Skip to main content

Posts

Showing posts from March, 2025
বসন্তের সুবাস বাতাসে,প্রকৃতিতে নানা রঙের মেলা সুতরাং উচাটন মনে ঘুরন্তী বাই আবার উতলা করে তুললো আমাদের। এবারের দোলে তাই চলে গেছিলাম ম‍্যাকক্লাসকিগঞ্জ। বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল কোথায় যাওয়া যায়? যেখানে পলাশও থাকবে আবার প্রকৃতির রঙও থাকবে,থাকবে একটু পাহাড়,জঙ্গল আর ঝরনা। অবশেষে ঠিক হল ম‍্যাকক্লাসকিগঞ্জ। ছোটনাগপুরের মালভূমিতে অবস্থিত ম‍্যাকক্লাসকিগঞ্জ এখন ঝাড়খন্ডে। পৌঁছতে খুব একটা বেশি সময় লাগে না। যে কোনভাবে রাঁচি পৌঁছে গেলেই ব‍্যাস আর বেশি দূর নয়। রাঁচি থেকে পঁয়ষট্টি কিলোমিটার মত দূর যেতে সময় লাগে মোটামুটি একঘন্টা পঁচিশ মিনিট। এখানে স্টেশনও আছে তবে সেখানে একটাই ট্রেন দাঁড়ায় তার নাম শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস। আমাদের হুট করে পরিকল্পনা সুতরাং ট্রেনের টিকিট পাওয়া গেল না তাই বাসের টিকিট কাটা হল। দীর্ঘদিন ধরে রেলবাবুর ঘরণী হওয়ার সুবাদে বাসের যাত্রা আমার এখন একেবারেই না পসন্দ। তবুও অগত‍্যা মানতেই হল। সঙ্গী হল আমার বরের মর্নি ওয়াক গ্ৰুপের কয়েকজন দাদা আর তাদের স্ত্রীরা। যথারীতি বাসে উঠেই আমার আক্কেল গুড়ুম। বরকে আগেই বলেছিলাম আমি ওপরে উঠব না,আমার স্লিপারে ঘুমের দরকার নেই বসে যাবো। কিন্তু আমার কথাকে ...
বিয়ের পর একটা সময় চৈত্র মাস এলে রুক্ষ শুকনো গালেও একটু হলেও লালচে আভা লাগত যে বর নিয়ে যাবে সেলের বাজারে। কলকাতা আসার পর এই সেল নামক বস্তুটির সাথে সেই আমার পরিচয় ঘটায়। তবে চৈত্র শুরুর সেলের বাজারে যাওয়া সম্ভব হত না কারণ তখন চাকরি বাকরি করি না হাতে টাকা পয়সা তেমন কিছুই থাকত না। সাংসারিক কারণে বর তেমনভাবে কখনই হাতে টাকা পয়সা দিতে পারেনি। অবশ‍্য পরে না দেওয়াটাই অভ‍্যেসে দাঁড়িয়ে গেছে। ঐ টুকটাক যা প্রয়োজন তা নিজের সাধ‍্যমত কিনে দিত। বাবা এলে যাবার সময় প্রতিবারই হাতে দু একশো টাকা দিয়ে যেত। সেগুলো যত্নে আগলে রাখতাম বিএডের চার্ট পেপার,খাতা,ফাইল,পেন পেন্সিল কিনব বলে। আর মাঝেমধ‍্যে হাতে কিছু বাঁচলে হেদুয়া পার্কের সামনের আচারওয়ালার কাছ থেকে বিটনুন দিয়ে বনকুল মাখা কিনতাম। ঠোঙাটা সযত্নে ধরে উঠে বসতাম ট্রামে তারপর ট্রামের টুংটাং ঘন্টি শুনতে শুনতে একটা করে কুল মুখে দিয়ে তার স্বর্গীয় টক,ঝাল,মিষ্টির স্বাদে ডুবে যেতে পৌঁছে যাওয়া বাড়ি। তার মাঝেই অবাধ‍্য চোখ দেখত ট্রামের চাকা থমকে গেলে হাতিবাগানে বসেছে কত না জিনিসের পসরা। আর লোকেরা ভিড় করে সেগুলো কিনছে। হকারদের তারস্বরে হাতে জামা নিয়ে চিৎকার সেল,সেল। যত কথ...
