বারবারই মনে হয় এই সেদিনের কথা,তবুও বছরের হিসেবে পার হয়ে গেছে কতগুলো বছর আমাদের একসাথে এক ছাদের তলায় থাকার। তখনকার তেইশ পেরোনো গ্ৰাম থেকে আসা এক মেয়ের কলকাতা শহর আর কলকাতা শহরে তার শ্বশুরবাড়িতে পা রাখার গল্প আজ অনেক পুরোনো আর হলদেটে রঙচটা বইয়ের মতই। সেকালের শ্বশুরবাড়িতে ঢুকেই কত্ত হোঁচট খাওয়া আর কুটকচালির খানাখন্দে পা রেখে রক্তাক্ত কমবয়েসী মন। ঠেস মারা কথার ঠোকাঠুকি আর নিখুঁত খোঁচাতে অনবরত মন ভাঙে আর কান্না পায় বাপ মায়ের আদরের একমাত্র মেয়ের। ভয় পায় সেই মেয়ে,কারও জোরে চিৎকার করে কথা শুনে। বুক কাঁপে থরথর করে,কারণ এখনকার মেয়েদের মত সে তখন অতটা ডাকাবুকো ছিল না। শ্বশুরবাড়িতে যাই হোক না কেন মানিয়ে নিতেই হয় এই শিক্ষাই সে পেয়েছে। এতদিনের লেখাপড়া আর সমস্ত গুণ তুচ্ছ হয়ে যায় তার শ্যামলা বরণের কাছে। কথায় কথায় শুনতে হয় সে কতটা অকর্মণ্য আর খারাপ দেখতে,স্বভাবেও সে বেয়াড়া। তার যে এত বদগুণ আছে সে বড় হওয়া অবধি কখনও কারও কাছে শোনেনি। কম্পিত হৃদয় নিয়ে সে অপেক্ষায় থাকত কাজের শেষে তার স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসার। বারান্দার রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে উঠত,বারবার চোখ যেত বুড়ো ঠাকুরদার ঘন্টি ঘড়িতে। অপেক্ষায় অধীর মন জানত যে এই একটা মানুষই আছে যার ভালোবাসায় মোড়ানো কয়েকটা কথা আর আদরে কাছে আশ্রয় দেওয়াতে আবার লড়াই করতে পারবে আগামীকালের সাথে।
অনেকটা দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো শ্রান্ত ক্লান্ত মানুষটাকে দেখে মন ভরে উঠত নির্ভরতায় আর ভালোলাগায়। দরজা খুলতেই তুমি মাপতে আমাকে,চোখ দিয়ে বুঝতে চাইতে মনটা আজ কেমন? অনেকদিনই হাতের পুটলি থেকে বেরোত চপ বেগুণী,ঘুঘনি। আবার মাসের মাইনে পাওয়ার দিনে থাকত শালপাতায় মুড়োনো খিদিরপুরের শুকনো খটখটে মাংস। সে ছিল কত আনন্দের দিন। রান্না হত সেই মাংস ভালোবাসা দিয়েই আর তারপর রাতে জমিয়ে সবাই মিলে খাওয়া। ফোনের যুগ না থাকায় অফিস থেকে এসে কত কথা হত চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে।
তোমার কথা,তোমার দৃষ্টি,তোমার ছোঁয়া,মায়া মমতা আর আদর আমাকে টিকিয়ে দিয়েছিল এই সংসারে। দুবার হস্টেল পালানো মেয়েটাকে বেঁধেছিলে তুমি। কখনও ছেঁড়া ঘুড়ির মত মন ছিঁড়ে গেলেও তাকে আবার তালি দিয়ে জুড়ে সাজিয়ে উড়িয়ে দিয়েছি স্বপ্ন আকাশে।
তবে সংসার বড় নির্মম সে যেমন দেয় তেমন ছিনিয়েও নেয়। আমিও একটু একটু করে হারিয়েছিলাম আমার নরম স্বভাব। বুঝতে শিখেছিলাম সংসারের জমিতে এক সূঁচাগ্ৰ মাটি পেতে হলেও তা লড়াই করেই পেতে হবে। তাই বাবা মায়ের আঙুল ধরা ভীতু মেয়েটা যে কখন যোদ্ধা হয়ে উঠেছিলাম তা নিজেও বুঝিনি। কলকাতা না চেনা মেয়েটা রোজগারের তাগিদে ভোরের অন্ধকারে একটু একটু করে চিনেছিল কলকাতাকে। বাসের জানলায় বসে সে একমুঠো বসন্তের হাওয়া মেখে মুছে ফেলেছে মনের ক্লান্তি। ধর্মতলা থেকে রওনা দেওয়া কোন উত্তরবঙ্গের বাস দেখে তার মন ছুটে গেছে বাপ মায়ের কাছে,খুব মনে পড়েছে তার ফেলে আসা গ্ৰামের কথা। তবুও চলে যাবো বললেই কী যাওয়া যায়? তাই উঁকি দিয়ে শুধু লোলুপ দৃষ্টিতে বাসটা দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। কখনও বা শিয়ালদা স্টেশনের স্টপেজে বাস থামলে খুঁজতাম যদি চেনা কাউকে দেখতে পাই...
