Skip to main content
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই হাতের ফোনটা দেখে শোভন। হ‍্যাঁ এই ফ্ল্যাটটাই তো মনে হচ্ছে। তবে একবার ফোন করে নেবে ভাবলো। কিন্তু দরজায় দাঁড়িয়ে ফোন করার আগেই ভেতর থেকে নতুন গুড়ের গন্ধ ভেসে আসে শোভনের নাকে। একবার নাক উঁচু করে গন্ধ নেয় তারপরে আনমনা হয়ে যায় হঠাৎই। মনটা হারিয়ে যায় ছেলেবেলায়..পৌষপার্বণ এলেই মাকে ব‍্যস্ত করে তুলত,' মা আমাদের কবে পিঠে করবে গো? আমি কিন্তু তিনদিন ধরে পিঠে খাবো। ভাত খাব না তখন মোটেই। মা হেসে বলত,' আরে হবে তো,তোর বাবা হাট থেকে নতুন খেজুর পাটালি আর নারকেল আনলে। আমি চাল পাটায় বেটে গুড়ো করে পিঠে বানিয়ে দেব।’
  হাসিতে মুখটা ভরে যেত মায়ের কথা শুনে। তারপর আবদারের সুরে বলত,' মা দুধ দিয়ে জ্বাল দিয়ে বেশ ক্ষীর ক্ষীর করে পিঠেগুলো করবে তো? ঐ যে গতবার করেছিলে ক্ষীরপিঠা। মায়ের মুখটা একটু মলিন হলেও হাসি ফুটিয়ে বলত,' আমরা যে গরীব মানুষ বাবা অত দুধ কোথায় পাবো? আচ্ছা তোর বাবাকে বলব গয়লার থেকে একটু বেশি দুধ আনতে। তোকে ক্ষীর পিঠা করে দেব তখন।'
-' আমি শুধু খাব কেন তোমরা খাবে না?'
-' খাবো তো,সবাই খাবো।'
  একটু বড় হয়ে শোভন বুঝেছিল অভাবের সংসারে ছেলের মন রক্ষার্থে পৌষ পার্বণে পিঠে বানালেও। মা বাবার পাতে তেমন জুটত না কিছু। বাবা বলত,' আমার ঐ জলে সেদ্ধ পিঠাই বেশ লাগে। তুমি বরং ছেলেকে একটু পাটিসাপটা আর ক্ষীর পিঠা করে দিয়ো।'
      অভাবের সাথে লড়াই করতে করতেই বাবা চলে গিয়েছিল। ও তখন ক্লাশ টেনে পড়ে। তারপর মাধ‍্যমিক দিয়ে বাধ‍্য হয়েই কাজে ঢোকা দোকানে।
     আর তেমন পিঠে খাওয়ার বায়না করত না শোভন। বুঝতে পারত একটা সংসারের খরচ সামলে এই বাড়তি দুধ,গুড়,ক্ষীর এসব আনা কত মুশকিল। বাবার কথা খুব মনে হত তখন। বড় হয়ে কতবার ভেবেছে সত‍্যিই কী গুড় ভরা সেদ্ধ পিঠে ক্ষীর ভরার থেকে ভালো খেতে?
       তারপর কেটে গেছে বছর তিনেক,সেবার পৌষপার্বণ আসার আগেই মা বললো,তুই একটু গুড়,চালগুড়ো আর দুধ আনিস

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...