উপভোগ করেছিলাম,কে জানে এখন এই বয়েসে এসে সমালোচনাটা খুব উপভোগ করি। নিজেকে বেশ সেলেব সেলেব মনে হয়। আনন্দ পাই এই ভেবে যে আমাকে নিয়েও মানুষ ভেবে কত্ত সময় নষ্ট করে। আমি যতটুকু রঙ বুঝি তাতে জানি শ‍্যামাদের রূপ খোলতাই হয় গাঢ় রঙে। বয়েসের সাথে সাথে নিশ্চয় পরিণত হতে হয়,বয়স্ক হতে হয়। তবে নিজেকে বেশি বয়স্ক ভাবতে শুরু করলে অকালে বুড়িয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকে না জীবনে। 
           এবার বেড়াতে গিয়েছিলাম একখানা লাল গাউন সাথে নিয়ে,কিন্তু সঠিক জায়গাতে তার ব‍্যবহার করতে পারলাম না। ওইয়া ঘুরে আসার পর ছেলে ওখানে ফটোশুটের একখানা ছবি পাঠালো যা দেখে মনটা একটু খারাপ খারাপ হল। আহা লাল গাউন খানা কাল পরলাম না কেন? তারপর মনে মনে  সকলি তোমার ইচ্ছে ইচ্ছাময়ী তারা তুমি গেয়ে ছেলেকে বললাম,আর কী করা যাবে? তোর বাবা আজ আর ওইয়া যেতে চাইছে না ঐ ছবিটা তোদের জন‍্য তোলা থাক।☺️😊 হয়ত এই ছোট ছোট শখ আর ইচ্ছেগুলো নিয়েই প্রতিনিয়ত বাঁচি বলেই বেঁচে আছি অনেক কিছুকেই ফুঃ বলে বুড়ির চুলের মত হাওয়াতে ভাসিয়ে।
      


গতবছর শীতে আমি বাবা মায়ের সাথে কাশ্মীরে বেড়াতে গেছিলাম। পাহাড় আর সমুদ্র আমার খুব ভালো লাগে তাই পাহাড়ে যাব জেনে আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম আনন্দে। বাবার কাছে শুনেছিলাম কাশ্মীরে আমরা যাব বরফ দেখতে, আমি টিভিতে বরফ দেখেছি। সত‍্যি সত‍্যি বরফ দেখব শুনে আনন্দে মনটা ভরে উঠলো। শ্রীনগরে নামার আগেই মা আমাকে টুপি,আরেকটা জ‍্যাকেট আর গ্লাভস পরিয়ে দিল। আমাদের গাড়ি এগিয়ে চললো পহেলগাঁওয়ের দিকে। কিন্তু কোথায় বরফ? আমি বাবাকে বারবারই বলতে লাগলাম বরফ কোথায়? বাবা বললো এই তো যাচ্ছি বরফের কাছে। তারপর মনে হল হঠাৎই চলে এসেছি কোন স্বপ্নের রাজ‍্যে,চারদিকে শুধু বরফ আর বরফ তারমধ্যে দাঁড়িয়ে আছে গাছগুলো। গাছগুলোতেও রূপোলী জালের মত জড়ানো বরফের চাদর। আমি আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলাম,মাকে বললাম ছবি তোলো। আমি সব্বাইকে দেখাবো এত্তো বরফ দেখেছি। আচ্ছা মা এই বরফগুলো খাওয়া যায়? আমার কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। আমাদের গাড়ি হোটেলের সামনে এসে দাঁড়ালো,চারদিকে শুধু বরফ। মনে হল বরফের সমুদ্রে এসে পড়েছি। আমি ছুটে গিয়ে বরফে হাত দিয়ে কিছুটা নিয়ে মুঠোতে ভরে ছুড়লাম তারপর ওগুলো ঝুরঝুর করে ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। আবার বরফ তুলে বাবার দিকে ছুড়লাম,মা বললো ঠান্ডা লেগে যাবে। সন্ধ‍্যেবেলায় দেখলাম হোটেলের সামনে কত আলো জ্বলছে ওরা স্নোম‍্যান বানিয়ে রেখেছে। সবাই আনন্দ করছে হঠাৎই ঝুর ঝুর করে সাদা গুড়ো আমার গায়ে পড়লো তারপর দেখি আমাদের সবার গাড়ে মাথায় পড়ছে ঐ গুড়োগুলো। সবাই খুব আনন্দ করছে আর বলছে বরফ পড়ছে কী মজা!
     আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করি কিভাবে বরফ পড়ছে আকাশ থেকে। বাইরে কিছুটা সময় থেকে আমরা ঘরে আসি,মা বললো ঠান্ডা লেগে যাবে। ঘরে কাঁচের জানলা দিয়ে দেখি হলুদ আলোতে ঝিরঝির করে ঝুড়ো বরফ পড়ছে। সকালে ঘুম ভাঙে মায়ের ডাকে,তাকিয়ে দেখি হোটেলের সামনেটা পুরো ঢাকা পড়েছে বরফে। দূরে আমাদের গাড়িটাও বরফে ঢাকা পড়ে সাদা হয়ে আছে। বরফ পড়া আমি আগে কখনও দেখিনি তবে এই বরফ পড়ার কথা আমি ভুলব না কোনদিনই।


এথেন্স থেকে দ্বিতীয় দিনে আমাদের গন্তব‍্য ছিল ডেলফি। গতকাল ফ্লাইট থেকে নেমে অনেকটা ঘোরাঘুরির পর রাতটুকু বিশ্রাম করেই আবার ভোরে উঠে ডেলফির জন‍্য তৈরী হওয়া। সকাল সাড়ে ছটায় একটা ক‍্যাব বুক করে যেখান থেকে বাস ছাড়বে সেখানে চলে এলাম। গ্ৰীসে মোটামুটি পরিস্কার আকাশ হতে সাড়ে সাতটা বেজে যেত। তাই তখন অন্ধকারই। আমরা একা দুজনে ট্রিপে গেছিলাম তাই সময়টা খুবই খেয়াল রাখতে হয়েছে যাতে কোন কিছু মিস্ করে না যাই। অবশ‍্য নিয়মানুবর্তিতা বরাবরই আমার একটু বেশি সুতরাং কোন অসুবিধা হয় না। 
     ডেলফির অবস্থান পৃথিবীর মানচিত্রে অনেকটা নাভিদেশের মত। বলা হয় পৃথিবীর মাঝখানে অবস্থিত ডেলফি। গ্ৰীসে ভূমি খুবই উর্বর,পাহাড় আর সমুদ্র থাকলেও চারদিকে ফলের গাছে প্রচুর‍। এই পথেও দেখলাম প্রচুর অলিভ গাছ। এই পথ এত সুন্দর যে মন ভরে যায় গাইডের কাছে ডেলফির ইতিহাস শুনতে শুনতে পথে একবার কফি ব্রেক নিয়ে মোটামুটি আড়াই ঘন্টার মধ‍্যে পৌঁছে গেলাম ডেলফি।
     ডেলফি মন জুড়োনো ছোট্ট জায়গা পাহাড়ের ওপর। সামনে পাহাড় আর লাল ছাদের বাড়ি আর মাথার ওপরে নীল আকাশ মনকে নিয়ে গেল এক অনাবিল পরিতৃপ্তিতে। ডেলফির মিউজিয়াম,অ্যাপোলোর মন্দির আর আরকিওলোজিকাল সাইট খুবই সুন্দর। অনেক ইতিহাস এর পেছনে। কতটা যে সমৃদ্ধ ছিল সেই সময়ে সভ‍্যতা তা জানলে আর দেখলে সত‍্যিই অবাক হতে হয়। তবে আমি মুগ্ধ ডেলফির সৌন্দর্য্য দেখে। ডেলফিতে কাটানো একটা দিন মনের মণিকোঠায় রয়ে যাবে অনেক দিন।

    ডেলফি দেখে হোটেলে ফেরার পরই প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম পরের দিন বেরোনোর কারণ পরের দিন আরও ভোরে বেরোনো। সেদিন আমাদের একটা সারাদিনের ক্রুজ ট্রিপ ছিল যেটা বেশ খরচ সাপেক্ষ সুতরাং কোনমতেই যাতে সেটা আমরা মিস্ না করি। পরের দিন বেশ ভোরে অ্যালার্ম দেওয়া হল,খুব তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আমরা হোটেল থেকে বেরিয়ে একটু হেঁটে আমাদের পিক আপ পয়েন্টে এসে দাঁড়ালাম। চারদিকে তখনও বেশ অন্ধকার। তবে রাস্তায় বেশ লোকজন তখনই। নির্দিষ্ট সময়েই বাস এল আমরা সেই বাসে উঠে পড়লাম,অন‍্যান‍্য কিছু হোটেল থেকে আরও কিছু ট‍্যুরিস্ট নিয়ে আমাদের পৌঁছে দিল Pireus এ। এটাই এখানকার পোর্ট অঞ্চল। এখান থেকেই সমস্ত ক্রুজ ছাড়ে।
       পোর্টে এসে মন ভরে গেল তখনই যখন দেখলাম আমাদের স্বাগত জানাতে একজন বেহালা বাজাচ্ছেন জাহাজের পাশে দাঁড়িয়ে।
    আমাদের সেদিনের গন্তব‍্য ছিল হাইড্রা,পারোস এবং অ্যাজিনা নামে তিনটে আইল‍্যান্ডে। গ্ৰীসের সমুদ্র ভ্রমণ এবার শুরু হল। ক্রুজের তিন তলা একদম জমজমাট মানুষজনে। গানবাজনা,খাওয়াদাওয়া সব আয়োজনই ছিল আর তার সাথে ছিল দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্রের নীল জলে চোখ ভাসিয়ে দেওয়া। হাইড্রা আসতেই নীলের বুকে বাড়িঘরের শোভা দেখে মন ভরে গেল। তিনটে দ্বীপই ভীষণ মনোমুগ্ধকর তাদের রঙে আর রূপে। আমরা অ্যাজিনাতে একটা ঐতিহাসিক ট‍্যুর করার জন‍্য ক্রুজ থেকে নেমে বাসে উঠলাম তখন প্রায় পড়ন্ত বেলা। ইতিহাসকে আবার চাক্ষুষ করে মন ভরে গেল। তবে ধ্বংসাবশেষ দেখে মন খারাপ হল। সমুদ্রর পাশে অবস্থিত দেবী অ্যাফিয়ার মন্দির ধ্বংসপ্রায়,তবু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে তার গৌরবটুকু নিয়ে। সভ‍্যতার উন্নত নিদর্শন আর পড়ন্ত বেলার সূর্যে সমুদ্রতটের সৌন্দর্য্য দেখে মাথা নীচু হয়ে যায় শ্রদ্ধায় প্রকৃতির আর আমাদের অতীত শিল্পীদের কাছে। ফেরার পথে হোলি ট্রিনিটি দেখে এলাম। ফেরার সময় মন ভরে গেল জাহাজে গ্ৰীসের নাচ দেখে। সব মিলে খুব সুন্দর একটা দিন কাটালাম।
      



Athens trip flight from kolkata 9.25 to abudhabi and then Athens. Athens reached at 6.25. hotel check in. Travel on Hoff an hof to Acropolis. Seen Acropolis, parliament,museum , national library, piregeus,zeus gate,rivera etc.
Day 2 tour toDelphi the ancient place of greece where the temple of Apollo situated.
Seen Archaeological museum, archaeological sight, Apollo temple and stadium, the village, heritage beautiful village with beautiful verandah and roof.they didn't plaster their wall to grow moss. Offerings were given to Apollo. The trip starts at 8.20. we went there by cab.

Day 3 three island tour. Hydra trip.
  Poros and agena in evermore cruise the trip starts at 8.20.pick up near our hotel. A for Athens that was opposite of monastariki. The agena trip was a historical one. From the cruise they arranged The trip by bus which costs 29 euro per person. They took us through The beautiful path to the temple of goddess athena which was also destructed by volcano eruption. The temple was built near about 5000 bc or more than that. Lagena was a beautiful island with its beautiful beach and the port. The temple reflects like a triangle of light life and energy. Apollo stands for light and light is the symbol of life.
They served the lunch in the cruise. There was live music and in the evening they entertained us with music and Greek dance that was quite amazing.

Day 4 we start early morning from hotel because the ship time was at 7.30. Through free del cab app we booked a cab which costs near about 13 euro. The ship sails from pireus port. The name of the cruise was sea jet our ferry was champion 2.
It was a large one. We put our luggage in the downstairs and went up. It was beautiful and well decorated with manY seats. There was also a cafe. We bought some patties and coffee from there and started for mykonos. It takes near about 2 and half hours to reach.

       We reached mykonos and took taxi from the booth for 30 euro and reached our hotel Petinos. Mykonos is a beautiful place,the beach is very near to the hotel. It's blue lonely and serene. We enjoyed the day very much there and took rest after some hectic trip in Athens. This time is quite lesiure time for us.

  Day 5 after the breakfast we started for Mykonos tow by bus.the bus stop was near the hotel so it is very easy for us to go there.
It takes 15 minutes to reach, fare only 2 euro per person. The beach and windmill is 5 minutes walk from the bus terminal.
   That place was beautiful with the alleys and houses and the boutique shop and restaurants. There was 5wind mills by the sea. And small beautiful churches. We enjoyed A lot.
       After spending hours returned from there.
  Our mykonos day was quite enjoyable because it was our first island visit in our trip to Greece. In the evening there was cracked and beautiful lights in the beach. The name of our hotel was Petinus a 4 star hotel and all the arrangement was satisfactory with complimentary breakfast. In petinus hotel we have to pay 7 euro extra for city tax. And at the time of returning they arranged the hotels transport for us in about 10 euro per head.
   Our ferry was at 10.45 they arranged the bus at 9.40. so after taking breakfast we started for port. 
  MYkons to Santorini was about 2 hrs trip by ferry. Our ferry was the same ie Sea Jet.
   We put the luggage and Took our seat to the upstairs. 
       The ferry journey is always beautiful. We reached Santorini about 12.45 and got a bus To fira from the port. The bus service of Santorini is very good. Freedel app is not working in any of the island of Greece. So we got up the bus. It costs only 2 euro per person.
        At fira main bus stop we take another bus to go to hotel. The area is unknown to me so I depend on GPS and get down nearby the hotel and walk a little bit from there got the hotel easilY. The name of our hotel was King Thighrus. The hotel was a two star hotel but the arrangement was good, the room and the other arrangements were ok. We took sometime to freshen up and went for oia. Took a bus from the main stop and wenT for oia. Enjoyed sometime there. Oia was a beautiful place with the beautiful white houses, churches And blue domes.
 We took icecream there. But it was very crowded. We returned from there and reached hotel in the evening. The next day we have A cruise trip from old port at 11. After taking breakfast we started from hotel. The breakfast was not buffet but it was satisfactory. There was juice,tea, coffee,breads,eggs, yoghurt and sausages.
     We took cable car from thira. The fare was 6 euro per person. In about 5 to 7 minutes we reached old port. We have to wait there for a long time because we came early. But the place was quite beautiful.
      We started our journey by boat at 11 for volcano. The volcano island is quite different. The colour of the rocks are beautiful. But we didn't go to the volcano.
     After spending some time there we went to the hot spring. This place was the best place for the swimmers. The foreigners were ready in their swim suits and jumped To swim. The colour of the water was orange.
   After spending some time there we returned to the old port and again took the ticket for cable car. We have time so we enjoyed some time at this and then took a bus from fira main bus stop to go to Firostefani. It is also famous for sunset and beautiful. We spend some time there and returned by the same bus and dropped near the hotel. We check out in the morning so waited for sometime in the reception and at 8 pm booked a cab for 30 euro and came to the new port. Our ferry was from there but it was at 12 night. We have to wait a long in the waiting room of the port. The ferry came late.
    Our cabin was booked there,it was very nice. There was accommodation for 2. We dip in a deep sleep. The ship took a long time to reach Rhodes. We reached Rhodes near about 11.45.
       So after a good sleep we took bath and breakfast all in the ship before getting down.
      From the port we took taxi for the hotel. Our hotel was 
     T