সবে মোটামাথার যোদ্ধা হয়ে ওঠা সেই মেয়েটার কাছে সংসারের পাশাপাশি তার কাজের জায়গাও মসৃণ ছিল না,সেখানেও চলেছিল এক অন্য অপমানের লড়াই। গ্ৰাম থেকে আসা মেয়েটাকে কলকাতা শহরে কেউই চট করে ঠাঁই দিতে চায়নি। তবুও ঐ যে চাকরিটা তখন বড় প্রয়োজন,তাই মাটি কামড়ে পড়ে থাকা নিত্যদিনের টেনশন বয়ে আর সয়ে। তোমার সাথেই ভাগ করে নিতাম কতশত মন খারাপের গল্প। সেখানেও আমার আশ্রয়দাতা ছিলে তুমি।আমাকে সংসারের মাটিতে সামান্য একটু জমি পাওয়ার সুযোগ করে দিল আমার চাকরি। এরপর আমার দ্বিতীয় শক্তি এলো আমার পুত্র। বিয়ের দুবছর পরে যখন সামনে পেছনে লোকে আমার মাতৃত্ব নিয়ে সন্দেহ করে কখনও বাজা বলছে তখন তিনবছরের মাথায় এলো সে।
ভয়ে কাঁপা কাঁপা মন নিয়ে যে মেয়ে সারাদিন অপেক্ষা করত কখন তার বর আসবে দুটো আদরের কথা বলবে,একটু আশ্রয় পাবে তার মনে। তার এখন কাজ থেকে ফিরে আত্মজকে নিয়েই দিনের অনেকটা সময় কেটে যায়। ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে একটু অবসরে তোমার বুকে মাথা রেখে ভুলে যেতাম সবটুকু ক্লান্তি।
শূন্য হাতে চলার পথটুকু শুরু করলেও বিধাতা একটু একটু করে কখন যে সেই হাত পূর্ণ করে দিয়েছেন তা বুঝতেই পারিনি। এক সন্তানের থেকে হয়েছি দুই সন্তানের মা। কোলে এসেছে লক্ষ্মী,গণেশ। মাথার ওপর ছাদ হয়েছে। আমি যোদ্ধা থেকে হয়েছি মহাযোদ্ধা,ঘরণী থেকে হয়েছি পাকা গৃহিণী। স্ত্রী থেকে হয়ে উঠেছি ইস্তিরী। তবে সূক্ষ্ম আর কুটিল বুদ্ধির অধিকারী হতে পারিনি এখনও। তাই এখনও প্রতিনিয়ত ঠকি আর অপমানিত হই। তবে মায়ের বলা কথাগুলো এখন সত্যি মনে হয়,বুঝতে পারি আমার এমন কিছু ঈর্ষণীয় গুণ আছে যার জন্য আমি চিরকালই কারও না কারোর ঈর্ষণীয়। জীবনে যেমন যোগ হয়েছে অনেক কিছুই তেমন বিয়োগের খেলায় হারিয়েছি দুজনেই আপনজনকে। মাথা থেকে সরে গেছে আমার দুই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার আপনজন। একটু ভালোবাসা পাবার জন্য কাঙাল হয়েছি। তবুও হারিয়েছি কত সম্পর্ক। আঁকড়ে ধরতে চাইলেও রাখতে পারিনি,কাজ ফুরিয়ে যাওয়ার পর সম্পর্কও ফুরিয়ে গেছে।
সব হারিয়ে তখন একটু আদর,ভালোবাসা আর নির্ভরতার আশ্রয় চেয়েছি শুধু তোমারই কাছে। শুধুমাত্র দুটো,তিনটে নিখরচায় পাওয়া শব্দ(আদর,ভালোবাসা আর যত্ন) মুছিয়ে দিতে পারে কতশত না পাওয়া,অপমান আর অভিমান। কখনও তা পেয়েছি আবার কখনও না পেয়ে ক্ষতবিক্ষত শরীর আর মনে আরও একা হয়ে গেছি মনে মনে। অভিমানী হয়ে শক্ত বেড়া গড়ে নিয়েছি নিজের মনের চারপাশে।