এক যে ছিল পুচকে ছেলে, স্বভাবে সে শান্ত। শুধু মা বাবাকে না দেখলেই মাজী,বাবাজী বলে কাঁদত। খেলনা গাড়ি বা রেলগাড়ি যে কোনটাই হোক... গাড়ি কেনার বা দেখার, ভীষণ ছিল ঝোঁক। শুধু স্কুলের পথে গেলেই তার মুড যেত বিগড়ে। বই,খাতা সরিয়ে দিয়ে, থাকত মাথা নীচু করে। চুল কাটা,ইঞ্জেকশনে,অঙ্কে ছিল তার ভীষণ ভয়। ভালো নাম সপ্তর্ষি তার ডাক নামটি জয়। অঙ্ক পরীক্ষা এলেই তার একটা কথাই ছিল, সব অঙ্ক পারব তো মা? একবার তুমি বলো। অঙ্ক পরীক্ষার আগের রাতে মায়ের পাশে শুয়ে, কত কথাই বলতে বলতে.. অবশেষে পড়ত ঘুমিয়ে। মায়ের ছিল একটাই মন্ত্র, বাছা কিসের ভয়? যার সাথে আছে মা, তার হবেই হবে জয়। কোথা দিয়ে কাটলো দিন, বড় হল পুচকে। পড়াশোনায় মন দিয়ে, মাকে দিল চমকে। অঙ্কই তখন পছন্দ তার, শেষ করে গাদা গাদা খাতা। মন দিয়ে লেখে পড়ে উল্টে মোটা মোটা বইয়ের পাতা। ইঞ্জেকশন নিতে যার, ছিল অনেক ভয়। তাকেই এখন প্রয়োজনে অপারেশন করতে হয়। কার কপালে কী আছে জানেন ভগবান। তাই তাঁর কাছেই বলি, ভালো থাক আমার সন্তান।
বারবারই মনে হয় এই সেদিনের কথা,তবুও বছরের হিসেবে পার হয়ে গেছে কতগুলো বছর আমাদের একসাথে এক ছাদের তলায় থাকার। তখনকার তেইশ পেরোনো গ্ৰাম থেকে আসা এক মেয়ের কলকাতা শহর আর কলকাতা শহরে তার শ্বশুরবাড়িতে পা রাখার গল্প আজ অনেক পুরোনো আর হলদেটে রঙচটা বইয়ের মতই। সেকালের শ্বশুরবাড়িতে ঢুকেই কত্ত হোঁচট খাওয়া আর কুটকচালির খানাখন্দে পা রেখে রক্তাক্ত কমবয়েসী মন। ঠেস মারা কথার ঠোকাঠুকি আর নিখুঁত খোঁচাতে অনবরত মন ভাঙে আর কান্না পায় বাপ মায়ের আদরের একমাত্র মেয়ের। ভয় পায় সেই মেয়ে,কারও জোরে চিৎকার করে কথা শুনে। বুক কাঁপে থরথর করে,কারণ এখনকার মেয়েদের মত সে তখন অতটা ডাকাবুকো ছিল না। শ্বশুরবাড়িতে যাই হোক না কেন মানিয়ে নিতেই হয় এই শিক্ষাই সে পেয়েছে। এতদিনের লেখাপড়া আর সমস্ত গুণ তুচ্ছ হয়ে যায় তার শ‍্যামলা বরণের কাছে। কথায় কথায় শুনতে হয় সে কতটা অকর্মণ্য আর খারাপ দেখতে,স্বভাবেও সে বেয়াড়া। তার যে এত বদগুণ আছে সে বড় হওয়া অবধি কখনও কারও কাছে শোনেনি। কম্পিত হৃদয় নিয়ে সে অপেক্ষায় থাকত কাজের শেষে তার স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসার। বারান্দার রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে উঠত,বারবার চোখ যেত বুড়ো ঠাকুরদার ঘন্টি ঘড়িতে। অ...