একটা সময়ে সংসার নিয়ে লড়াই করা আমাদের দুটো মানুষের এখন বেড়াই বেড়াই শখ হয়েছে। মানে খুন্তি কড়াই নাড়তে নাড়তেও সেই বেড়াই শখ আবার নিজেদের ঝগড়া লড়াই থামলেই আবার কথা উঠে চলো অনেক হল এবার একটু ঘুরি আর বেড়াই।
      অল্প কিছু পেয়ে বড় হতে শিখেছি বাবা মায়ের কাছে। এখনও নিজের জীবনে তা মেনে চলতে চেষ্টা করি। পছন্দ করি না কোন প্রতিযোগিতা করা অথবা কাউকে ছোট দেখাতে। অবশ‍্য এইজন‍্য নিজে অনেক ভাবে অপমানিত হই মানুষের কাছে। কখনও বা ঠকিও তবে ঐ যে সেটাকেও শিক্ষা বলে মানি জীবনে। না ঠকলে আর না ঠেকলে শিখবই বা কোথা থেকে। এই ধরুন আপনার কোন চাহিদা নেই বা গলার আওয়াজ তেমন জোরালো নয় বা আপনি একটুতেই খুশি হন বলে কেউ আপনার ন‍্যায‍্য পাওনা আপনাকে দিল না। প্রকাশক বই ছাপালো অথচ আপনার প্রাপ‍্য পেলেন না। কারণ আপনি তেমন করে চাইতে পারেন না। আপনার ভাগের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রী হল অথচ আপনি টাকা দাবী করলেন না। কারণ আপনাকে বোঝানো হল যে আপনার তো আর্থিক সঙ্গতি আছে,আপনার কিছু আত্মীয় যারা একটু পিছিয়ে পড়া তারা আপনার ভাগের টাকাটা পেলে একটু লাভবান হবে। কিন্তু পরে দেখলেন যে পিতৃস্থানীয় মানুষ টি আপনাকে এইসব বুঝিয়েছেন আর আপনি সরল বিশ্বাসে তা মেনে নিয়েছেন আপনার ভাগের টাকাটা তিনিই পকেটে পুরেছেন। তবুও সম্পর্কে ফাটল ধরবে এই ভয়ে তাকেও বলতে পারিনি এই টাকা তো ওরাও পেল না তবে আমার ভাগটা কোথায় গেল?
   আমি এমনি একজন মার খাওয়া মানুষ, দিনের শেষে মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকি। আত্মীয় স্বজনকে মাংস ভাত খাইয়ে,রান্নাঘরে ঘাম মুছে পায়ে ব‍্যথা করে তাদের সেবা করে আবার তাদেরই নিন্দার পাত্র হয়েছি।
      গ্ৰাম থেকে আসা কত ডিমকে ছানা ফুটিয়ে তাদেরই নানা প্রত‍্যাখ‍্যান আর লাথিও খেয়েছি। তবে একটা সময়ে সেগুলো পিঠে লাগলেও এখন আর সেভাবে কিছু স্পর্শ করে না। কারণ আমি পরিণত হয়েছি। বয়েসটা পঞ্চাশ পেরিয়েছে,তাই ভাবি আমি আমার কাজে ফাঁকি দেব না। নিজের কর্তব‍্য করব তারপর যা পাই পাবো। ফলের আশা করব না। পুজো আর্চা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে পারি না তবে ঠাকুর বা একটা অলৌকিক শক্তি কিছু আছে তাতে বিশ্বাস করি।
     একটা সময়ে অল্প আঘাতে ভেঙে পড়া সেই মেয়েটা এখন অনেক শক্ত হয়েছি। কারণ জানি বাবা মা নেই আমি নিজে রোজগার করি সুতরাং ঐ টুকুর ভরসাতে পা রাখব মাটিতে। ঈশ্বরকে বলি আমি বিশ্বাস করি তুমি রক্ষাকর্তা,সুতরাং আমাকে রক্ষা কোরো আর সুবুদ্ধি দাও।
             সেই বুদ্ধিতেই মনে হয় অনেক তো হল সংসারের ভাবনা। সেই ভাবনায় প্রচুর পরিশ্রম। এবার একটু নিজেদের মত করে বাঁচা। আর কোন স্থাবর সম্পত্তির পেছনে দৌড়বো না। আগে টাকা জমিয়েছি ছেলেমেয়েদের ভবিষ‍্যতের জন‍্য। যা পেয়েছি অনেকটাই দিয়েছি ইএমআইয়ে আর না। এবার যা পাবো তার বেশিরভাগ জমাবো বেড়াতে যাবার জন‍্য। টাকা কম পড়লে কিছু লোন করব,দরকারে ইএমআইয়ে শোধ করে দেব। তেমন টাকাও নিতে হয়েছে আমাদের আগের ট্রিপে। কারণ বিদিশে বেড়াতে গেলে ইউরোপের ভিসার জন‍্য অ্যাকাউন্টে টাকা থাকাটা জরুরী।
     টাকা জমানো অর্থ এই নয় যে না খেয়ে দেয়ে জমাই তবে ব‍্যাঙ্ক ব‍্যালেন্স বেশি করতে পারি না। কারণ উপার্জনের সবটাই এখন শখ মেটাতে খরচ হয়ে যায়। মনকে বলি তা যাক,জীবন তো একটাই যতদিন হাত পা চলছে ততদিন একটু ঘুরে নিই। আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবের অনেক বক্রোক্তি শুনি সামনে পেছনে যে ওদের অনেক টাকা। কোথা থেকে এত টাকা আসছে তার হিসেবও অনেকে করেন নিজের মত। তবে এই গল্পটা তো অনেকেই জানে না যে পঞ্চাশ পেরোনো মধ‍্যবয়স্ক রমণী আজ কখনও এথেন্স কখনও ভিয়েনা,কখনও সুইজারল্যান্ডের টিকিট কেটে ফেলছে সে একদিন সামান‍্য সত্তর পয়সা বাসভাড়া বাঁচাতে প্রতিদিনই অনেকটা পথ হেঁটে পার হত। আর অত‍্যধিক পরিশ্রমের ফলে আমার পা দুটো প্রায় খরচের খাতায় চলে গেছে। তবুও মনের সাহসে আর নিজেকে খুশী রাখতে যতটা সম্ভব সচল থাকতে চেষ্টা করে যাই।

       এবারও পুজোতে যাবার পরিকল্পনা হচ্ছিলো,আর ভাবছিলাম কোথায় যাই আর কোথায় যাবো। আমার কর্তার  গ্ৰীসে যাবার ইচ্ছে ছিল অনেকদিনের আর সাথে টার্কি। সুতরাং সেভাবে তিনি কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করলেন। এতদিন গ্ৰুপে ঘুরেছি কিন্তু গত গ্ৰীষ্মে ইস্ট ইউরোপ একা ঘুরে একটু সাহস এসেছে যে আমরা পারব। সুতরাং গ্ৰীসে একাই যাবো এটা ঠিক করলাম। অবশ‍্য ট‍্যুরের প্ল‍্যান আর আইটেনারির জন‍্য আমাদের বিশেষ পরিচিত একজন ট‍্যুর অপারেটারের সাহায‍্য নিলাম। তিনিই হোটেল বুকিং,বাসের টিকিট, ফ্লাইটের টিকিট,ক্রুজের টিকিট ইত‍্যাদি করে সব গুছিয়ে দিলেন।
      সুতরাং বেশ নিশ্চিন্তে যাওয়ার জন‍্য তৈরী হলেও একটু টেনশন থাকেই কারণ আমাদের দুজনেরই মোটামুটি একটা বয়েস হয়েছে। তারপর বিদেশ বিভুই সুতরাং সবসময় চোখনাক খুলে রাখা। তবুও সত‍্যি বলতে কেন যেন আমাদের গ্রুপ ট‍্যুর একদম ভালো লাগে না। কারণ আমরা ভারতের সব জায়গাতেই একা ঘুরেছি সব প্ল‍্যান বরই করত। তখন গুগল ছিল না বই ঘেঁটে পড়াশোনা করে এক গাদা কাগজ সাথে নিয়ে আমরা বেরোতাম। তারপর সামর্থ্য অনুযায়ী হোটেল,ধর্মশালা,হলিডে হোম,আশ্রম সব জায়গাতেই দিন কাটিয়ে ফিরে এসেছি নিজেদের মত। সেখানে আমাদের সাথে যারা গেছেন তারা আমাদের বন্ধু বা আত্মীয়।
      দুহাজার চোদ্দতে আমরা চারজন ইউরোপে যাই আর সেটাই আমাদের প্রথম বিদেশ টুর। যাত্রা ডট কম বলে একটা গ্ৰুপের সাথে গেছিলাম, অধিকাংশ মানুষ অবাঙালী তবে কয়েকজন বাঙালীও ছিলেন। সেবার তেমন একটা অসুবিধা না হলেও( কারণ তখন অনেকটা বয়েস কম ছিল,ছুটতে পেরেছি) পরে যখন দুহাজার উনিশের প্রথমে কাম্বোডিয়া আর শেষে মিশরছ যাই তখন এক গাদা লোকের হইচই,দলবাজি,পিএনপিসি,সময় নিয়ে অত‍্যন্ত বাড়াবাড়ি ইত‍্যাদিতে হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। আমরা গ্ৰুপ ট‍্যুরে নিরাপত্তা খুঁজলেও দেখেছি সময়ে না ফিরলে বাস লোকদের রেখে চলে যায়। কারও অসুস্থতায় তেমন কারও যায় আসে না। হয়ত সেটা স্বাভাবিক কারণ প্রত‍্যেকেই টাকা খরচ করে ঘুরতে এসেছে।
        এইসব দেখে ভালো লাগা থাকত না কোথায় যেন একটা। তবুও সাহস পাইনি একা ঘোরার। তবে গত গ্ৰীষ্মে আমরা ইস্ট ইউরোপ যাব বলে ঠিক করি সেখানে আমাদের ট‍্যুর অপারেটার বলেন তোমরা ইটালি দিয়ে এসো,কয়েকদিন ইটালি সুইজারল‍্যান্ড,লিচেনস্টাইন,ইনসব্রুক ইত‍্যাদি ঘুরে তারপর অস্ট্রিয়া,চেক,হাঙ্গেরী এইসব ঘুরে নাও একা।
    একা বিদেশে যাব ভেবে বুকটা ধড়ফড় করল প্রথমে। কারণ অনেকগুলো ট্রেনজার্নি আছে। একা ঘোরা আছে,ক‍্যাব বুক করে হোটেলে যাওয়া আছে।
     তবে সেই পরীক্ষাতে মোটামুটি স্টার পেয়ে পাস করে গেলাম আমরা। সেই গল্পও করব পরে। তবে ঐ ট্রিপটা করার পর মনে সাহস এসেছে একা ঘোরার। সেই গানটা আমরা করব জয়।
    আর দেখলাম তাতে অনেকটাই সুবিধা। এমনিতেই আমরা দুজনেই খুব সময় মেনে চলি বাইরে বেরিয়ে। সুতরাং দেরী হবার কোন সুযোগ নেই। সকালে স্নান করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়া আর রাতে ফেরা। ঘুরে বেড়ানো আর কিছু সাবধানতা ছাড়া কোন চাপ নেই,নিজের মত নিজে ঘোরো। শহরের ক্ষেত্রে বিগ বাসে ট‍্যুর করা খুবই ভালো। এই বাসগুলো শহরের মাঝখান দিয়ে যায়।
   অনেক দর্শনীয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আপনি দেখতে পাবেন আপনার ভ্রমণ পথেই সুন্দর বাসে বসে। মানে যাদের আমার মত পায়ের সমস‍্যা তাদের জন‍্য খুবই ভালো।
    ইচ্ছে হলে নেমে পড়ুন জায়গাটা দেখে আবার অন‍্য বাসে উঠে চলে যাবেন। আপনার টিকিট 24 বা 48 ঘন্টার জন‍্য বুক করা থাকে। সুতরাং পনেরো মিনিট বাদে বাদে আসা যে কোন বিগ বাসে চড়ে বসতে পারেন।
   সেক্ষেত্রে ট্র‍্যাভেল এজেন্সি যে বাস দেয় গ্ৰুপ ট‍্যুরে তা শহরের মধ‍্যে ঢুকতে দেয় না। সুতরাং কিছু দেখতে হলে আমাদের মত মানুষের অবস্থা কাহিল। অনেকটা পথ হেঁটে পৌঁছতে হয় সেখানে। এটা আপনার সোলো ট‍্যুরও নয় যে আপনি ক‍্যাব বুক করে যাবেন গন্তব‍্যে। সুতরাং অনেকটা পথ ভাঙতেই হয় গ্ৰুপের সবার সাথে পা মিলিয়ে। পিছিয়ে পড়লে কটুক্তির শিকারও হতে হয়।
      গতবারের মত এবার ভিসা পেতে অসুবিধা না হলেও আমাদের কপাল খারাপ যে টার্কি ভিসা পাওয়া গেল না। শুধু গ্ৰীসটাই হল সেনজেন ভিসাতে। কিছু করার নেই,ঈশ্বর বিশ্বাসী আমি এই ভেবেই মনকে বোঝালাম ভগবান যা চাইছেন তাই হবে।
     তবে গ্ৰীসে থাকার সময় টার্কিতে হামলার খবরে সত‍্যিই দুঃশ্চিন্তা হল। ঐ সময় আমাদের টার্কিতেই থাকার কথা ছিল। বাড়িতে ছেলেমেয়েরা খবর শুনে দুঃশ্চিন্তা করত। আমরাও বিপদে পড়তে পারতাম। তাই আবার একবার ঈশ্বরকে ধন‍্যবাদ দিলাম।
  আমাদের ফেরাটা ইস্তাম্বুল হয়েই আসার কথা ছিল,সেই টিকিটও আগেই শারজা হয়ে হয়ে গেছে তাই আশা রাখলাম নিরাপদেই দেশে ফিরতে পারব‍।
    ঘুরতে বেড়াতে অবশ‍্যই ভালো লাগে কিন্তু তার সাথে আরেকটা কথাও বলে রাখা ভালো যে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা নিজের দেশ আর নিজের বাড়ি। সেখানে আমরা সুরক্ষিত বলেই আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি।
    দুর্গাপূজা এবার মনকেমনে কেটে গেল। গত আগস্ট থেকে মন ভালো নেই,অনেকটা কান্না জমে মনে। প্রতিনিয়ত খবর দেখি যদি কোন খবর পাই বিচারের। এই করতে করতে আমি অবসাদে তলিয়ে গেছিলাম। অনেকেই হয়ত ভাববেন তাহলে ঘুরতে যাওয়া কেন? সত‍্যিই তাই মনে হয়েছিল কোথাও যাব না। কিন্তু গিয়ে মনে হয়েছিল একটু বোধহয় শ্বাস নিলাম বদ্ধ জায়গা থেকে বাইরে বেরিয়ে। হয়ত আমাকেও বাঁচতে হবে যতক্ষণ জীবন আছে এইসব মনকেমনকে বুকে বেঁধেও তাই আবার মুখ ফেরালাম জীবনের দিকে।
    সুটকেস গোছালাম,ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে মনখারাপ হয়। ওরা সাথে গেলে কতই না ভালো হত। তবুও ওদের ব‍্যস্ততার কথা ভেবে মনকে বুঝিয়ে আবার জীবনের দিকে ফেরাই...মনে মনে বলি ওদের অনেক সময় আছে হাতে। আমাদের সময় যে বড় কম কে জানে হাতে আর কত বছর আছে? তার মধ‍্যে যতটা পারি অজানাকে দেখে আর জেনে নিই।
     কলকাতা থেকে আমরা রওনা দিয়েছিলাম চোদ্দ তারিখে,ফ্লাইট ছিল সেদিন রাত্রি নটা পঁচিশে। সুতরাং সাড়ে ছটার মধ‍্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। দুজনের দুটো ট্রলি আর দুটো ব‍্যাক প‍্যাক।
  বেড়াতে গিয়ে এখন আমরা প্রত‍্যেকে নিজেদের আলাদা লাগেজ করি। এতে সুবিধা হয় একজনের ব‍্যাগে অন‍্যকে জিনিস খুঁজতে হয় না বা আপনাকে অপরজনের জিনিস বের করে দিতে হয় না।
     কিছু শুকনো খাবার আর বিস্কুট সাথে নিলাম। কারণ আমাদের দু তিন দিন ছাড়া বেশিরভাগ দিনই শুধু ব্রেকফাস্ট ছিল। প্রথম ইউরোপে যখন যাই তখন ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ,ডিনার সবই পেয়েছি। মিশর বা কাম্বোডিয়াতেও তাই। তবে গত ইউরোপ ভ্রমণে যখন গ্ৰুপে ছিলাম তখন ব্রেকফাস্ট আর ডিনার থাকলেও পরে যখন আমরা একা ইস্ট ইউরোপ গেলাম তখন শুধু ব্রেকফাস্ট ছিল।
     প্রথমে একটু ভ‍্যাবাচাকা খেয়েছিলাম শুধু ব্রেকফাস্ট খেয়ে বাকি সময় কী খাবো? পরে দেখলাম দিব‍্যি চলে যায় কারণ অনেক কিছু পাওয়া যায়। আর ফল খাওয়ার অভ‍্যেস যাদের আছে তাদের তো খুবই ভালো। আমার হাঁটার অসুবিধার জন‍্য আমরা হোটেলে ফিরে আসার আগে কিছু খেয়ে আর প‍্যাক করে আনতাম বেশিরভাগ। কোনদিন সাথে থাকা শুকনো খাবারেও ম‍্যানেজ করে নিতাম। পোহা বা উপমা বেশ চটজলদি গরম জলে ভিজিয়ে খাওয়া যায় আর পেটও ভরে যায়। ম‍্যাগিও বেশ ভালো খাবার।
         ইমিগ্রেশন বোর্ডিং পাশ ইত‍্যাদির ঝামেলা মেটাতে প্রায় দেড়ঘন্টা গেল। মালপত্র কলকাতাতে দিলাম নেব এথেন্সে সুতরাং মাঝখানে আর কোন হ‍্যাপা নেই। আমাদের ফ্লাইট ছিল এতিহার এই ফ্লাইটে এই প্রথম বিদেশ যাত্রা। আগে মোটামুটি এমিরেটস ধরেছি ইউরোপের ক্ষেত্রে। মিশরে ইজিপ্ট এয়ারোয়েজ,কাম্বোডিয়া থাই এয়ারলাইন্স আর কেনিয়া যাওয়ার সময় এয়ার ইন্ডিয়া।
    এরমধ‍্যে এমিরেটস আমার পছন্দের,যদিও দশবছর পরে যখন উঠলাম এই সামারে তখন দেখলাম পরিসেবা আর তেমন নয়।তবুও তুলনামূলক ভাবে ভালো। আর আমি মুভি দেখি সময় কাটাতে এটাও ভালো। এতিহারের খাওয়া দাওয়া মোটামুটি হলেওমুভি দেখার সুবিধা নেই। যাক আমাদের ভালো মত পৌঁছে যাওয়া নিয়ে কথা।
      কলকাতা এয়ারপোর্টে লাউঞ্জে ঢুকে দুজনেই কিছু খেয়ে নিলাম তারপর নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইটে উঠে অপেক্ষা করতে লাগলাম যাত্রা শুরুর। আমাদের ব্রেক ছিল আবুধাবিতে তারপর ওখান থেকে এক ঘন্টা কুড়ি মিনিট বাদে আবার ফ্লাইট এথেন্সে য্যাবার জন‍্য। অপেক্ষার অবসান হল,অনেক বাধা বিপত্তি কাটিয়ে আমরা উড়তে শুরু করলাম গ্ৰীসের উদ্দেশ্যে।