দিন বয়েছে আমাদের বয়েস বেড়েছে। দাদা বৌদির থেকে এখন আমরা অনেকের কাছেই কাকু কাকিমা। তুমি হয়েছ শ্বশুর আর আমি শাশুড়ি। শরীরের জন্য চা থেকে বাদ দিয়েছি চিনি। চায়ের মিষ্টতা কমেছে,তরকারির স্বাদও আর চিনি ছাড়া তেমন যেন জমে না। তবুও খেতে হয় সুস্থভাবে বাঁচতে হবে বলে। তবে দাম্পত্যের মধ্যে ভালোবাসার,সহানুভূতির চিনিটুকু ছাড়া সম্পর্কে আর কোন কিছুই বোধহয় থাকে না। হয়ত বা চলে যায় বাঁচার ইচ্ছেটুকুও। তাই শরীরের জন্য চিনি বাদ দাও তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু সম্পর্কের মিঠাস ঐ চিনিটুকু বরাদ্দ রেখো। নিখরচায় পাওয়া ঐ মিষ্টিটুকুকে আর দাম্পত্যের ভাড়ারে বাড়ন্ত কোর না। একটু মিঠে কথার আদর,সহানুভূতি,ভালোবাসা এই টুকুই তো চেয়েছি যা খুবই সামান্য বিনি পয়সার জিনিস কিন্তু জীবনে বাঁচার পথে তা অসামান্য। জীবনের পড়ন্ত হেমন্তের বেলায় অনেকটা লড়াইয়ের পর ভালো থাকার ঐ এট্টুখানি লোভ যে বড় টানে। তোমাদের থেকে পাওয়া সামান্য অবহেলা মনকে করে তোলে কঠোর আর অভিমানী,মন বিদ্রোহ করে চিৎকার করে ওঠে," কী করিনি তোমাদের জন্য? এই কী আমার প্রাপ্য ছিল?" সে চিৎকার কখনও ধাক্কা খায় সুখের সংসারে অসুখ হয়ে প্রতি দেওয়ালে। আবার কখনও কিছু বিষবৃক্ষ আর বিছুটি গাছ হঠাৎই জন্মায় আমার অতি যত্নে লালন করা সুখের বাগানে। বড় কষ্ট আর বেগ পেতে হয় সেগুলো উপড়ে ফেলতে। তাদের জ্বালা পোড়ায় ক্ষতবিক্ষত হয় কখনও মন,কখনও জীবন।
তবুও সংসার যে কিছু দেয়নি তা কী করে বলি? সংসার করে দুজনেই হারিয়েছি অনেক কিছুই,হয়ত এত বছরেও কেউই হতে পারিনি কারও মনের মত। তবুও আমরা ভুলেছি আঘাত,সারিয়েছি ক্ষত। কারণ সংসারই আমাদের করেছে পরিণত।
তোমার আমার একসাথে পথ চলার আরেক বছর শেষের দিনে,কত কথাই তো জমে মনে। এখন আর আমার সেই কলকলানি শোনার সময় কোথায় তোমার? হাতের স্মার্টফোন,ঘরের স্মার্ট টিভি আমাদের বদলে দিয়েছে। আমরা আর গভীর চোখে একে অপরের মনের তাপ মাপি না,হয়ত বা চোখের দৃষ্টিও ক্ষইছে। বয়স হচ্ছে তো,কেউ কেউ বলে বয়েস হলে অনুভূতিরা ভোঁতা হয়। মনটা হয়ে যায় যান্ত্রিক,তখন আর মৃত্যু,শোক,তাপ,অনুরাগ কিছুই স্পর্শ করে না। হয়ত বা আমরাও তেমনি হয়ে গেছি। মনের কথা না শুনে ফোনের কথা শুনেই কেটে যায় দিন। ফোন তাৎক্ষণিক সুখে ভুলিয়ে রাখে সব কিছু।