      কলকাতায় তখন প্রায় মাঝ রাত যদিও ওখানকার সময় পিছিয়ে তখন আমরা পৌঁছোলাম আবুধাবিতে। আবুধাবি এয়ারপোর্টে এই প্রথম পা রাখলাম আমি। নতুন কোন কিছু তেমন নয় যেমন ঝা চকচকে বিদেশী এয়ারপোর্ট হয় তেমনি। আমাদের হাতে সময় কম তাই আমরা ট্রান্সফারে যাওয়ার জন‍্য তাড়াহুড়ো করলাম। তবে ভাগ‍্য সুপ্রসন্ন ছিল তাই একটা ব‍্যাটারী চালিত গাড়ি পাওয়া গেল। ফাঁকা ছিল বলে আমরা দুজনেই সেখানে জায়গা পেয়ে গেলাম। ও হ‍্যাঁ বাইরে যাবার আগে আমি আমার দুটো ফোনেই ইন্টারন‍্যাশনাল রোমিং ভরিয়ে নিয়ে গেছি। এয়ারটেলের চার্জ একমাসে প্রায় তিন হাজার মত। ভোডাফোন পনেরো দিনে প্রায় দেড় হাজার। যাক তবুও দুজনের জায়গা না হলে আমি শুধু উঠতাম না কারণ বাইরে বেড়াতে গিয়ে সঙ্গীটিকে হাতছাড়া করার মত সাহসী আমি নই।
         ট্রান্সফারে পৌঁছে চালককে ধন‍্যবাদ জানিয়ে নেমে পড়লাম। যথারীতি সিকিউরিটি চেক করিয়ে আমরা আমাদের গেটে যাবার জন‍্য রেডি হয়ে গেলাম। হাতে খুবই অল্প সময় ছিল একটু অপেক্ষা করতেই বোর্ডিং শুরু হল। আমরা প্লেনে উঠে পড়লাম। এতিহারের ফ্লাইটই ছিল সুতরাং খাওয়া দাওয়া মোটামুটি একই রকম। আমাদের খিদে তেমন না থাকলেও মাঝরাতে দেওয়া ব্রেড,বাটার,চিকেন,রাইস,স‍্যালাড,মিষ্টি আর ড্রিংকস যতটা খেতে ইচ্ছে করল খেয়ে একটু ঘুমিয়ে নিলাম কম্বল চাপা দিয়ে চোখে। যদিও কোথাও যাবার সময় আমার ঘুম কম হয় তবে ফেরার সময় খুবই ঘুম হয়। এক্ষেত্রেও ঐ আবছা ঘুমে উপভোগ করলাম যাত্রা,দেখলাম আবুধাবিকেও। মনে হল দীপাবলির সাজানো মালায় সাজানো।
       আমাদের ভারতবর্ষে তখন প্রায় দশটা আমার ছেলেমেয়েদের সারাদিনের কাজ শুরু হয়ে গেছে তখন ওদের ফোন করলাম আমরা পৌঁছে গেছি এথেন্স। ওখানকার সময় সাড়ে তিনঘন্টা পেছনে। তখন ঘড়িতে ছটা পঁচিশ।
      ফ্লাইট ল‍্যান্ড করার পরই গেট খুলে দিতেই আমরা ছুটলাম নতুন দেশে পা রাখার জন‍্য। মনে তখন অনেক উৎকন্ঠা। বাইরে ঠান্ডা হাওয়া বইছে তবে কনকনে ঠান্ডা নেই।
         এখানে আমরা ইমিগ্রেশন করার জন‍্য লাইনে দাঁড়ালাম,কোন কথা ছাড়াই বেশ তাড়াতাড়ি ইমিগ্রেশন হয়ে গেল। আমরাও লাগেজ সংগ্ৰহ করে এয়ারপোর্টের এক্সিট দিয়ে বাইরে এলাম।
    স্বপ্নের শহর এথেন্স, স্বপ্নের দেশ গ্ৰীস। ক্লাস ফোরে ইতিহাস পড়ার সময় একটা নাম মনে গেঁথে গেছিলো তা হচ্ছে বীর আলেকজান্ডারের নাম। সেই থেকে গ্রীস ছিল এক স্বপ্নের দেশ আমার কাছে । গ্রীস মানেই আলেকজান্ডারের দেশ যিনি আমার কাছে ছিলেন এক সত্যিকারের বীর আর তিনিই পুরুকে বীরের সন্মান দিয়েছিলেন । তবে সেই দেশে কোন দিন আমার পায়ের চিহ্ন আঁকা হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি । কিন্তু ঐ যে কিছু পরিকল্পনা ঈশ্বর করে রাখেন আমাদের জন‍্য। তাই হয়ত সম্ভব হয়েছে আসা।
      ছেলে বলেছিল ইউরোপ ট্র‍্যভেল করতে গিয়ে যে বোল্ট অ্যাপ থেকে আমরা ক‍্যাব বুক করেছি তা এখানে চলে না। এখানে ফ্রী ডেল নামে একটা ক‍্যাব অ্যাপ আছে। আমি সেটাতেই হোটেলের ডেস্টিনেশন দিয়ে বুক করলাম। আমাদের হোটেলের নাম ছিল ডগপাউন্ড। আমার হাঁটার অসুবিধার জন‍্য আমাদের যে টুর অপারেটর প্ল‍্যানটা করে দিয়েছিল তারা মেট্রোর কাছাকাছি হোটেল দেখেছিলেন। যাতে আমরা মেট্রো করে এদিক ওদিক যেতে পারি। আমাদের সফর মধ‍্যবিত্তের সফর সুতরাং বাজেট ফ্রেন্ডলি ট্রিপ সবসময় কাম‍্য।
       ক‍্যাব বুক করার কিছু বাদেই ক‍্যাব এল ড্রাইভার একজন বয়স্ক মানুষ তবে অনেক লম্বা। তিনি আমাদের মালপত্র সব তুললেন। আমার কর্তা শুধু তার ব‍্যাকপ‍্যাকটি নিজের কাছে নিয়ে বসলেন। তার মধ‍্যে ক‍্যামেরা ছাড়াও আমাদের ফেরার টিকিট আর হোটেল বুকিংয়ের কাগজপত্র সব ছিল।
    এয়ারপোর্ট থেকে বেরোনোর কিছু বাদেই সকাল হল। ভোরের আলোতে বেশ লাগছিল নতুন শহরকে।
  বেশ অনেকটা সময় লাগলো আমাদের হোটেলে পৌঁছতে তবে সেখানে এসে হোঁচট খেলাম আমরা। লোকেশনে হোটেল এসে গেছে দেখালেও হোটেল পেতে বেগ পেতে হল। আমাদের হোটেলের নাম এত ছোট করে একপাশে লেখা যে বুঝতেই পারিনি ওটা হোটেল। যাক নেমে পড়লাম হোটেলের সামনে।
        হোটেলে আসতে প্রায় পঞ্চান্ন ইউরো দেখালো তবে ড্রাইভার পঞ্চাশ ইউরো নিলেন এবং সরু রাস্তায় বেশিক্ষণ গাড়ি রাখা মুশকিল তাই তাড়াতাড়ি মালপত্র নামিয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন।
     হোটেলে ঢোকার মুখেই একটা ছোট বার মত। এমধ হোটেল আমার অভিজ্ঞতায় দেখিনি। এখানে কোন রিসেপশন নেই। তবে একটি কমবয়সী ছেলে আমাদের আপ‍্যায়ন করল,আমরা বললাম আমাদের বুকিং আছে। ও পেপার চাইলো দেখতে। আর তখনই আমাদের মাথায় হাত পড়লো,দেখলাম যে ব‍্যাগে নিজের অনেক কিছু আছে বলে বর আগলে বসেছিল তা গাড়ির সীটেই রেখে তাড়াতাড়ি করে ভাড়া দিয়ে নেমে এসেছে। আমিও মাল নিতে ব‍্যস্ত ছিলাম বলে আমারও নজরে পড়েনি ওটা। দুজনে গাড়ির দুই গেট দিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। এখন কী হবে? সবই তো ওই ব‍্যাগে। 
    হোটেলের ছেলেটা আমাদের শান্ত করে ফোনে যেই অ্যাপে ক‍্যাব বুক করেছি সেখান থেকে ড্রাইভারকে কল করার চেষ্টা করল কিন্তু হল না। তখন ও নিজের ফোন থেকে ঐ অ্যাপে ফোন করে ওদের ভাষায় কিছু বলে আমাদের বললো ওকে ওরা দশ মিনিট বাদে ফোন করবে। আমাদের তো দশমিনিট তখন দশঘন্টা। নিজেদের বোকামির জন‍্য নিজেদের দুষছি। আমার পুরুষ সিংহ বর তখন একদম চুপ।
    এরমধ‍্যে হঠাৎই আমাদের হোটেলের সামনে সেই গাড়িটা এসে থামলো যাতে আমরা এসেছি আর সেই ড্রাইভার এসে আমাদের ব‍্যাগ ফেরত দিয়ে গেলেন। বিদেশে অনেকেরই মালপত্র লোপাট হয় এমন কথা অনেকবার শুনেছি। তবে ভদ্রলোকের সততার কারণেই আমরা আমাদের অতি প্রয়োজনীয় ব‍্যাগটা পেয়ে ভগবানকে অশেষ ধন‍্যবাদ জানালাম।
             এবার আমাদের হোটেল বুকিংয়ের কাগজটা ছেলেটাকে দেখাতে সে বললো আমাদের ঘর পেতে তিনটে বাজবে। ওদের সেটাই নিয়ম,আমরা এখানে টয়লেটে ফ্রেশ হয়ে জিনিসপত্র ওদের কাছে রেখে ঘুরে আসতে পারি। কারণ সেদিন আমাদের বিগ বাসে ট্রিপ ছিল। আমরা তখন তাই করলাম,মোবাইলে যতটা পারলাম চার্জ দিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে ব‍্যাগপত্র রেখে বেরিয়ে পড়লাম।
              বিগ বাসের স্টপেজ হোটেল থেকে কাছেই ছিল আমরা সেখানে চলে এলাম। আমার সাথের ভদ্রলোক খুব একটা ঠান্ডা মাথার মানুষ নন। তিনি তখন কতক্ষণে বিগবাসে উঠবেন সেই চিন্তায় মগ্ন। আমি বললাম হোটেলের রাস্তা দেখে নিয়েছো তো? হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ সব ঠিক আছে এখানেই তো হোটেল। এই বলে আমরা ছুট লাগিয়েছি বাসের দিকে। আমি অন‍্য ক্ষেত্রে যা করি একটা ফটো তুলে রাখি আসেপাশের এক্ষেত্রে কিছু করলাম না। নির্দিষ্ট জায়গাতে এসে অপেক্ষা করলাম বাসের জন‍্য। বাস পেয়ে আমরা টিকিট দেখিয়ে তাতে উঠে বসলাম। এতক্ষণে মনটা একটু হালকা লাগলো। চারদিক দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম সাথে ছবি তুলতে লাগলাম। এই বাসে হেডফোন থাকে আর থাকে বিভিন্ন ভাষায় শোনার সুযোগ তাই আমরা কানে দিয়ে বসে পড়লাম ইংরেজিতে সব শুনতে শুনতে এগিয়ে চললাম। এর আগে ইষ্ট ইউরোপের ট্রিপে দেখেছি হিন্দী অপশনও থাকে। এবার অবশ‍্য পাইনি সেটা।
    আমাদের সাথে যারা সবাই মোটামুটি বিদেশী এইসময় গ্ৰীসে বয়স্ক মানুষের ভীড় বেশি। সবাই নিজেদের মত সময় উপভোগ করছেন।
   বুঝতে পারলাম সবাই হয়ত এই বয়েসে এসে একটু খোলা হাওয়ায় বা সমুদ্রের ধারে সূর্যের তাতে ঝিমিয়ে পড়া শরীর মনকে তপ্ত করতে এসেছেন।
     এদের স্বামী স্ত্রীর ভাব ভালোবাসাও আমাকে ছুঁয়ে গেলো। অনেকেই সঙ্গীর হাত ধরে হাঁটছেন কেউ বা হুইল চেয়ারে করে সঙ্গীনী বা সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিজেদের মধ‍্যে কোন সম্পর্কে তিক্ততা নেই আর থাকলেও তার বহিঃপ্রকাশ জনসমক্ষে নেই। আমাদের সমাজে আমরা প্রায়ই লোকজন ভুলে একে অপরের সাথে দুর্ব্যবহার করি ঝগড়া করি। কে কী ভাবলো তার তোয়াক্কা করি না। এদের ক্ষেত্রে তেমন দেখলাম না। বয়স্ক চোখের দৃষ্টিতেও একের প্রতি অপরের স্নেহ ভালোবাসা উপচে পড়ছে। যা দেখে সত‍্যিই ভালো লাগলো।
     একে অপরের হাত ধরছেন,কাঁধে হাত রাখছেন। সামনে খাবার বা পানীয় নিয়ে সময়কে উপভোগ করছেন। হয়ত বা সেজন‍্য ওখানকার বয়স্ক মানুষ আমাদের চেয়ে কর্মক্ষম বেশি। অবশ‍্য খাদ‍্যাভ‍্যাস আর আবহাওয়ার জন‍্যও।
    যাক অন‍্য কথায় চলে যাচ্ছি,পথের মাঝেই আমাদের ভারতীয় কয়েকজন স্বামী,স্ত্রী আর বাচ্চা নিয়ে উঠলো। বুঝলাম তিন বন্ধু দলে ঘুরতে এসেছে। আমাদের মত একদম একা নয় তারা।
     বাস এগিয়ে চলেছে পার্লামেন্ট, ন‍্যাশনাল লাইব্রেরী,মিউজিয়াম, জিউস গেট দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চললাম সামনের দিকে। কিছু মানুষ নামছেন কেউ বা উঠছেন। আমাদের বাস এসে দাঁড়ালো অ্যাক্রোপলিসের সামনে।
    আমার কর্তা তখন নামতে না চাইলেও আমিই বললাম এখন রোদ কম চলো দেখে নিই। অনেকগুলো ধাপ এগিয়ে ঢোকার মুখে বাধা পেলাম টিকিট লাগবে। আমার কর্তা ছুটলেন টিকিট কাটতে।
     টিকিট কেটে এক সুন্দরী গাইড সমেত তিনি এলেন সাথে আরও কিছু বিদেশী লোকজন। ওর কাছে শুনলাম উনি আমাদের গাইড। এক্রোপলিস সংলগ্ন স্টেডিয়াম আমাকে মুগ্ধ করল। মনে হচ্ছে যেন ঝুলন্ত একটা বিরাট জায়গা পাহাড়ের কোলে। তবে গঠন অনেকটা কলোসিয়ামের মত। কিন্তু তা কালের থাবায় নষ্টের পথে। তবুও এখানে এখনও অনেক প্রোগ্রাম হয়। আমরা একটু ছবি তুলতে ব‍্যস্ত হলাম গাইডের কথা শোনার মাঝে কিন্তু একটু বাদেই ফিরে দেখি দলবল সমেত গাইড হাওয়া। আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাদের হদিশ আর পেলাম না। ওঠার পথে,উঠে কোথাও গাইডকে পেলাম না।
   পরে বুঝলাম আমরা ঠকেছি কারণ বরের কাছে শুনলাম এখন টিকিট কাউন্টার বন্ধ বলে মাঝপথেই সে আমার কর্তার কাছে দুজনের টিকিট যার দাম কুড়ি কুড়ি চল্লিশ ইউরো তার বদলে একশো ইউরো হাতিয়েছেন তার চার্জ প্রতি টিকিটে তিরিশ ইউরো বলে। আপনারা কখনও গেলে এমন ভুল করবেন না।
   টিকিট কাটতে সে একাই গেছিল আমি সাথে থাকলে হয়ত এমন হত না। তাকে বোঝানো হয়েছে টিকিট কাউন্টার দেরিতে খুলবে।
   আর এমনই গাইড যে চোখের পলকে দলের লোককে না নিয়েই হাওয়া হয়ে যায়। যাক গ্ৰীসে পৌঁছতে না পৌঁছতেই অনেক অভিজ্ঞতা হতে শুরু করল। ভ্রমণপিপাসু মধ‍্যবিত্তের গালে একটি চড়ও পড়ল। অবশেষে আমরা কর্তা গিন্নী নিজেদের জ্ঞানেই এক্রোপলিস দেখে কিছু সময় সেখানে কাটালাম আর ছবি তুললাম।
    গ্ৰীসের সভ‍্যতা অনেক পুরোনো এগুলো 4th 5th BC তে তৈরী। অনেক অত‍্যাচার সয়েও এখনও ভাঙাচোরা যেটুকু আছে তা দেখলে সত‍্যিই অবাক হতে হয়। এই পার্থেনন একটা সময় অপূর্ব কারুকার্য মন্ডিত ছিল যা এখন শুধু ক্ষতবিক্ষত হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে ইতিহাসকে উপলব্ধি করে নামলাম ওপর থেকে নীচে ঢাল বেয়ে।
    এখানেও মুগ্ধ হলাম এক বিদেশী স্বামীর স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব বা ভালোবাসা দেখে। ভদ্রমহিলা হুইল চেয়ারে,ঢালু রাস্তা দিয়ে ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে নামাতে পুরোটাই পেছন ফিরে নামলেন। কারণ না হলে হুইল চেয়ার গড়িয়ে যাবে। আরও দুজন তাদের সাথে ছিলেন। সবারই নজর ছিল যাতে উনারা নামতে পারেন নির্বিঘ্নে। মনে মনে ভাবলাম আসলে ইচ্ছেটাই আসল কথা,নিজেকে গুটিয়ে রাখলে হবে না। মনের জোরে অনেক কিছু পারা যায়।

       কিছু অপেক্ষার পর বিগ বাস এল আমরা আবার তাতে উঠে বসলাম। এবার এসে নামলাম জিউস গেটের কাছে। এটাও ভগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে কিছু সময় থেকে আবার বাসে উঠে চললাম পাইরিয়াসে, এই অঞ্চল এথেন্সের সমুদ্র অঞ্চল। এথেন্সের মাটিতে পা রেখে সমুদ্রের নীল জলের সাথে চোখ মেলানো এই প্রথম। মন খুশি হয়ে গেল আমাদের।
      আমরা বাসে বসেই মোটামুটি এথেন্সের মূল জায়গাগুলো দেখে ফেললাম। সেদিন আমাদের একটু বেশিই ঘোরাঘুরি হয়ে গেল,কারণ সেদিনই আমরা সকালে জার্নি করে নেমেছি। তবে ঐ যে আমরা যেহেতু বেড়াতে ভালোবাসি তাই এই পরিশ্রম তেমন কিছু কাত করতে পারল না আমাদের। কিন্তু ঐ যে ঘোরার ঠ‍্যালায় তেমন করে কিছু খাওয়া হল না। সাথে থাকা শুকনো খাবার খেলাম। আমার কর্তার ইচ্ছে একেবারে রিভারিয়ার দিকটা ঘুরেই তিনি হোটেলে ফিরবেন। তবে রিভারিয়ার বাস আসতে প্রায় দেড়ঘন্টা,যাক কী আর করব? অপেক্ষা করতে লাগলাম অ্যাক্রোপলিসের কাছে। আরও অনেকেই অপেক্ষা করছেন সেখানে। আমার তো তখন বেশ জল পিপাসা পেয়েছে অথচ আমাদের কাছে জল শেষ। কাছে মাত্র একটা ছোট দোকান,সেখানে গেলাম। সেখানে আবার প্লেন ওয়াটার নেই স্প্রিংকিলড ওয়াটার। সেটা খেতে বেশ ঝাঁঝালো যা আমরা খেতে মানে পান করতে অভ‍্যস্ত নই ঠিক। সুতরাং বাধ‍্য হয়ে তেষ্টা মেটাতে ফলের রস আর কোল্ডড্রিংকস খেতে হল। যাক তাতে একটু স্বস্তি লাগলো। ইউরোপের অন‍্য দেশে হয়ত এই সময়ে ঠান্ডা বেশি থাকে কিন্তু এথেন্সের আবহাওয়া বেশ মনোরম। 
     এখানকার বিগবাসের সিডিউল খুব একটা ভালো নয়। এদের সময়ের খুব একটা ঠিক নেই সুতরাং অনেক বাস এলেও রিভারিয়ার বাস পেতে প্রায় আমাদের দুই ঘন্টা অপেক্ষা করতে হল। সত‍্যিই বলতে ততক্ষণে মুডটা একটু খারাপ হল। তখন আর ভালো লাগছিল না। তবুও অপেক্ষা করতে শুরু করলাম এবং অবশেষে বাস এল। যাক বাসে উঠে তখন ভালো লাগলো,আমরা সিঁড়ি দিয়ে বাসের ওপরে উঠে বসলাম। বিগ বাসের ওপরে আমরা যেখানে বসলাম তার মাথায় কোন শেড নেই সুতরাং সবটাই খুব ভালো করে দেখা যায়।
   আমরা রিভারিয়ার কাছাকাছি চলে এলাম। সুন্দর আবহাওয়া তখন,সূর্য একটু বাদেই অস্ত যাবে। কিন্তু ঠান্ডা না থাকলেও বেশ হাওয়া বইছে। মনোরম লালচে আকাশ তখন,রিভারিয়ার রাস্তাটাও খুব সুন্দর। বেশ বড় বড় ক‍্যাফে আছে রিভারিয়ার পাশে। হয়ত এই পড়ন্ত বেলায় সেখানে বসে এক কাপ কফিতে চুমুক দিতে দিতে সূর্যাস্ত দেখতে পারলে আরও ভালো হত। কিন্তু ঐ যে আমাদের হাতে সময় কম আমরা সবই একটু চেখে দেখি আর চোখে দেখে মন ভরাই। ইচ্ছেমত সময় কাটাতে পারি না সব জায়গায়।
       বিগবাসে আমরা যেখান থেকে উঠেছিলাম সেখানে পৌঁছনো গেল না। সেই ড্রাইভার আমাদের অন‍্য একটা বাসে তুলে দিল বললো যে আমরা যেখান থেকে উঠেছি তার কাছাকাছি ঐ বাস আমাদের নামিয়ে দেবে।
          ঐ বাস আমাদের ওল্ড পার্লামেন্টের কাছে নামিয়ে দিল বললো একটু হাঁটলেই আমরা সেই স্কোয়ারে পৌঁছে যাব যেখান থেকে আমরা উঠেছি। ততক্ষণে আমার যে ফোনে ক‍্যাব অ্যাপ আছে সেটা সারাদিন ফটো তোলার চক্বরে সুইচড অফ। আরেকটা ফোনে খুবই সামান্য চার্জ আছে। চিন্তা ছেলেমেয়েদের জন‍্য ওরা ফোনে না পেলে চিন্তা করবে।
     হোটেলের নাম দিয়ে ক‍্যাব বুক করাটাই সহজ ছিল কিন্তু ঐ যে প্রথম ভুল ফোনের নেট অন করা ছিল তাতে তাড়াতাড়ি চার্জ গেছে। যাক আমরা ভাবলাম জায়গাটা তো আমরা চিনি সেখানে পৌঁছে গেলেই হোটেলে চলে যেতে পারব।

আমরা যেখান থেকে উঠেছিলাম সেখানে একটা স্কোয়ার আছে আর একটা চার্চ আছে। আমরা যখন লোকজনকে জিজ্ঞেস করেছি তারা আমাদের ওল্ড চার্চ বলাতে যা দেখিয়েছে সেখানে গিয়ে দেখি এটা তো সেই জায়গা নয়। চারদিকে আলো,বাজার হাট,ছোট্ট চার্চের সামনে গান হচ্ছে সবই ঠিক কিন্তু এই জায়গা সেই জায়গা নয়। আবার কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে কোন অন‍্য চার্চ কী আছে পুরোনো? তারা বললো ওল্ড মনাসতারিখি আছে একটা,আমি কর্তাকে বললাম চলো সেখানে যাই। তবে সেই রাস্তা খুঁজে পেতেও প্রচুর নাকাল হলাম। আবার জিজ্ঞেস করলাম হোটেলের নাম দেখিয়ে একজন বললেন আপনারা হোটেলের কাছেই আছেন চারটে লেন পেরিয়েই হোটেল। চারটে লেন পেরিয়ে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে যে লেনে ঢুকলাম সেখানে হোটেল না পেলেও সেই মনাসতারিখি খুঁজে পেলাম। তখন আমরা পুরো নাজেহাল। ফোনটা ঠিক থাকলে ক‍্যাব বুক করলে এত অসুবিধা হত না। ওখানে অনেক লেন যে লেনে হোটেল হতে পারে ভেবে ঢুকলাম সেখানে হোটেল পেলাম না। তখন সত‍্যিই ভালো লাগছে না। আবার জিজ্ঞেস করলাম হোটেলের ঠিকানা দেখিয়ে একজনকে,সে বললো পাশের রাস্তাতেই আছে। আবার ঢুকলাম পাশের রাস্তায়,এই রাস্তা দিয়ে কিছু আগেই গেছি কিন্তু অদ্ভুত ভাবে হোটেলের সামনের ঝাপ ফেলা আর অন্ধকারে ছোট করে লেখা হোটেলের নাম খেয়াল করিনি।
          এবার হোটেলের নাম চোখে পড়তেই ধরে প্রাণ এলো। দেখি হোটেলের সামনেটা পুরো গেট ফেলা। অথচ তখন নটা চল্লিশ। ভেতরে লাইট জ্বলছিল তাতে দেখলাম একজন মাথা নীচু করে বসে। আমি গেটে ধাক্কা দিতে সে এসে দরজা খুললো। দেখলাম সকালের ছেলেটা। সে আমাদের জন‍্য অপেক্ষা করছিল নাকি। কিন্তু এভাবে গেট বন্ধ করা হোটেল আমি কখনও দেখিনি আগে।
    চারদিকে যখন সরগরম তখন এদের গেট বন্ধ। ছেলেটা তাড়াতাড়ি আমাদের দুটো চাবি ধরিয়ে চলে গেল। বলে গেল একটা আমাদের ঘরের চাবি আর একটা সামনের গেটের চাবি।
     বুঝলাম আমাদের প্রয়োজন মত গেট খুলে আমাদের বেরোতে হবে।
     লিফ্টে করে মালপত্র নিয়ে ওপরে উঠে এলাম ক্লান্ত শরীরে। আজ বড় ধকল হয়েছে রাস্তা ভুল করে। এবার ফোন চার্জে বসালাম। আর কোনদিন এমন করব না,সেটাও শিক্ষা নিলাম।
   গ্ৰীসে কিছু লোক ইংরেজী না বুঝলেও কিছু লোক বেশ ভালো এবং তারা সাধ‍্যমত সাহায‍্য করে মানুষকে। হোটেলটার ঘর ঠিকঠাক ছিল,কিন্তু এমন সৃষ্টিছাড়া হোটেল আমি দেখিনি। কেন এই হোটেল বুক করেছে আমাদের টুর অপারেটর কে জানে?
    তবে হোটেলের পজিশনটা ভালো। এখানে চার্চ মনাস্ট্রী বলে খ‍্যাত। আর ছোট চার্চকে ওরা বলে মনাস্তারাখি। আমাদের হোটেলের কাছেই ছিল ওল্ড মনাস্তারাখি স্কোয়ার,যেটা আমরা তাড়াহুড়ো করে নামটাই ভালো করে মনে রাখিনি। আমরা স্টিগমাতা স্কোয়ার মনে রেখেছি,আর পুরো অঞ্চলটাই স্টিগমাতা স্কোয়ারের মধ‍্যে পড়ে। হোটেল থেকে বেরিয়েই বাস আর মেট্রো এবং খুব ভালো মার্কেট আর খাবার।জায়গা। তবুও হোটেলের ব‍্যবস্থা আমার ভালো লাগল না। 
       আর এথেন্সের এই হোটেলেই আমাদের এখন আর ফেরার সময় মিলে ছয় রাত্রি থাকার কথা। যাক সেদিন রাতে আমরা ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিলাম কিছু খাওয়া দাওয়া করে। এথেন্সের প্রথম দিনটা আমাদের একা একা বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভালো মন্দ মিশিয়ে কাটলো। তার সাথে শিক্ষা পেলাম যে আরও চোখ কান খোলা রাখতে হবে আমাকেও,সাধারণ মহিলাদের মত বরের ওপর সব দায়িত্ব দিয়ে রাখলে ঠোক্কর খেতে হবে মাঝেমধ্যে। বেড়াতে যখন এসেছি কিছু কথা আমাকেও মাথায় রাখতে হবে এবং সাবধানী হতে হবে।
      পরদিন সকালে আমাদের ডেলফি যাবার কথা ছিল। বাস ছাড়ার সময় ছিল আটটা আমাদের পৌনে আটটায় পৌঁছে রিপোর্ট করতে বলা ছিল। জায়গাটা আগেই দেখে নিয়েছিলাম,ক‍্যাবে ঠিকানা দিয়ে মোটামুটি কত ভাড়া লাগতে পারে। দেখলাম দশ ইউরো মত লাগবে। আমাদের টুর অপারেটরের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছিল হোটেলে সাড়ে ছটা থেকেই ব্রেকফাস্ট হয় সুতরাং আমরা সেভাবেই পরদিন সকাল সকাল উঠে নীচে নেমে দেখলাম তখনও বাইরে অন্ধকার এবং নীচে কেউই নেই।
     আগেরদিন রাতে ছেলেটা চাবি দিয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে গেল তাকেও জিজ্ঞেস করা হয়নি ব্রেকফাস্ট কখন? একটু অপেক্ষা করতে একজন মানুষ এলেন গেট খুলে তাকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম এদের ব্রেকফাস্ট তেমন কিছু নেই,চা কফি ওড্রিংকস সাথে পাউরুটি আর ডিম পাওয়া যেতে পারে কিন্তু সবই সাড়ে আটটার পর।
   আমরা তো অবাক,বুকিংয়ে লেখা আছে ব্রেকফাস্ট অথচ বলছে নেই। অবশেষে হোটেলের মালকিনকে ফোন করা হল। মানে সেই লোকটিই করল তাতে এক কথা শুনলাম এবং মালকিন বলল আমাদের ব্রেকফাস্টের টাকা রিফান্ড করে দেওয়া হবে। সত‍্যিই তখন বেশ রাগ হচ্ছিল এদের কান্ড দেখে,আসলে আমরাও বেড়াতে আসা নিয়ে ব‍্যস্ত ছিলাম। আর হোটেল ওরা ভালোই দেয় সুতরাং এগুলো নিয়ে মাথা অত ঘামাইনি।
     হোটেলের সেই কর্মচারী ভদ্রলোক বাংলাদেশী তিনি আমাদের কথার মধ‍্যেই দুটো প‍্যাকেট এনে আমাদের হাতে দিলেন। আমরা নেব না বললেও শুনলেন না,বললেন রাস্তায় খাবেন একটাতে মিষ্টি পাউরুটি আর একটাতে গ্ৰীসের মুড়ি। এখানেও যে মুড়ি পাওয়া যায় শুনে অবাক হলাম।
      যাক তাকে ধন‍্যবাদ জানিয়ে ক‍্যাব বুক করে বাস যেখান থেকে ছাড়বে সেখানে এলাম। তখন বাস ছাড়তে অনেকটাই দেরী,কাছে একটা দোকানে গিয়ে কিছু খাবার আর ফল কিনলাম। এখানে অন‍্য জিনিসের তুলনায় ফল সস্তা। যাক খাওয়ারের বন্দোবস্ত হয়ে গেল,তার সাথে আমাদের সাথেও কিছু ছিল।
    ডেলফির বাসে আমরা উঠে বসলাম। ডেলফির অবস্থান পৃথিবীর মানচিত্রে অনেকটা নাভিদেশের মত। বলা হয় পৃথিবীর মাঝখানে অবস্থিত ডেলফি। গ্ৰীসে ভূমি খুবই উর্বর,পাহাড় আর সমুদ্র থাকলেও চারদিকে ফলের গাছে প্রচুর‍। এই পথেও দেখলাম প্রচুর অলিভ গাছ। এই পথ এত সুন্দর যে মন ভরে যায় গাইডের কাছে ডেলফির ইতিহাস শুনতে শুনতে পথে একবার কফি ব্রেক নিলাম। সেখানে কফি আর স্পীনাচ প‍্যাটিস খেয়ে মোটামুটি আড়াই তিন ঘন্টার মধ‍্যে পৌঁছে গেলাম ডেলফি।
     ডেলফি মন জুড়োনো ছোট্ট জায়গা পাহাড়ের ওপর। সামনে পাহাড় আর লাল ছাদের বাড়ি আর মাথার ওপরে নীল আকাশ মনকে নিয়ে গেল এক অনাবিল পরিতৃপ্তিতে। ডেলফির মিউজিয়াম,অ্যাপোলোর মন্দির আর আরকিওলোজিকাল সাইট খুবই সুন্দর। অনেক ইতিহাস এর পেছনে। কতটা যে সমৃদ্ধ ছিল সেই সময়ে সভ‍্যতা তা জানলে আর দেখলে সত‍্যিই অবাক হতে হয়। তবে আমি মুগ্ধ ডেলফির সৌন্দর্য্য দেখে। ডেলফিতে কাটানো একটা দিন মনের মণিকোঠায় রয়ে যাবে অনেক দিন। ডেলফি দেখা শেষে ওখানকার একটা ক‍্যাফেতে আইসক্রীম খেতে খেতে ডেলফির সৌন্দর্য উপভোগ ক‍রলাম। সত‍্যিই পাহাড়ের ওপর সাজানো গোছানো একটা সুন্দর শহর। জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে ক্লক টাওয়ার। আমরা হাঁটতে হাঁটতে সেখানে এসে ওপরে উঠে সারা শহর দেখলাম।