জীবনের ফেলা আসা সব অতীতের দিনই তিক্ত নয়। কত স্মৃতি তাকে ঘিরে। সে যে আমাদের বড় প্রিয় বন্ধু,কত কী শেখায় আমাদের। তাই তো তাকে কিছুতেই ভোলা যায় না,ভুলতে চাইলেও। এভাবে কিছু ভুলে,কিছু না ভুলে কেটে গেছে আমাদের জীবনের কত দিন,মাস,বছর...আশা রাখবো তেমন করেই ভালো কাটুক আমাদের হাতে থাকা বাকি বছরগুলো শুধু দিনগত পাপক্ষয় না করে বরং দুজনে দুজনকে ভালো রেখে আর পাশে থেকে। সুতরাং চলতে থাক সহ্য করার আরেক নতুন বছরে পাশাপাশি থাকা।
দুধ খেতে না চাওয়া বড়সড় লম্বা বেবিটাকে ঝিনুক বাটিতে ধরে মোটামুটি যুদ্ধ করে গায়ের জোরে গাল টিপে দুধ খাইয়ে দিত আমার বাবা। সে গল্প অবশ্য শুনেছি মায়ের কাছে। প্রায়ই নাকি লাথি মেরে দুধের বাটি ওল্টানো আমার কাজ ছিল। মোটামুটি ক্লাস সিক্স পর্যন্ত থুতনি ধরে চুল পরিপাটি করে আঁচড়ে দেওয়াও বাবারই কাজ ছিল। আবার হাঁসের ডিমের লাল কুসুম আর সাদা অংশ দিয়ে বাবার মাখানো ভাত থেকে একটা বড়সড় দলার ভাত খাওয়া আমার অভ্যেস ছিল। বাবা নামটার দুটো অক্ষরে কত স্নেহ,আদর,শাসন আর জ্ঞান ছিল যা এখনও ভাবলে মনে হয় কোথা দিয়ে পার করে এসেছি এতগুলো দিন। আমাদের বাবা মেয়ের মধ্যে তুই সম্বোধন ছিল না। বাবা আমাকে তুমিই বলেই কথা বলত। তার কারণ আমি নাকি ছোটবেলায় সবাইকে তুই বলতাম তাই সেটাকে পরিমার্জিত করার জন্য বাবা আমাকে তুমি বলার অভ্যেস করেছিল। আমার ছেলেমেয়েদেরকেও বাবা তুমিই বলত। এককালের জমিদার বাড়ি কালের থাবায় পড়ন্ত বনেদী বাড়ি।সেই বাড়ির এই সুদর্শন মেজছেলের চেহারা এবং মেজাজ দুটোই রাজার মতই ছিল। রায়গঞ্জ কলেজের ইউনিয়ন প্রেসিডেন্টকে তার সুন্দর চেহারা এবং ইংরেজীতে অপার জ্ঞানের জন্য সমসাময়িকেরা অনেকেই রাজা বলে ডাকত। পরীক্ষার সময় সিগারেটের প্যাকেট ঘুষ দিয়ে রাজাদার বানানো নোটস চলে যেত ছেলেদের হস্টেলে আর কখনও পরীক্ষার হলে। ছোট থেকেই হস্টেলে বড় হওয়ার সুবাদে লিডারশিপ করাটা অভ্যেস হয়ে গেছিল বাবার। হস্টেলের রাঁধুনী ঠাকুর থেকে,হরিশ্চন্দ্রপুর লাইনের তিলের খাজাওয়ালা সবার সাথেই ছিল তাঁর প্রাণের টান। আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি ছাত্রজীবনের খাজাওয়ালা আর ঝালমুড়িওয়ালা দেখে ট্রেনে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে বাবাকে। খাজা কিনতেই হবে তার কাছ থেকে আর খাজা কেনার ছলে জমে যেত কত গল্প। আমি মাঝেমধ্যে বলতাম,ইশ্ এত মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে না বাবা। এত খাজা কী করবে? বাবা বলত,যা ইচ্ছে করে খাও কত ছেলেপুলে আছে দিয়ে দেব। অনেক পুরোনো লোক এরা সেই ছাত্রজীবন থেকে দেখে আসছি,ওদের একটু সাহায্য হয় তাই কিনি। তখন অনেক কিছু বুঝতাম না এখন অনুভব করি।
মাঝেমধ্যেই মাকে দেখতাম ভালোমন্দ রান্না করছে ছুটির দিনে,তারমধ্যে অবশ্যই ক্ষীর থাকত। বুঝতাম আজ বাবা আবার কাউকে নেমন্তন্ন করে এসেছে। বাবা পায়েস পছন্দ করত না তবে ক্ষীর তাঁর খুব প্রিয় ছিল। দুপুর হতে না হতেই দেখতাম কোন ভিখিরি এসেছে,তাকে বাবা নেমন্তন্ন করেছে। বারান্দায় বসিয়ে তাকে ভরপেট খাইয়ে এবং সবশেষে ভোজন দক্ষিণা দিয়ে আমরা খেতে বসতাম।
বাবা মায়ের যেখানে চাকরীর জায়গা সেখানে আমাদের ভাড়া বাড়ি ছিল। দুটো মাত্র ঘর। একটা বড় ঘর আরেকটা খুবই ছোট। একটা তক্তপোষে কোন মতে দুজন তাতে শোয়া যেত। তবে সেই ঘরেও মানুষজন আসার আর থাকার বিরাম ছিল না। আত্মীয়পরিজনদের অসুস্থতা,তাদের পড়াশোনা কখনও চিকিৎসা যে কোন দরকারেই বাবাকে দেখেছি এগিয়ে যেতে। যত বড় হয়েছি তত বুঝেছি আমার মায়ের অসীম সহ্যগুণ ছিল তাই সবসময় বাবার পাশে থেকে এসেছে তাঁর নানান কাজে।
নিজেও অনেকদিনের বিবাহিত জীবন কাটিয়ে বুঝি এই সংসারে মেয়েরা কখনও নাম পায় না,অথবা পেলেও খুব কম মেয়ের ভাগ্যেই জোটে সুনাম। সবাই নাম করে ছেলেদের,ঐ যেমন আমার দাদা খুব ভালো,মামা অথবা কাকু খুব ভালো। কিন্তু যে মহিলা স্ত্রী হয়ে তার স্বামীর সব কাজে তার পাশে থাকে। মুখ বুজে রান্নাঘর সামলায় অথবা স্বামীর আর তার আত্মীয়পরিজনদের পাশে থাকে তাদের নিন্দা এবং সমালোচনা সত্ত্বেও তার কোন মূল্য সে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পায় না। মাকেও ঠিক তেমনিভাবে দেখেছি চাকরি সামলে প্রথমে ঘুপটি রান্নাঘরে কুপির আলোতে কয়লার উনুনে আঁচ দিয়ে তারপর অনেক পরে গ্যাসের উনুনে রান্না করে সারাজীবন ধরে অনেক ঝক্কি সামলাতে। একসময় আর্থিক ভাবে সম্ভব ছিল না তবে পরেও মাকে কখনও দেখিনি রান্নার লোক রাখতে। রান্না করাটা তাঁর ভালোলাগা ছিল। তবে কখনও সেই ভালোলাগা অত্যাচারে পর্যবসিত হত।