      ডেলফি দেখে এথেন্স পৌঁছতে মোটামুটি আটটা মত বেজে গেল। গ্ৰীসের সময় আমাদের ভারতের চেয়ে সাড়ে তিনঘন্টা পেছনে। আজ আর কোন ভুল নয়,প্রথমদিন যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে। আসলে একা একা বিদেশে বেড়াতে এলে কিছু অভিজ্ঞতা তো হবেই তারমধ্যে অন‍্যতম হল রাস্তা ভুল করা। হয়ত ফোনে চার্জ থাকলে এতটা নাকাল হতে হত না। আজ অনেক ছবি তুললেও নেট বন্ধ রেখেছি আর ফোন দুটোকে ফুল চার্জ দিয়ে এনেছি। সুতরাং সব ঠিক আছে। হ‍্যাঁ বিদেশে বেড়াতে গেলে অবশ‍্যই ইউরোপে বা অন‍্য দেশে চলে এমন অ্যাডপ্টার কিনে নিয়ে যাবেন। এগুলো চাঁদনী চকেই পাওয়া যায় একশো টাকার মধ‍্যে। আমরা প্রথম ইউরোপ ট্রিপে জানতাম না মানে টুর অপারেটর বলেনি। সেই সময় কিছু টাকার বিনিময়ে হোটেল থেকে নিতাম আবার ফেরত দেবার সময় তারা সেই টাকা ফেরত দিত,মানে ঐ সিকিউরিটি মানি আরকি। মাসাইমারা যখন গেছি তখন আমার দেওর কেনিয়াতে থাকে ও একটা আমাদের দিয়ে দিলেও পরে আমাদের হোটেল থেকে সিকিউরিটি মানি দিয়ে নিতে হয়েছে। কারণ ওখানে জঙ্গলে রাতে কারেন্ট বন্ধ করে দেয়। আর আমাদের এতগুলো গ‍্যাজেট একটা পয়েন্টে চার্জ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই গত গরমে ইস্ট ইউরোপ যাবার সময় আমরা তিনটে কিনেছি অ্যাডপ্টার। তাতে সুন্দর কাজ চলে যায়।
     অন‍্য কথা বলে ফেললাম,ডেলফি থেকে ফেরার পথে এথেন্স এসে আমরা ক‍্যাব বুক করে নিলাম। এখানে ক‍্যাবের দাম যা দেখায় তার থেকে ট‍্যাক্স দিয়ে বেশি পে করতে হয়। যাওয়ার সময় নয় ইউরো লাগলেও ফেরার সময় এগারো লাগলো। তাতেই সই বাবা চলো হোটেলে যাই। পরদিন আমাদের একটা ক্রুজ ট্রিপ আছে।
     ক্রুজের ট্রিপটা একটু বেশিই এক্সপেন্সিভ ছিল তাই ওটা কোনমতেই মিস করা যাবে না। আমাদের হোটেল যেহেতু একটু সরু রাস্তায় সেখানে বাস আসবে না। মানে যে বাস আমাদের পিক আপ করবে পোর্টে নিয়ে যেতে।
    আমাদের সকাল ছটা চল্লিশের মধ‍্যে এ ফর এথেন্স হোটেলের সামনে দাঁড়াতে হবে। আর তখন ভোর মানে এখানে তখন অন্ধকার থাকে। তাই কর্তাকে বললাম চলো এ ফর এথেন্স হোটেল কোথায় দেখে আসি। গুগল দেখে সেখানে পৌঁছোলাম। জায়গাটা একদম মনাস্তারিখির কাছেই। সুতরাং আর কোন সমস‍্যা নেই।
      আমরা একদম পরদিন স্নান করে বেরোলাম। একদম সকাল ছটায় হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম কারণ ওরা ব্রেকফাস্ট দিচ্ছে না। তখনই অনেকে রাস্তায় কফিতে চুমুক দিচ্ছে। আমি মনাস্তারিখির সামনেই বসে ভোরের সৌন্দর্যে চোখ ডোবালাম।
    হঠাৎ একটা দৃশ‍্য দেখে ডাস্টবিনে হাত ঢোকালো একট ভিখিরি,সত‍্যি কথা বলতে তাকে আমি ভিখারি বলে ভাবিনি। দেখলাম লোকটা প‍্যাকেটগুলো হাতড়ে কী খুঁজছে,তারপর হঠাৎই একটা ক‍্যান হাতে নিয়ে ঝাঁকিয়ে তরলটা মুখে ঢেলে আবার ক‍্যানটা ফেলে দিয়ে চলে গেল। দেখলাম যে গরীব মানুষেরা আছে পৃথিবী জুড়ে হোক দেশ আর বিদেশ ধ্বংস হচ্ছে অর্থনীতি হয়ত অনেক কিছুই শেষ।
       একটু অপেক্ষার পর আমাদের বাস এল,তখনও আলো ফোটেনি আমরা বাসে উঠে বসলাম এই বাস আমাদের নিয়ে যাবে পাইরিয়াসে সেখান থেকে ছাড়বে আমাদের ক্রুজ।
   আমাদের বাসের সবাই এক এক করে নেমে সারিবদ্ধভাবে এগোলাম। সাথে আমাদের বাসের গাইড,আমাদের বাসের নং ছিল তিন। এমন অনেক বাস এখানে এসেছে তাই এই নং। যাতে আমাদের চিনতে ভুল না হয়। আলাপ হল লাইনেই এক ভদ্রমহিলার সাথে,আগে আমি তাকে অ্যাক্রোপলিস দেখতে গিয়েও দেখেছি। আমাকে দেখেই ক‍্যালকাটা বলে হেসে উঠলেন। উনি মালয়েশিয়া থেকে এসেছেন এটুকু শুনেছি। তবে কাদের সাথে এসেছেন তা জিজ্ঞেস করা হয়নি। অপরিচিত মানুষের ক্ষেত্রে যেটুকু তিনি বলছেন তাতেই আমি সন্তুষ্ট। অযথা কৌতূহল আমার পছন্দ নয়। এর মধ‍্যেই আরেকটা শ্রীলঙ্কার মেয়ে সেও একা এসেছে তার সাথেও আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমরা ক্রুজের দিকে এগিয়ে সত‍্যিই মুগ্ধ হলাম। তখন সূর্যের আভায় চারদিক আলোকিত তারমধ্যে নীল জলে সাদা ক্রুজ দাঁড়িয়ে আর পাশে দাঁড়িয়ে একজন খুব সুন্দর স‍্যাক্সোফোন বাজাচ্ছে।
    ক্রুজে উঠলেও এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখিনি। তাই মন ভরে গেল। আমরা ক্রুজে পা রাখা মাত্রই ক‍্যামেরাতে ছবি উঠে গেল কয়েকটা আমাদের গ্ৰীসের পোশাক পরা দুজন স্বাগত জানালো আর তারাই প্রত‍্যেকের সাথে ছবি তুললো। শুনলাম এই ছবি এখানেই পেয়ে যাবো।
      ভেতরে ঢুকে দেখলাম প্রচুর মানুষ ডেকে বসে। অনেকে আবার ভেতরের সোফাগুলো দল সমেত অধিকার করে বসে আছেন। আমাদের কোন দল নেই,আমরা একা দুই কর্তা গিন্নী সুতরাং দুটো চেয়ার পেয়ে আমরা সেখানে বসলাম।
    তখন একটু খিদে খিদে পাচ্ছে তাই আমার কর্তা কফি আর স‍্যান্ডউইচ কিনে আনলেন। দুপুরের লাঞ্চ আমাদের ইনক্লুডেড থাকলেও সকালে চা কফি অথবা স্ন‍্যাক্স সবই কিনতে হবে। অনেকেই পানীয় নিয়ে বসেছেন আর নীল জলে ভাসতে ভাসতে সেগুলো উপভোগ করছেন। জাহাজে ভিআইপি ক্লাসও আছে। সেখানে সবই ফ্রী ছিল। কিন্তু ভাড়া আরও প্রায় দশ হাজার বেশি। আমাদের ভাড়া ছিল পনেরো হাজার তো ওদের পঁচিশ। যাক আমরা ভালো করে ঘুরে উপর নীচ দেখে এলাম। একটা ছোট বুটিকও আছে ক্রুজে সেখানে অনেকেই কেনাকাটা করছেন।

আমাদের সেদিনের গন্তব‍্য ছিল হাইড্রা,পারোস এবং অ্যাজিনা নামে তিনটে আইল‍্যান্ডে। গ্ৰীসের সমুদ্র ভ্রমণ এবার শুরু হল। ক্রুজের তিন তলা একদম জমজমাট মানুষজনে। গানবাজনা,খাওয়াদাওয়া সব আয়োজনই ছিল আর তার সাথে ছিল দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্রের নীল জলে চোখ ভাসিয়ে দেওয়া। হাইড্রা আসতেই নীলের বুকে বাড়িঘরের শোভা দেখে মন ভরে গেল। এখানে কোন যানবাহন চলে না। ধাপে ধাপে বাড়িঘর। মানুষ এখানে জাহাজে,পায়ে হেঁটে আর গাধার পিঠে চেপে এদিক ওদিক ঘোরে। হাইড্রা ভীষণ সুন্দর দ্বীপ। প্রতিটা দ্বীপেই নামা যায় আর ঘোরার জন‍্য প্রায় এক দেড় ঘন্টা সময় দেয়। তিনটে দ্বীপই ভীষণ মনোমুগ্ধকর তাদের রঙে আর রূপে। আমরা অ্যাজিনাতে একটা ঐতিহাসিক ট‍্যুর করার জন‍্য ক্রুজ থেকে নেমে বাসে উঠলাম তখন প্রায় পড়ন্ত বেলা। ইতিহাসকে আবার চাক্ষুষ করে মন ভরে গেল। তবে ধ্বংসাবশেষ দেখে মন খারাপ হল। সমুদ্রর পাশে অবস্থিত দেবী অ্যাফিয়ার মন্দির ধ্বংসপ্রায়,তবু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে তার গৌরবটুকু নিয়ে। সভ‍্যতার উন্নত নিদর্শন আর পড়ন্ত বেলার সূর্যে সমুদ্রতটের সৌন্দর্য্য দেখে মাথা নীচু হয়ে যায় শ্রদ্ধায় প্রকৃতির আর আমাদের অতীত শিল্পীদের কাছে। ফেরার পথে হোলি ট্রিনিটি দেখে এলাম। ফেরার সময় মন ভরে গেল জাহাজে গ্ৰীসের নাচ দেখে। সব মিলে খুব সুন্দর একটা দিন কাটালাম।
      যে বাস আমাদের হোটেল থেকে এনেছিল সেই বাসেই ফেরত এলাম আবার হোটেলের কাছে। পরদিন আমাদের এথেন্স ছাড়ার পালা এবার শুরু হবে আমাদের গ্ৰীসের কয়েকটা দ্বীপে সময় কাটানো। তারপর আবার ফেরা এথেন্সে সেখানে তিন রাত্রি থেকে আমরা ফিরব আমাদের নিজের দেশে।
     সুতরাং ঘুমের দেশে গেলাম আবার সকালে উঠতে হবে এই চিন্তা মাথায় নিয়ে। কারণ আমাদের এবারের গন্তব‍্য মাইকোনোস আইল‍্যান্ডে যেটা যাবো আমরা ক্রুজে করে। কোন গেট থেকে ক্রুজ ছাড়বে সব দেখে নিলাম কারণ সকালে ক‍্যাব বুক করতে হবে।

        বেশ ভোরেই উঠে পড়লাম কারণ আমাদের ক্রুজ ছিল সাতটা চল্লিশে। সকালে উঠে প্রতিদিনই ফ্রেশ হয়ে স্নান করে বেরোতাম। এতে বেশ একটা কাজ সারা হয়ে যায়। তৈরি হয়ে একদম লাগেজ নিয়ে দুজনে হোটেলের বাইরে চলে এলাম। চেকআউট করলাম আর চাবিও রেখে দিলাম বক্সে। একটা ক‍্যাব বুক করে চলে এলাম পোর্টে। আমাদের ক্রুজ দাঁড়িয়েই ছিল। যদিও তখনও আলো ফোটেনি। আমরা আমাদের ট্রলি নিয়ে উঠে পড়লাম। এগুলোকে ফেরি বলা হয় এখানে। এগুলো করে অনেকগুলো গাড়িও যায় এক জায়গা থেকে অন‍্য জায়গাতে। আমরা নীচে লাগেজ রাখার জায়গাতে লাগেজ রেখে ওপরে উঠে এলাম তারপর সীট নম্বর অনুযায়ী সীটে বসে পড়লাম।
   নির্দিষ্ট সময়েই ছাড়লো ফেরি। আমাদের পৌঁছতে মোটামুটি সাড়ে তিনঘন্টা মত লাগবে। ফেরির কফি শপে লাইন পড়েছে মানুষের। আমরাও কিছু খাবো কারণ সকালে ব্রেকফাস্ট হয়নি। কিছুটা বাদে আমার কর্তা গিয়ে একটা জম্পেশ স্পীনাচ প‍্যাটিস আর কফি নিয়ে এলো। প‍্যাটিসটা খুবই স্বাস্থ‍্যবান আর পেট ভর্তি তার পালং শাকের পুর আর চীজ। সুতরাং একটাতেই দুজনের মোটামুটি হয়ে গেল। কফিতে চুমুক দিয়ে সকালে মুডটা বেশ ঝরঝরে হয়ে গেল।
    বাইরে তখন সোনালী রোদ। আমি টয়লেটে যাব বলে পা বাড়াতে দেখি বেশ দুলুনি আছে জাহাজে। বসে থাকায় বুঝতে পারিনি। যাই হোক দুলতে দুলতেই সেখানে সাইডের রড ধরে গেলাম। ব‍্যবস্থা সুন্দর আর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। কোন অসুবিধা নেই। বেরোতেই কর্তার সঙ্গে দেখা সে বললো চলো বাইরে গিয়ে দাঁড়াই। আমি তো দুলুনিতে অস্থির। দরজা খুলে বাইরে দাঁড়াতেই দেখি বেশ জোরে জাহাজ চলছে আর ঢেউয়ের ধাক্কায় জল ছিটকে আসছে জাহাজেও  তার সাথে আছে জোরালো হাওয়া। 
    একটু থেকে আমরা ভেতরে চলে এলাম। তারপর সীটে বসে পড়লাম। দেখতে দেখতেই সময় কেটে গেল আর আমাদের গন্তব‍্য মাইকোনোস এসে গেল। এর আগেও একবার জাহাজ থেমেছিল কিন্তু সেখানে বেশি লোকজন নামেনি। এখানেই অনেক লোকজন নামলো। এই জাহাজ চলে যাবে স‍্যান্টোরিনিতে।
    আমরা যখন মাইকোনোস থেকে স‍্যান্টোরিনিতে যাব তখন আমাদের এই জাহাজেই উঠতে হবে।
     নামার জন‍্য বেশ লম্বা লাইন। নীচে নেমে আমাদের লাগেজ নিয়ে আবার লাইনে দাঁড়ালাম নামার জন‍্য। অনেকগুলো গাড়ি ছিল এই ফেরিতে আগে সেগুলো নামলো তারপর আমরা নামব। তাই সকলে শান্তভাবে অপেক্ষা করছে।
   বিদেশে বেড়াতে গিয়ে কিছু জিনিস আমাকে মুগ্ধ করে। এরা খুব একটা কখনই ঠেলাঠেলি করে না বাসে বা ট্রেনে ওঠার জন‍্য। বরং শান্তভাবে অপেক্ষা করে একজন আরেকজনের ওঠার। কারও গায়ে সামান্যতম ছোঁয়া লাগলেও সরি বলে আর ধন‍্যবাদ জানায় সামান‍্য কারণেও। আর সেটা স্বামী,স্ত্রীকে অথবা ছেলেমেয়েরা বাবা মাকে আর বাবা মায়েরাও ছেলেমেয়েদের জানিয়ে থাকে।
    আমরা ভাবি ধন‍্যবাদ আবার জানানোর কি আছে ভাই? আমার প্রাপ‍্য এটা আমি পাচ্ছি তারজন‍্য কেন থ‍্যাঙ্ক ইউ বলতে যাবো?
    পাওয়া না পাওয়ার হিসেবে অত‍্যন্ত ব‍্যস্ত আমরা তাই কখনই সামান‍্যতম পাওয়াটাকেও ধন‍্যবাদ দিয়ে বড় করতে শিখিনি। পাওয়াকে আমরা দাবী বলে মানতে শিখেছি। আমাদের কাছে এটা ফর্মালিটি মনে হলেও ওদের এটা অভ‍্যেস।
    যেমন ধরুন আমরা একটা রাস্তা কাউকে জিজ্ঞেস করলাম এবং জেনে নিয়েই ছুট লাগালাম সেক্ষেত্রে আমি ধন্যবাদ দিতে ভুলে গেলে তারাই মনে করিয়ে দিয়েছে একটু হাসি মুখে থ‍্যাঙ্ক ইউ বলে। তখন লজ্জিত হয়ে আমিও বলেছি থ‍্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ।
        আসলে ঘরে বাইরে পাওয়াটা আমাদের অধিকার বলেই আমরা মানি সুতরাং ধন‍্যবাদের কোন জায়গা নেই। ওরা সেটাকে ধন‍্যবাদ বিনিময়ে আরেকটু ভালোবাসা মাখা করে নেয়। যাই হোক কিছু শিখি,কিছু দেখি আবার ভুলে যাই অনেক কিছুই।

     মাইকোনোসে নেমে এলাম আমরা ফেরি থেকে। নামার সময় ফেরির স্টাফরা সাহায‍্যের হাতও বাড়িয়ে দেয়। যাদের দৈহিক অসুবিধা আছে তাদের সবসময় ফেরিতে অথবা বাসে ট্রেনে এবং এরোপ্লেনে আগে তোলা হয়।
       আমরা নামার পর আমি দেখে নিলাম ক‍্যাব অ্যাপ ফ্রী ডেল এখানে সার্ভিস দেয় না। ওখানেই একজন বললো ট‍্যাক্সি পেতে চাইলে অপেক্ষা করো এখানে। আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম। পোর্ট বেশ ফাঁকা। সমুদ্রের নীল জল বয়ে চলেছে আপন খেয়ালে।
    আমাদের গাড়ি এলো,ড্রাইভারকে হোটেলের নাম বললাম সে বললো চেনে সুতরাং আর কোনও অসুবিধা নেই। ভাড়া জানতে চাইলে বললো তিরিশ ইউরো লাগবে। আমরা মালপত্র ডিকিতে রেখে বসে পড়লাম গাড়িতে। চারদিকে সব সাদা বাড়ি একটু উঁচু,উঁচু ধাপে ধাপে। রাস্তা কখনও উঁচু আবার কখনও নীচু। পাশে সমুদ্র বয়ে চলেছে। আর মাঝেমধ্যে দেখছি জলপাই গাছ।
    কিছু পথ পেরিয়ে গাড়ি এসে দাঁড়ালো আমাদের হোটেলের সামনে। হোটেলের নাম ছিল পেটিনোস হোটেল। এথেন্সের হোটেল আগেই বলেছি একদমই ঠিকঠাক ছিল না ব‍্যবস্থাপনায়। এখানে এসে যেমন হোটেলে আমরা থাকি তেমন চিত্র দেখলাম।
    আমাদের কাগজপত্র আর পাসপোর্ট দেখে আমাদের ঘরের নম্বর আর চাবি দিয়ে দিল ওরা। বললো এখানে লিফ্ট নেই বেল বয় আমাদের লাগেজ ওপরে তুলে দেবে।
    ইউরোপের হোটেলগুলোতে বেল বয়ের তেমন সুবিধা নেই। নিজেদের মালপত্র নিজেদেরই টানতে হয়। সুতরাং অবশ‍্যই বলব সাথে জিনিস কম রাখাটাই দরকার।
     আমরা একটু অপেক্ষা করতেই বেলবয় ছেলেটা এল আমাদের মালপত্র দিয়ে চলে গেল।
   হোটেলটা বেশ ভালো,সুন্দর গাছপালা লাগানো। সাদা রঙের হোটেলের মাঝে আসমানী রঙের পুল আর মাথার ওপরে নীল আকাশ। অনেকেই পুলের ধারে শুয়ে গা সেঁকছেন তখন।
       এথেন্সের হোটেলের অব‍্যবস্থায় সকালে আমাদের স্নানও ভালো করে হয়নি। ওখানে ছটার সময়ে কলে গরম জল পড়েনা সুতরাং খুবই অসুবিধা করে আমাদের বেরোতে হয়েছে। এখানে এসে তাই ভালো করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। হোটেল থেকেই বেরিয়েই সমুদ্র সুতরাং দুজনে চললাম সমুদ্রে চেঞ্জ করে।
    সমুদ্রের রঙ আর জল দেখে মন ভরে গেল। বীচের এই দিকটায় তখন তেমন কেউ নেই আমরাই দুজন। মাইকোনোসের বীচে লোকজনের আধিক‍্য তেমন নেই দেখে আরও ভালো লাগলো। কয়েকজন বিদেশী বীচের অন‍্য প্রান্তে আনন্দে স্নান করছেন।
     কেন জানি না এথেন্সের শহর জীবন যাপনের আর আমাদের হেকটিক ট্রিপের ক্লান্তি কাটিয়ে মাইকোনোস এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া দিল মনে আর শরীরে। তাছাড়া এখানকার হোটেলও খুব ভালো।
    অনেকটা সময় সী বীচে কেটে নিরলস বয়ে চলা গভীর নীল জলকে মুগ্ধতায় দেখে হোটেলে ফিরে এলাম। আবার বিকেলে গিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে এলাম সী বীচে। গ্ৰীসে এই সময়ে আবহাওয়া বেশ ভালো তবে সমুদ্রের ধারে সন্ধ‍্যে নামার মুখে বেশ ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে।
      সন্ধ‍্যে নামার আগেই আমরা ফিরে এলাম হোটেলে। এই জায়গাটা সত‍্যিই ভীষণ শান্ত মনকে বিশ্রাম দেবার উপযুক্ত জায়গা। আমরাও বিশ্রাম নিলাম। আমাদের বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল।
     পরদিন হোটেলের রেস্টুরেন্টে গেলাম ব্রেকফাস্ট করতে। এই ব্রেকফাস্ট এরিয়া একদম সমুদ্রের পাশেই প্রায়। সুন্দর ব্রেকফাস্ট করতে করতে সমুদ্রের সৌন্দর্যের স্বাদও নেওয়া যায়।
    ব্রেকফাস্টে মোটামুটি সবই ছিল সুতরাং পছন্দমত খাবার যা খুশি খাও। এখানে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিল টাটকা ফলের রস। প্রচুর কমলালেবু রাখা আছে। সেগুলো ঘুরে চলে যাচ্ছে মেশিনে তারপর প্রশেস হয়ে একদম রস হয়ে বেরোচ্ছে।
     সেদিনটা আমাদের মাইকোনোসে থাকা সুতরাং আমরা ব্রেকফাস্ট করে একদম রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আগে থেকেই খোঁজ নিয়ে রেখেছিলাম মাইকোনোস টাউনে যাবার বাস হোটেলের কাছেই আসে। সেই বাসে উঠে পড়লাম কর্তা গিন্নী,এই বাসের ভাড়া দুই ইউরো। বাসে ওঠার সময়ে টিকিট ড্রাইভার দিয়ে দিলেন আমরা সীটে এসে বসলাম। মিনিট পনেরোর মধ‍্যেই পৌঁছে গেলাম মাইকোনোস টাউনে।
     এই দিকটা জমজমাট,এখানের সৌন্দর্য্য খুব সুন্দর। পুরো শহর গড়ে উঠেছে সমুদ্রের পাশ দিয়ে।
  ঐ দিকটাকে লিটল ভেনিস বলে। এখানে সুন্দর কয়েকটা উইন্ডমিল পাশাপাশি আছে,যেগুলো জায়গাটার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
    বাস থেকে নেমে মিনিট পাঁচেকের মধ‍্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম উইন্ডমিলের কাছে।
     জায়গাটা খুবই সুন্দর, এখানে পর্যটকের বেশ ভীড়। বাড়িগুলো সবই প্রায় সাদা রঙের আর তাতে লাল,সবুজ দরজা জানলা। ছোট ছোট সিঁড়ি আর বারান্দা বাড়িগুলোর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
        আমরা উইন্ড মিলের কাছে এসে দাঁড়ালাম। ওখান থেকে শহরটা খুব ভালো লাগছে। বাড়িগুলো যেন সমুদ্র থেকেই ধাপে ধাপে উঠেছে। আমরা কিছুটা সময় উইন্ডমিলের সামনে থেকে তারপর এগোতে শুরু করলাম একটা ছোট্ট সাদা চার্চকে ডান দিকে রেখে সমুদ্রের পাশ দিয়ে। 
                এখানে অনেক মানুষজন বসে সমুদ্রের ধার দিয়ে। আমরা এগোতে লাগলাম,এখানে সমুদ্রের পাশে অনেক রেস্টোরেন্ট। পানীয় আর খাবার নিয়ে বসে লোকে ব‍্যস্ত খাওয়া দাওয়া আর আড্ডাতে।
         রেস্টোরেন্টের পাশ দিয়েই পথ চলে গেছে একটু ধাপে ধাপে উঠে বোগেনভেলিয়া গাছের পাশ দিয়ে আমরা চলে এলাম একটা ফাঁকা জায়গায়। এখানে একটা সুন্দর চার্চ আছে। আগে এই জায়গাটা পোর্ট হিসেবে ব‍্যবহার করা হত তার কিছু চিহ্ন অবশিষ্ট এখানে। 
     জায়গাটা কিন্তু খুবই সুন্দর যা দেখে মনটা একদম ভরে যায়। মাইকোনোস আমার কাছে গ্ৰীসের সুন্দর দ্বীপগুলোর মধ‍্যে অন‍্যতম। পাথর দিয়ে বাঁধানো খুবই সুন্দর পথ আর তার পাশে সুন্দর সুন্দর সব সজ্জিত দোকান পাট। পাশে সমুদ্র বয়ে চলেছে তার অনন্ত নীল জলরাশির সম্ভার নিয়ে। এই দ্বীপ যেন চোখের আরাম,মনের শান্তি।
      আমরা বেশ কয়েক ঘন্টা ওখানে কাটিয়ে চারপাশটা ঘুরে দেখে আর কিছুটা সময় সমুদ্রের ধারে বসে আবার বাস স্ট‍্যান্ড থেকে বাস ধরে ফিরে এলাম। নিজেরা একা গেলে কিছু ঝুঁকি হয়ত থাকে তবুও গ্ৰুপ ট‍্যুরে সময়ের কড়া শাসন আর কোথাও দেরি করলে তার সমালোচনা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। আমার যেহেতু বিদেশে দুই রকম ট‍্যুরেরই অভিজ্ঞতা আছে তাই বলছি এই কথা।
       সেদিনের সন্ধ‍্যে থেকে রাতটুকু বিশ্রামের জন‍্য রাখলাম। কারণ পরেরদিন আমাদের স‍্যান্টোরিনি যাবার কথা। পরেরদিন হোটেলের গাড়িতেই আমরা যাবো সেইমত ওরা আমাদের সময় বলে দিল। আমাদের ফেরি ছিল প্রায় এগারোটার কাছাকাছি। আমরা সাড়ে নটা নাগাদ বেরোবো এমন কথা হল। ক‍্যাবের থেকে এক্ষেত্রে একটু ভাড়া কম। ক‍্যাব ছিল তিরিশ ইউরো করে আর এখানে কুড়ি।
    ট্রিপে নিজেরা এলে গড়ে প্রতিদিনের খরচ পঞ্চাশ থেকে ষাট ইউরো ধরে রাখা উচিত। কোনদিন বেশিও লাগতে পারে আবার কোনদিন কম। এই খরচ অবশ‍্যই হোটেল ভাড়া এবং কোন বড়সড় সাইট সিয়িং বাদে।
      সন্ধ‍্যেবেলা রুমে বসে কফিতে চুমুক দিতে দিতে বাইরে আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে দেখলাম বীচের দিক থেকে আকাশে ছাড়া হচ্ছে রং বেরংয়ের বাজি যেগুলো আলোর মালা হয়ে আলোকিত করছে আকাশ। কিছুক্ষণ সেই দৃশ‍্য দেখে আবার ঘরে এলাম। রাতের বিশ্রামের পর আবার শুরু হবে যাত্রা স‍্যান্টোরিনি দ্বীপের উদ্দেশ্যে যা ট‍্যুরিস্টদের কাছে অন‍্যতম আকর্ষণের জায়গা। তবে মাইকোনোস আমার মন ভরিয়ে দিয়েছে।
      
    ***********  
পরেরদিন সকালে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট খেয়ে আমাদের যাত্রা শুরু করার পালা স‍্যান্টোরিনি দ্বীপের উদ্দেশ্যে। আগের রাতেই জিনিসপত্র মোটামুটি প‍্যাক করা ছিল। দুজনের জিনিস আলাদা রাখার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা আছে। যার যার মত সব জিনিস নিয়ে নাও সুবিধামত। আমি বাইরে বেরোলে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে পছন্দ করি না। কারণ তাতে আমারই কাজ বাড়ে। যা দরকার লাগছে না তা গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করি।
     ব্রেকফাস্ট খেয়ে ঘরে আসার আগেই ওদের জানিয়ে দিলাম আমরা চেকআউট করব। ওরাও বললো বাস চলে আসবে সময় মত। এখানে অনেক হোটেলেই সিটি ট‍্যাক্স দিতে হয় যেটা হোটেল অনুযায়ী কম বেশি হয় তবে ফোর স্টার হোটেলের ক্ষেত্রে তিন ইউরোর নীচে নয়। এখানে দুদিনের জন‍্য আমাদের সাত ইউরো দিতে হয়েছে।
        আমাদের বাস আসতেই আমরা উঠে পড়লাম। আরও কিছু যাত্রী আছে। আমাদের গন্তব‍্য সেই পোর্টৈ যেখান থেকে আমরা ব্লু লাইনস এ যাবো। মানে যে ফেরি করে এখানে এসেছি সেটাই।
            কিছুটা অপেক্ষা করতে হল। তারমধ‍্যে কর্তা জেনে এল কত নং গেটে আসবে ফেরি। শুনলাম তিন নংয়ে আসবে। পোর্টে অনেক ভীড় তখন সবার গন্তব‍্য স‍্যান্টোরিনি।
            ফেরি আসতেই ওদের নিয়ম অনুযায়ী কিছু গাড়ি আর মানুষ নামার পর আমরা ওঠার সুযোগ পেলাম। তবে আগে উঠলেন যারা হুইল চেয়ারে আছেন।
          আমরা লাগেজ নীচে রেখে এসে ওপরে নিজেদের সীটে বসে পড়লাম। প্রথম দিনের মত আজ আর অত উত্তেজনা নেই। তাছাড়া পেট ভর্তি সুতরাং আড়াই ঘন্টা জার্নির কিছুটা পথ একটা মিনি স্লিপ দিলাম দুজনেই। তারপরে গিয়ে একটু বাইরে দেখেও এলাম।
            আজ মনে হল বড় তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম। নামার সময় বেশ লাইন। কারণ এখানেই সবার গন্তব‍্য। আমরাও লাইনে দাঁড়িয়ে মালপত্র নিয়ে কিছুটা অপেক্ষা করার পর নেমে গেলাম। আমার ট্রলিটা নামাতে ফেরির স্টাফেরা নিজেরাই এগিয়ে এসে সাহায্য করলেন। পৌঁছে গেলাম স‍্যান্টোরিনি। এখানকার পোর্টটা বেশ জমজমাট। কিন্তু যথারীতি ফ্রী ডেল ক‍্যাব অ্যাপ এখানেও নেই। সুতরাং ট‍্যাক্সি ধরব বলে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি সবাই বাসে উঠছে। আমিও ড্রাইভারকে আমাদের গন্তব‍্য বলতেই তিনি উঠে পড়তে বললেন মালপত্র বাসের পেটে ঢুকিয়ে।
       বাসে উঠে আমি একটু উসখুস করলাম যে এখানে তো কোন কন্ডাক্টর নেই,টিকিট কে নেবে? ড্রাইভারমশাইও তো টিকিট নিলেন না।
    যাক তখনকার মত সেই চিন্তা ঝেড়ে ফেলে মন দিলাম প্রকৃতিকে উপভোগ করতে। পোর্ট থেকে ঘোরানো রাস্তা বেয়ে গাড়ি তখন ওপরের দিকে উঠছে। পাহাড়ের পাশ দিয়ে নীচে বয়ে চলেছে সমুদ্র। দেখতে দেখতে আমরা অনেকটা উঁচুতে উঠে এলাম। সমুদ্র মাঝেমধ্যে উধাও হচ্ছে আবার কখনও নীলাম্বরী শাড়িতে দেখা দিচ্ছে মনমোহিনী রূপে।
        বেশ কিছুটা পরে আমরা একটা বাসস্ট‍্যান্ডে এসে পৌঁছোলাম। এখানে আমাদের ভাড়া নিল একজন,দুই ইউরো করে ভাড়া। আমরা বাস থেকে নেমে পড়লাম। গুগল ম‍্যাপে হোটেল এখান থেকে 2.2 কিমি দেখাচ্ছে। আমার কর্তা হোটেলের নাম দেখিয়ে কাউন্টারে জিজ্ঞেস করতেই ওরা বললো আমাদের আরও একটা বাসে উঠতে হবে হোটেলে পৌঁছতে।
     এখানে বেশিরভাগ মানুষজনই গ্ৰীসের ভাষাতেই কথা বলে সুতরাং মুখে বলার চেয়ে এদের কাগজ দেখানোই বেশি ভালো। কারণ আমাদের উচ্চারণ আলাদা।
     আমরা আরেকটা বাসে উঠে বসলাম মালপত্র বাসের পেটে রেখে। আমি গুগল ম‍্যাপে হোটেলের নাম দিয়ে লোকেশন সেট করে রাখলাম। বাস চলতে শুরু করল চারদিকে সাদা সাদা বাড়ি আর তার মাঝেই নীল গম্বুজের মত মাথাওয়ালা চার্চ।
         বেশ কিছুটা আসার পর আমি দেখলাম এখানে প্রায় দুশো মিটারের মধ‍্যে আমাদের হোটেল দেখাচ্ছে। সুতরাং বাসের ড্রাইভারকে অনুরোধ করলাম বাস থামাতে। বাস থেমে গেল,আমরা ম‍্যাপ দেখে ট্রলি হাতে চলতে শুরু করলাম। পথ একটু খাড়াই,একটু দ্বিধা নিয়ে তবুও এগোতে লাগলাম। দ্বিধা একটাই যে ঠিক পথে যাচ্ছি তো? কারণ এখনকার প্রজন্মের মত আমরা ততটা পটু নই এইসব ম‍্যাপ দেখতে। তাছাড়া ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে পড়লেও ভূগোলের জ্ঞান আমার তেমন ভালো নয়। এ ব‍্যাপারে বেশ দক্ষ আমার পুত্র। আমার স্বামীও গুগলে ততটা পারদর্শী নয়। তবে বুঝলাম বাইরে গেলে এই ম‍্যাপের জ্ঞানটা থাকা খুবই জরুরী। যাক গুগল আমাদের আশাহত করেনি,একটু বাদেই যেখানে খাড়াই পথ শেষ সেখানে দেখলাম আমাদের হোটেলের নামটা দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে।
    ছেলে আগে থেকে বলেছিল এই হোটেল খুব একটা ভালো নয় মানে এবং অবস্থানে। আমাদের টুর অপারেটর যিনি টুরের প্ল‍্যানটা আর বুকিংয়ের সব ব‍্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি বলেছিলেন স‍্যান্টোরিনিতে হোটেলের দাম বেশি। সুতরাং আমরা উনার ওপরে আর কথা বলিনি কারণ আমাদের ট‍্যুরে শখ আর সাধ‍্য দুটোই ছিল। মধ‍্যবিত্তের শখপূরণ যাকে বলে। হোটেলটা বাড়ির মত দেখতে,আমরা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলাম দরজা বাইরে থেকে বন্ধ ছিল। আমরা নক করতেই একটা মেয়ে অভ‍্যর্থনা করে ভেতরে নিয়ে গেল। দেখলাম এটা ওদের রিপেপশন,ছোট্ট অথচ বেশ সাজানো গোছানো। সুন্দর পুরোনো ধাচের ডেকোরেশন,কিছু বইপত্র আর অ্যান্টিক জিনিসও আছে সেখানে।
     একজন বয়স্ক ভদ্রলোক এলেন,উনিও আমাদের আপ‍্যায়ন করলেন। আমরা আমাদের ঘরের চাবি আর সামনের গেটের চাবি পেলাম। ভদ্রলোক জানালেন যে আমরা যদি মাঝরাতে হোটেলে আসি সেক্ষেত্রে আমাদের ফ্রন্ট ডোর নিজেদের খুলেই আসতে হবে। তবুও ভালো যে এরা এথেন্সের হোটেলের মত সাতটার সময় মেন গেট বন্ধ করে দেয় না। আরেকটা ডাউট ক্লিয়ার করে নিলাম যে এখানে আদৌ ব্রেকফাস্ট আছে কিনা? কারণ এথেন্সের অভিজ্ঞতা আমাদের খুবই খারাপ। এই হোটেলটা টু স্টার হোটেল,তবে ঘর আর ঘরের সজ্জা আমার বেশ ভালো লাগলো। সুন্দর পরিপাটি করে বিছানাপত্র পাতা,বাথরুমও সুন্দর তবে ছোটখাটো। সুন্দর একটা ছোট ব‍্যালকনিও আছে।
    ওরা বললো ব্রেকফাস্ট আছে সাড়ে ছটা থেকে শুরু হয় আর নীচে যেখানে রিসেপশন আছে সেখানেই ব্রেকফাস্ট এরিয়া। 
     আমরা ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম,কারণ আমাদের পায়ে সরষে আর হাতেও একটা দিন তাই সময় নষ্ট করা চলবে না।
       হোটেলের মেয়েটার কাছে জেনে নিলাম পথঘাটের হদিশ। ও বললো নীচে নামার একটা শর্টকার্ট আছে। সেখান দিয়ে গেলে আমরা সহজেই বাসস্ট‍্যান্ডে পৌঁছতে পারবো। কিন্তু মেয়েদের কথা না মানতে অভ‍্যস্ত আমার পুরুষ সিংহ আমাদের কথাকে পাত্তা না দিয়েই বললো,ঐ পথে সে নামবে না।
    আমাকে নিয়ে সে বাসে করেই পৌঁছবে মেন বাসস্ট‍্যান্ডে। আমাদের গন্তব‍্য তখন ওইয়া। ওইয়া স‍্যান্টোরিনির অন‍্যতম সুন্দর জায়গা। আমরা আবার সেই জায়গাতে এসে দাঁড়ালাম যেখানে আমাদের বাস নামিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু অনেকটা সময় অপেক্ষার পরেও কোন বাস পেলাম না। বুঝলাম এই পথে বাস কম আসে। অগত‍্যা আমরা জিজ্ঞেস করে এগোতে শুরু করলাম বাসস্ট‍্যান্ডের দিকে। এই বাসস্ট‍্যান্ডের নাম ফিরা মেইন বাসস্টপ। যেখান থেকে মোটামুটি সব জায়গাতে যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। 
      বেশ অনেকটা পথ হাঁটার পর আমরা ফিরা মেইন বাসস্টপে এসে দেখলাম যেখানে আমরা প্রথম নেমেছিলাম এই সেই বাসস্টপ। তখন আমরা বাসে করে ঘুর পথে হোটেলের কাছে এসেছিলাম। এখন আমাদের লাগেজ নেই সুতরাং একটু কষ্ট হলেও পৌঁছে গেলাম সেখানে।
            ওখান থেকে আমরা ওইয়ার বাসে উঠে বসলাম। ফিরা থেকে ওইয়া প্রায় ষোলো কিলোমিটার। তবে ভাড়া কিন্তু ঐ দুই ইউরো।
          এখানে অনেক টুরিস্ট,জায়গাটা খুব সুন্দর। নীচে সমুদ্র,ওপরে ধাপে ধাপে সাজানো দোকানপাট আর বাড়িঘর। আমরা ধাপে ধাপে উঠতে লাগলাম ওপরের দিকে। গ্ৰীসে তিলের ব‍্যবহার বেশ দেখলাম, দোকানের পাশ দিয়ে যাবার সময় গ্ৰীক সুন্দরীরা ছোটছোট তিলের নাড়ু দিতে লাগলো টেস্ট করার জন‍্য। আমরা এগিয়ে চললাম ওপরের দিকে। কিছুটা ওপরে ওঠার পরই একটা ফাঁকা জায়গা দেখতে পেলাম। যেখানে ওইয়ার সেই বিখ‍্যাত চার্চটা দেখতে পেলাম। এই চার্চের নাম প‍্যানাজিয়া প্ল‍্যাটস‍্যানি এটা অর্থডক্স চার্চ। আর গ্ৰীসে এই ধরনের অর্থডক্স চার্চের সংখ‍্যাই বেশি।
    এই চার্চগুলোর ভেতরে খুব একটা বাইরের সাধারণ মানুষকে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয় না। তবে নীল টুম্ব ওয়ালা এই সাদা রঙের চার্চের সৌন্দর্য কিন্তু সমুদ্রের নীল জলের মতই অপরূপ। গ্ৰীসের এই দ্বীপগুলোর সৌন্দর্য শুধু নীল জলেই নয় তার সাথে এই চার্চ আর বাড়িঘরেও।
     ওইয়াতে প্রচুর পর্যটকের ভীড়,অনেকেই সাদা বাড়িগুলোর ছাদে বসে পানীয়তে চুমুক দিতে দিতে প্রকৃতিকে উপভোগ করছেন।
        আমরা কিছুটা সময় ওপরে দাঁড়িয়ে নীচের জলের রঙ আর সাদা বাড়িঘরের মেলবন্ধন দুচোখ ভরে দেখলাম।
     সব তো ক‍্যামেরাতে ভরে আনা যায় না। এই স্মৃতিগুলো থেকে যায় মস্তিষ্ক আর হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে যত্নে। যা কলকাতার ব‍্যস্ততম মুহূর্তে অথবা কোন একটা ক্লান্তি ভরা দিনে আবার নতুন করে পথ চলার উদ‍্যম এনে দেয়।
       আমরা আরেকটু এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে,একটা ছোট্ট ক‍্যাফেতে বসে কিছুক্ষণ আইসক্রিমের স্বাদ উপভোগ করলাম দুজনে। তারপর আবার এগোলাম সামনের দিকে।
        কিছুটা এগিয়ে ফিরে এলাম চার্চের কাছে তারপর আবার গেলাম উল্টোদিকে মানুষের ভীড় ঠেলে। এখানেও একটা ছোট্ট সুন্দর চার্চ আছে। দুপাশে সাদা বাড়ি তার মাঝেই বোগেনভেলিয়া গাছ আর ক্রকারির দোকান। গ্ৰীসের চিনামাটির বাসনপত্র আর তাতে আঁকা চিত্র খুবই সুন্দর। তবে আমাদের কিছু কেনা হয়নি। কারণ এতটা পথ ওগুলো ঠিকঠাক আনতে পারব কিনা এই চিন্তায়।   
      সাদা বাড়ি আর গম্বুজ নীল ছাদ চার্চগুলো তখন সূর্যাস্তের রক্তিম আভায় সিক্ত। আমরাও একটা জায়গাতে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখলাম ওইয়ার সূর্যাস্ত। এখানে সূর্যের শেষ বেলার রঙের ছটা প্রতিফলিত হয় চার্চের ছাদে আর তার শেষবেলার রশ্মি আদুরে রঙে রাঙায় সাদা বাড়িগুলোতে। সমুদ্র অবশ‍্য সেই রঙ মাখতে খুব একটা রাজী থাকে না। তবুও একটা মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সারা স‍্যান্টোরিনি আর ওইয়া জুড়ে।
    এইসময় অনেকেই নীচে অবস্থিত হোটেলের ছাদে দাঁড়িয়ে ফটোশুট করেন। তবে ভীড়ের জন‍্য আমরা আর সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামিনি। ওখানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করলাম সূর্যের রঙের বাক্স খুলে রঙ ছড়িয়ে দেওয়ার দৃশ‍্য।
       আমাদের ফিরতে হবে ফিরাতে তাই নীচে নেমে আবার বাসের লাইনে এসে দাঁড়ালাম। ওইয়াতে বাস সার্ভিস খুবই ভালো। একটু দাঁড়াতেই বাস পেয়ে গেলাম। ভাড়া ঐ একই,তবে ওখানে যারা টিকিট কাটেন তাদের কয়েন রাখার ব‍্যাগটা আমার অসাধারণ লেগেছে। একদম থরে থরে কয়েন সাজানো,ওখান থেকেই দরকারে চেঞ্জ দিচ্ছেন। আবার ফিরে এলাম ফিরা মেইন বাসস্টপে। সেখানে এসে একটু টুকটাক কিছু খেয়ে আবার অপেক্ষা করলাম কিছুটা সময় যদি হোটেলের কাছাকাছি যাবার কোন বাস পাওয়া যায়।
     কিন্তু পরে শুনলাম ওদিকে কোন বাস যাবে না। সুতরাং অগত‍্যাই আবার সেই হন্টন ভরসা। তাই আবার হেঁটে হেঁটেই ফেরা হোটেলে। 
      তখন বেশ শীতল বাতাস বইছে,ফেরার সময় কেবল কার পয়েন্টে যাবার রাস্তাটাও চিনে এলাম। কারণ পরদিন আমাদের ওল্ড পোর্ট থেকে কেবল কারে করে নীচে নামতে হবে।
    ওল্ড পোর্ট থেকে আমাদের একটা বোট ট্রিপ ছিল। ওখানে পায়ে হেঁটেও সিঁড়ি বেয়ে নামা যায়। সাড়ে তিনশো সিঁড়ি ভাঙতে হবে। তবে আমাদের বলাই ছিল কেবল কারে নামতে। 
      সুতরাং হোটেলে এসে পরেরদিনের জন‍্য প্রস্তুত হয়ে রাতের খাবার খেয়ে বিছানাকে সঙ্গী করার পালা।

       পরেরদিন একটু আলসেমিতে সাতটায় উঠলাম ঘুম থেকে। কারণ এই বিশ্রামটাই সারা দিন অ্যাক্টিভ রাখবে। একবারে ফ্রেশ হয়ে নীচে চলে এলাম ব্রেকফাস্ট করতে। দেখলাম জায়গা ছোট হলেও অনেকেই আলাদা টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছেন। আমরাও একটা টেবিলে বসলাম,অল্প আয়োজনের মধ‍্যে সবই ছিল মোটামুটি। ওরা একদম গরম গরম পাউরুটি টোস্ট করে এনে দিল আমরা সসেজ,ডিম ইত‍্যাদি নিলাম সাথে ফলের রস আর চা কফি,সিরিয়ালস,দই সবই ছিল।
          ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম। বাইরে বেড়াতে গেলে আমাদের মোটামুটি একাই দিনলিপি থাকে সকালে বেরিয়ে সারাদিন ঘোরাঘুরি করে রাতে ফেরা। আমরা সেদিন স‍্যান্টোরিনি ছাড়ব তবে আমাদের ফেরি রাত বারোটাতে। আমরা হোটেল চেকআউট করে মালপত্র রিসেপশনে রাখলাম,এখানে সিটি চার্জ দিতে হল দুই ইউরো। ভদ্রলোক বললেন আমরা সন্ধ‍্যেবেলা ফিরলে তিনি আমাদের ক‍্যাব বুক করে দেবেন পোর্টে ফেরার জন‍্য।
           আজ হোটেল থেকে বেরিয়ে সেই ঢালু পথটা বেয়ে সহজেই পৌঁছে গেলাম কেবল কার পয়েন্টে। এখান থেকে নীচে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। আমরা কেবল কারের টিকিট কাটলাম,দাম ছয় ইউরো করে। সকাল সকাল ভীড় কম তাই একটা কেবল কারে আমরাই দুজন ছিলাম। একটাতে ছয়জনকে নেয় ওরা।
                   আমরা খুব অল্প সময়েই নেমে এলাম নীচের পোর্টে। তখনও আমাদের বোট ছাড়তে অনেক দেরী। তাই আমরা ফটো তুলতে ব‍্যস্ত হলাম। সমুদ্রের নীল জলে তখন কত জাহাজের আনাগোনা। খুব সুন্দর জায়গাটা। ওপরের দিকে তাকালে ফিলা দেখা যাচ্ছে যেখান থেকে আমরা কেবল কারে উঠেছি।
       বেশ কিছু সময় অপেক্ষার পর আমাদের বোটে ওঠার সময় এল। এই বোট আমাদের দুটো পয়েন্টে নিয়ে যাবে। একটা ভলক‍্যানো আইল‍্যান্ড আর আরেকটা হট স্প্রিংয়ে। 
    সমুদ্রের নীল জল কেটে বোট এগিয়ে চললো,এই বোটগুলো খুব সুন্দর দেখতে। ওপরে আর নীচে বসার জায়গা আছে তবে কোন টয়লেট না থাকলেও চেঞ্জ রুম আছে। একটা ছোট ক‍ফি আর ড্রিংকস কাউন্টারও আছে।
     বেশ কিছুটা চলার পর দূর থেকে চোখে পড়লো কালো কাদার পাহাড় মত। কাছে আসতেই বুঝলাম এগুলো আসলে ভলক‍্যানোর লাভা। সেগুলো জমেই এমন হয়েছে। আমাদের ভলক‍্যানো আইল‍্যান্ডে নামালো ওরা। দূর থেকে যেগুলো কাদা বলে মনে হচ্ছিলো সেগুলো দেখলাম খুবই শক্ত এবং বেশ ধারালো খরখরে শিলা। কিছুটা সময় ওখানে কাটিয়ে আমরা আবার বোটে এলাম বোট এবার এলো হট স্প্রিংয়ের কাছে। এখানকার জলের রঙ খুবই সুন্দর।
   প্রকৃতির রূপ দেখে অবাক হলাম। জলের রঙ পুরো কমলা এখানে। বোটের অনেকেই ঝাঁপ দিলেন জলে গরম জলে স্নানের স্বাদ নিতে। আমরা বোট থেকেই উপভোগ করলাম অরেঞ্জ ওয়াটারের সৌন্দর্য।
    বেশ কিছুটা সময় ওখানে কাটিয়ে আবার ওল্ডপোর্টে ফিরে এলাম। এবার ফেরার পালা,সুতরাং একই পথ ধরতে হল। কিন্তু এখন কেবল কারে ওঠার লাইন বেশ লম্বা। আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম লাইনে তারপর প্রায় মিনিট কুড়ি বাদে ভেতরে ঢোকার সুযোগ পেলাম। ভাড়া একই মানে ছয় ইউরো করে। এবার একটা কেবল কারে ছয়জন উঠতে হল আমাদের। যাক একটু বাদেই উঠে পড়লাম ওপরে যন্ত্রের সাহায‍্যে কোন যন্ত্রণা ছাড়াই।
        একটু ফিলাতে বসে তারপর আমরা আবার এগোলাম বাস স্ট‍্যান্ডের দিকে। ফিরাস্তেফেনি বলে কাছাকাছি একটা জায়গাতে যাবো,এখান থেকেও সূর্যাস্ত খুব ভালো লাগে। এটা একটা গ্ৰাম তবে এর সৌন্দর্যের জন‍্য এর নাম ফিরা+ স্টেফানি যার অর্থ গ্ৰীক ভাষায় মুকুট। ফিরার সবচেয়ে উঁচু জায়গা এটা। ফিরা থেকে এই জায়গাটা বেশ কাছেই,এখানেও বেশ কয়েকটা নীল গম্বুজ দেওয়া অর্থডক্স চার্চ চোখে পড়লো। আর সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামলে পুরোটাতেই সাদা সাদা বাড়ি আর তার নীচে নীল জল। তবে এখানে ভীড় কম ওইয়ার তুলনায়। আমরা সিঁড়ি দিয়ে কিছুটা নামলেও আর বেশি নামলাম না কারণ উঠতে হবে আবার।
    অনেকেই বললেন এখানে সূর্যাস্ত সুন্দর তবে আমরা আর অপেক্ষা করলাম না সেখানে। এদিক ওদিক কিছুটা ঘুরে আবার ফিরে এলাম বাসস্ট‍্যান্ডে। বাস পেতে কিছুটা দেরি হল। তার মাঝেই আলাপ হল একজন বাংলাদেশী মানুষের সাথে যিনি ওখানে হোটেলে কাজ করেন।
     আমার আরেকবার ওইয়াতে যাবার ইচ্ছে থাকলেও কর্তা আর রাজী হলেন না ওইয়া যেতে। যেহেতু আমাদের রাতে ফেরি আছে সুতরাং তার ইচ্ছে হোটেলে ফেরার এবং জলদি পোর্টে চলে গিয়ে সেখানে অপেক্ষা করা। কারণ বেশি রাত্রি হলে যদি গাড়ি পেতে সমস‍্যা হয়। কর্তার ইচ্ছেতেই কর্ম সুতরাং ফিরে এলাম হোটেলে। ওখানে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে আটটার সময় একটা ক‍্যাব তিরিশ ইউরো দিয়ে বুক করে চলে এলাম আধঘণ্টার মধ‍্যেই পোর্টে। বাইরে তখন বেশ হাওয়া,কারণ পাশেই সমুদ্র। আমরা আশা করে এসেছিলাম এখানে এসে একটু গরম কফি আর প‍্যাটিস খাবো। কারণ গতকাল সকালে দেখে এসেছিলাম অনেক দোকান তবে দেখলাম তখন আর কোন দোকান খোলা নেই। যাক একটা বেশ বড় ওয়েটিং হল ছিল,পরিস্কার বাথরুমও ছিল সুতরাং বাইরের ঠান্ডা হাওয়া থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে সেখানে অপেক্ষা করতে লাগলাম। পরে দেখলাম পাশে আরেকটা ওয়েটিং হল আছে সেখানে আরও অনেক মানুষ অপেক্ষা করছেন। এবার আমাদের গন্তব‍্য রোডস্,সারারাত ফেরিতে কাটবে আমাদের। পরদিন প্রায় দুপুর বারোটা বাজবে রোডস পৌঁছাতে।

*************
রোডসের ফেরি বারোটাতেও এল না এলো প্রায় রাত একটার কাছাকাছি। আমাদের মত অনেক মানুষ অপেক্ষায় আছেন ওখানে। যাক অবশেষে ফেরি আসাতে নিশ্চিন্ত হলাম। কিছু গাড়ি আর হুইল চেয়ারের মানুষজনকে তুলে দিয়ে আমাদের ওঠার জন‍্য ইশারা করল ওরা। এটা সী জেটের ফেরি নয় এটা অলিম্পিক ফেরি। যাক আমরা আবার নীচে জিনিসপত্র রেখে ওপরে উঠে পড়লাম। অবশ্য আগেই খেয়াল করা উচিত ছিল আমরা রাতে ফেরিতে থাকবো। সুতরাং রাতে পরার মত কিছু জামাকাপড় হাতের কাছে রাখা উচিত ছিল।
     এই ফেরির ভেতরটা খুব সুন্দর, আর অনেক বড়। যাদের কেবিন নেই তারা সোফা বা গদি আটা চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে কেউ শুয়ে ঘুমোচ্ছেন। আমাদের কেবিন বুক করা ছিল। আমাদের টিকিট দেখাতেই ওরা আমাদের ঘরের চাবি দিয়ে ফ্লোর নং বলে দিল এবং লিফ্টে করে সেখানে চলে যেতে বললো।
     তখন অনেক রাত হয়েছে,সারাদিনের জার্নি আর অপেক্ষায় আমরাও বেশ ক্লান্ত তাই আর সময় নষ্ট না করে সোজা চলে এলাম কেবিনের খোঁজে লিফ্টে করে।
    পরপর দরজা আর তাতে নং লেখা অনেক কেবিন। আমরা খোঁজাখুঁজি করে নং মিলিয়ে আমাদের কেবিনে এলাম। ঢুকে মনে শান্তি এলো কারণ কেবিনটা একদম আমাদের দুজনেরই ছিল আর থাকার জন‍্য যা দরকার সবই সাজানো গোছানো ছিল সেখানে। সাথে অ্যাটাচড্ বাথরুম বেসিন এবং প্রয়োজনীয় সাবান আর শ‍্যাম্পু সবই দেওয়া ছিল।
     আমরা ফ্রেশ হয়ে নিলাম। জামাকাপড় তেমন এক্সট্রা সাথে না থাকায় তেমন করে চেঞ্জ করা হল না। যদিও আমার কর্তা প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রলি আনার আমিই বারণ করলাম আবার টানাটানি না করতে।
    শরীর ক্লান্ত,রাত প্রায় দুটো সুতরাং বিছানায় পড়তেই ডুবে গেলাম গভীর ঘুমে। জাহাজ চলতে লাগলো আপন ছন্দে।
     সকালে ছেলেমেয়েদের ফোনে ঘুম ভাঙলেও আবার ঘুমিয়ে পড়েছি ক্লান্তিতে। জানি আজ কোন তাড়া নেই। ঘুম ভাঙলো বেশ বেলায়,দেখি আমার সাথের ভদ্রলোকের ততক্ষণে স্নানও হয়ে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম কারণ তার খিদেও পেয়েছে। আগের দিন অত রাতে আমরা আর কিছু খাইনি।
       একদম ব‍্যাকপ‍্যাক কাঁধে করেই নীচে নেমে এলাম। কফি আর স‍্যান্ডউইচ অর্ডার দিয়ে খেলাম। যাক মন আর পেট দুইয়েরই শান্তি। বাইরে তখন ঝলমলে রোদ উঠেছে। নীল জল সরিয়ে জাহাজ চলেছে আপন ছন্দে। ফেরিতে একটা দোকানও ছিল পারফিউম,চকলেট আর ব‍্যাগের সেখানেও একটু ঢুকলাম সময় কাটাতে। তারপর আবার বসলাম সোফায় এসে।
          অনেকটা সময় বাদে দূর থেকে বাড়িঘর আর ফোর্ট দেখা গেল,বুঝলাম রোডস্ আসছে। অনেকেই ছবি তুলছেন আনন্দে। আমরাও প্রস্তুত হলাম নামবো বলে।
      রোডসেও ক‍্যাব অ্যাপ চলে না সুতরাং কার নিতে হল। ওরা জিজ্ঞেস করছিল কোথায় যাবো? আমরা মালপত্র নিয়ে উঠে বসলাম কিন্তু দেখলাম আরও তিনজন লোক নিলেন ড্রাইভার। ওনারা কাছাকাছি নেমে গেলেন। আমাদের নিয়ে এগিয়ে চললেন ড্রাইভার। সুন্দর শহর,পরিস্কার পথঘাট আর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সমুদ্র।
    আমরা হোটেলে পৌঁছে গেলাম। গাড়িভাড়া পড়লো তিরিশ ইউরো। হোটেলে গিয়ে পাশপোর্ট দেখিয়ে আর সাত ইউরো সিটি ট‍্যাক্স দিয়ে ঘরের চাবি পেলাম। ওরা বললেন আমরা এই হোটেলে মাত্র একদিন থাকবো তাই আমাদের পার্সোনাল পুল সংলগ্ন ঘর দিচ্ছেন। যেহেতু হোটেলে লিফ্ট নেই তাই বেল বয় আমাদের পৌঁছে দেবে ঘরে। বেল বয় আমাদের ঘরে পৌঁছে সব ব‍্যবস্থার কথা বলে বিদায় নিল। এই হোটেলে আমাদের ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ ডিনার ইনক্লুডেড ছিল। তাই ওরা হাতে একটা ব‍্যান্ড পরিয়ে দিল।
     আমরা একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম। কারণ আমাদের হফ অন বাসের টিকিট কাটা ছিল। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। এবার লাঞ্চ করেই যেতে হবে সেখানে।
     লাঞ্চ করে যেখান থেকে বাস ছাড়ে সেখানে পৌঁছে কিছুটা অপেক্ষার পর বাস এল কিন্তু এখানে বাসেথ সার্ভিস একদম ভালো নয়। যেখানে অন‍্য শহরে রাত আটটা পর্যন্ত বাস চলে সেখানে এরা তিনটের সময় বলে বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাবে এবার। অবাক হলাম দেখে,লেখা আছে সাড়ে ছটায় শেষ বাস। পরে বুঝলাম যাত্রী তেমন নেই বাসে।
    টিকিটের টাকা নষ্ট হল এই ভেবে হতাশ হলাম কারণ এখানে আমাদের থাকার মেয়াদ মাত্র একদিন।
   বাইরে বেরিয়ে এমন কত অভিজ্ঞতাই ঘটে। যাক একদম আশা ছাড়লাম না আমরা পরের বাসের জন‍্য অপেক্ষা করলাম। সেও একই কথা বললেও আমাদের অনুরোধে আমাদের রোডস্এর ফোর্টের কাছে পৌঁছে দিল। এই ফোর্ট প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের মধ‍্যে একটা,খুবই পুরোনো গন্ধ মাখা এই ফোর্ট। তবে এর ভেতরটা এখন পুরোটাই বাজার আর রেস্টোরেন্ট হয়ে গেছে। 
     আমরা ভেতরে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে তারপর বাইরে এসে অপেক্ষা করলাম বিগবাসের। অবশ‍্য কিছুটা থেকেও তার দেখা না পেয়ে অগত‍্যা একটা ক‍্যাব নিয়ে অ্যাক্রোপলিস দেখব বলে ঠিক করলাম। এখানেও একটা অ্যাক্রোপলিস আছে। তবে অবশ‍্যই এথেন্সের মত নয়। বেশ পাহাড়ের পথ বেয়ে অনেকটা উঁচু জায়গাতে আমরা চলে এলাম তবে অ্যাক্রোপলিস দেখে আশাহত হলাম। অনেকটা দূরে অ্যাক্রোপলিস যা ঘেরাটোপে আছে আর মেরামতির কাজ চলছে। 
   ড্রাইভারকে বললাম আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিতে। সে অবশ‍্যই রাজি হয়ে গেল বললো শুধু ভাড়াটা আলাদা হবে। আমরা তো জানিই সেটা। সুতরাং হোটেলের পথ ধরলাম পাহাড় থেকে নেমে। সমুদ্রের পাশ দিয়ে চলেছে এই পথ। রোডস খুব সুন্দর সাজানো শহর। আমরা হোটেলে চলে এলাম। 
     হোটেলে একটা গ্ৰীলড্ ফুডের বুফে ছিল বিকেলে তবে আমাদের কপালে সেটা জুটলো না। ততক্ষণে প্রায় শেষ। যাক আমরা একটু কোল্ডড্রিংকস খেয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিলাম। 
    এখানে ডিনার শুরু সাড়ে সাতটা থেকেই,আমরা একটু পরে যাবো ঠিক করলাম। ডিনারে অফুরন্ত খাবারের সম্ভার,প্রচুর গ্ৰীলড ফুড,ভাত, রুটি,বিভিন্ন স‍্যালাড,মাংস,তরকারি,ফলের রস,গরম ঠান্ডা পানীয় কী নেই? আছে বিভিন্ন রকমের ডেজার্ট, ফল আর আইসক্রিম। আমাদের এখন আর কোন তাড়া নেই সুতরাং একটু সময় নিয়ে খাওয়া শেষ করলাম।
             পরের দিন আমাদের ফ্লাইট ছিল বারোটা পঁয়তাল্লিশে। আমরা সকালে একটু বীচের ধারে ঘুরে এলাম। ভোরবেলা হাঁটতে বেশ ভালো লাগছিল। এখানেও জলের রঙ অপূর্ব সুন্দর। একদম গাঢ় নীল রঙ। দেখলে আর চোখ ফেরানো যায় না। মনে হয় শুধু তাকিয়েই থাকি।
       হোটেলে এসে একটু সুইমিংপুলের ধারে দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম। আমাদের আর প্রাইভেট পুলে নামা হল না। তাই ফটো তুলেই মন ভরালাম। এবার ব্রেকফাস্ট করার পালা। ব্রেকফাস্টেও বিপুল আয়োজন। তবে সব খাওয়া যায় না তাই সাধ‍্যমত খেয়ে ঘরে ফিরে এসে জিনিসপত্র ঠিকঠাক প‍্যাক করে নিলাম। হোটেলটা সত‍্যিই ভীষণ ভালো আর খুব বড়। তবে আমাদের বিদায় নিতে হবে।
    আমরা এবার যাবো জাইক‍্যানথোস সেখানে যেতে হলে আমাদের দুবার ফ্লাইট বদলাতে হবে। রোডস থেকে প্রথমে যাব এথেন্স, সেখানে বেশ অনেকটা অপেক্ষা তারপর আবার সেখান থেকে জাইক‍্যানথোস যাবার ফ্লাইট ধরব। যদিও রোডস থেকে এথেন্স যেতে লাগবে ঘন্টা দেড়েক আর এথেন্স থেকে জাইক‍্যানথোস ঘন্টা খানেক তবুও ঐ যে এথেন্সে প্রায় চারঘন্টা বসতে হবে তাই পৌঁছতে আমাদের রাত্রি নটা মত বেজে যাবে।
       হোটেলে এখানেও সিটিট‍্যাক্স দিতে হয়। ওরাই ক‍্যাব ডেকে দিল। তিরিশ ইউরো ভাড়া দিয়ে রওনা দেওয়া এয়ারপোর্টের দিকে।
       আমরা গতকাল যেদিকে গেছিলাম তার উল্টোদিকে এয়ারপোর্ট সুতরাং এই দিকটাও দেখা হয়ে গেল। সুন্দর সবুজে সাজানো বাড়িঘর অনেক বাড়িতেই ফলের গাছ,যাতে ঝুলছে পাকা পাকা মালটা।
         এয়ারপোর্টে পৌঁছে বোর্ডিং পাস নিয়ে আর সিকিউরিটি চেক করিয়ে বেশ কিছুটা অপেক্ষা করলাম। তারপর ফ্লাইটের সময় হতে নিজেদের নির্দিষ্ট সীটে বসলাম। এই ফ্লাইটগুলো বেশ ছোট। এয়ারহোস্টেস আমাদের টফি দিয়ে আপ‍্যায়ন জানালো। ফ্লাইট চলাকালীন কুকিজ আর কফি পরিবেশন করলো। দেখতে দেখতে সময় কেটে গেল। আবার নামা পরিচিত এয়ারপোর্ট এথেন্সে যদিও লাগেজ নিতে হল না। লাগেজ একেবারে পাবো জাইক‍্যানথোস গিয়ে। সুতরাং আমরা অপেক্ষায় বসে রইলাম।
     কিছুটা বসার পর একটু কফি আর স‍্যান্ডউইচ খেয়ে নিজেদের চাঙা করে নিলাম। আমাদের উল্টোদিকে এক বিদেশী ভদ্রমহিলা ব‍্যাগপত্র নিয়ে বসলেন। হঠাৎই তার ব‍্যাগ থেকে মিউ মিউ শব্দ পেলাম। উনি ব‍্যাগ খুলতেই উঁকিঝুঁকি মারলো এক বড়সড় বেড়াল। আমার মনে মনে একটু হাসিই পেল মনে হল ঝুলি থেকে বেরোলো বেড়াল। উনি হাতে করে কিছুটা ক‍্যাটফুড খাওয়াতেই সে শান্ত হল। তারপর মনিব আবার ব‍্যাগ বন্ধ করে তাকে নিয়ে রওনা দিলেন।
    কিছু বাদে দেখলাম আরেকজনের ব‍্যাগ থেকে বেরোলো একটা কুকুর। এইসব মজার মজার দৃশ‍্য দেখে আর এয়ারপোর্টের মধ‍্যের দোকানে একটু ঘোরাঘুরি করে সময় কাটালাম। তারপর আমাদের গেট নং দিতেই নির্দিষ্ট জায়গাতে চলে এলাম।
    আমাদের এই ফ্লাইটেও টফি দিয়ে আপ‍্যায়ন পেলাম আর কুকিজ আর কফিতে রিফ্রেশমেন্ট হল। আমাদের লাগেজ নিয়ে বেরোতে নটার বেশি বেজে গেল।
   জাইক‍্যানথোস অপরিচিত জায়গা,তারপর রাত্রি হয়েছে। তাই একটু চিন্তা ছিল মনে,তবে বেরিয়ে ক‍্যাব পেয়ে গেলাম। তিরিশ ইউরো চাইছিল,কলকাতার আদলে একটু দরদাম করতেই পঁচিশে রাজী হল। আমরা উঠে বসলাম গাড়িতে।
    রাস্তাঘাট তখন নির্জন,মনে হচ্ছে কোন গ্ৰামে এসে পড়েছি। অনেকটা পথ পেরোনোর পর আমাদের হোটেল এল। তাড়াতাড়ি ঘর পেয়ে গেলাম। এবার ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করে বিশ্রামের পালা। আগামীকাল আমাদের একবেলার জাইক‍্যানথোস ভ্রমণ। কারণ সন্ধ‍্যেবেলাতেই আমাদের ফ্লাইট এথেন্স ফেরার। সুতরাং শুভ রাত্রি আজকের মত।

     পরদিন ঘুম ভেঙে বারান্দায় দাঁড়াতেই চোখ জুড়িয়ে গেলো আর মন ভরে গেলো। হোটেলের সুইমিং পুল পেরিয়ে চোখ আটকালো দূরের পাহাড় আর মাথার ওপর ঝকঝকে নীল আকাশে।
           ঠিক যেন ফ্রেমে বাঁধানো একটুকরো ছবি দেখছি। সুইমিং পুলের ধারে গিয়ে দাঁড়ালাম,একটু হালকা শীতের আবেশ বাতাসে। গ্ৰীস বেড়াতে যাবার জন‍্য এই সময়টা খুবই ভালো। কারণ গরমে কষ্ট হয় না অথচ শীতেরও তেমন দাপট নেই। একটা হালকা কিছু সকালে আর সন্ধ‍্যেতে গায়ে জড়ালেই হয়ে যায়।
      জাইক‍্যানথোসে আমাদের কোন ট্রিপ সিডিউল করা ছিল না। ছেলে যদিও বলছিল কলকাতা থেকে অনলাইনে ট‍্যুর বুক করে দেবে। কিন্তু আমরা রাজি হলাম না। আমরা বললাম এখানে আমরা নিজেরাই কোন ট্রিপ বুক করব হোটেলে খবর নিয়ে।
    গতকাল রাতেই খবর নিয়ে রেখেছিলাম যে পাশেই ট‍্যুর কোম্পানী আছে ওরা সাইট সিয়িং করায় সেখান থেকেই ট‍্যুর বুক করে নেওয়া যাবে।
   সকালে উঠে আমরা ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম হোটেলের ব্রেকফাস্ট এরিয়াতে। এই হোটেলে সুইমিং পুল থাকলেও খুব একটা বড়সড় ব‍্যাপার নয়,দেখলাম একটা মেয়েই সব ম‍্যানেজ করছে। 
  আমাদের প্রথমে চা বা কফি নিতে বলে আমাদের ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে দিল। খুবই সাদামাটা আয়োজন,ব্রেড,এগ সাথে বাটার,জ‍্যাম কলা আর ফলের রস।
      তখনও ট‍্যুর অপারেটরের অফিস খোলেনি। আমরা কিছুটা অপেক্ষা করার পর জানলাম যে তিরিশ ইউরোর বিনিময়ে ওরা আমাদের একটা হাফ ডে ট্রিপ করাবে। আমাদের দুজনের ষাট ইউরো লাগলো। 
       বেশ কিছুটা অপেক্ষার পর নির্দিষ্ট সময়ে একটা বাস এল। আমরা ছাড়াও আরও কয়েকজনকে নিয়ে বাস এগিয়ে চললো। গতকাল রাতে সত‍্যি বুঝতে পারিনি জাইক‍্যানথোস এত সুন্দর দেখতে। আজ মন ভরে গেল একটা শান্ত নিরিবিলি দ্বীপের সৌন্দর্যে।
      প্রায় প্রতি বাড়িতেই,কমলা লেবু আর মালটার গাছ। আমাদের হোটেলেও ছিল মালটার গাছ। এছাড়াও পথের দুপাশে অলিভ গাছ।
    গ্ৰীস সমুদ্রের ধারে অবস্থিত হলেও এখানকার ভূমি ভীষণ উর্বর। প্রচুর ফল এবং অন‍্যান‍্য গাছ পালা,আঙুর আর জলপাইয়ের গাছ এখানে।
      দেখতে দেখতে আমরা সমুদ্রের ধারে চলে এলাম। সমুদ্রের জল দেখে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম,এখানকার জল তো আরও নীল। এই গভীরতায় চোখ ডুবিয়ে মন চলে যায় এক অপার্থিব ভালো লাগার আবেশে।
     আমাদের পথ একটু ওপরে আর সমুদ্র একটু নীচে। বীচে অনেকেই তাদের গা সেঁকে নিচ্ছেন আরামে। 


    





   

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...