বাবা স্কুল যাবার ঘন্টা খানেক আগে কোনদিন তিন কেজির মাছ নিয়ে বাড়িতে হাজির হত। ওখানে তখন মাছ কেটে বিক্রির ব্যবস্থা ছিল না। আর পাকা রুই মাছের কালিয়া বাবার দারুণ পছন্দের। মাকে দেখতাম সেই মাছ কেটে,ভাগ করে সমস্ত গুছিয়ে ফেলত নিপুণ দক্ষতায়। অনেক সময়ই পাশের মাস্টারমশাইদের সাথে ভাগে কেনা হত সেই মাছ। কিন্তু কেটে ভাগ করার দায়িত্ব ছিল মায়ের। আবার কখনও বিকেলের বাজার থেকে অনেক ছোট মাছ নিয়ে আসত বাবা। সেই মাছ কেটে উদ্ধার করা একটা ব্যাপার ছিল। হাতে ছাই মাখিয়ে একটা একটা করে সেই মাছ কাটতে কাটতে সন্ধ্যে নেমে যেত কখনও। তারপর কাপড় ছেড়ে,সন্ধ্যে দিয়ে উনুন ধরিয়ে মা মিটমিটে আলোতে ঘুপচি রান্নাঘরে বসে রান্না করত। তখন ফোন ছিল না,সুতরাং অতিথি কোন দিন তিথি না মেনে যখন তখনই আসত নাম স্বার্থক করে। তবে তাদের আদর যত্নে কোন ত্রুটি থাকত না। মেকি অভিনয় করে নয়,রীতিমত তাদের দেখে আমরা খুশি হতাম। তাদের সাথে আনন্দে কেটে যেত আমাদের দিনও। তাদের যাবার বেলায় সবার চোখেই জমত ভালোবাসা মেশানো অশ্রুজল তারমধ্যেই ছুঁয়ে যেত শেষ কথাগুলো,খুব আনন্দ করে গেলাম গো। আবার আসব।
আমার যখন ছমাস বয়েস তখন আমি এসেছিলাম ভালুকাবাজারে। কম বয়েসের দিদিমণি আর মাস্টারমশাইকে গ্ৰামের মানুষজন আপন করে নিয়েছিল। আর গ্ৰামের মানুষজনের সাহচর্যেই বড় হচ্ছিলাম আমি। দুগ্ধপোষ্য মেয়ের দুধের জোগান দিতে বাবা একটা গরুই কিনে ফেলেছিল তা পুষতে দেওয়া হয়েছিল পাশের বাড়িতে। তার সাথে ছাগলও। সেই গরু ছাগলের দুধ খেয়ে আজ এই অবস্থা। এটা অবশ্য আমার বরের ডায়ালগ। বাবার কড়া শাসন আর মায়ের কড়া দৃষ্টিতে বেড়ে উঠছিলাম আমি একটু একটু করে জুতোর বাক্সে আমার পুতুলের সংসার নিয়ে। তবে মায়ের হাতে হাতে কিছু কাজ করে দিতে হয় সেই শিক্ষা ছোট থেকেই পেয়েছিলাম যার ফলে কয়লা ভাঙা থেকে,লুচি বেলা,মাছ কোটা আবার কখনও কাজের মেয়ে না এলে ঘর মোছা আর মশলা বাটাও করতে হত বড় হবার পর। বাবার খুব ইচ্ছে ছিল মেয়ে রান্না শিখুক তবে মা ওটি খুব একটা করতে দিত না। মায়ের মতে রান্না নাকি সহজাত মেয়েদের মধ্যে। ইচ্ছে থাকলেই করতে পারবে। মায়ের হাতে হাতে কাজ করতে করতে শিখেছিলাম,পিঠে পুলি পাটিসাপটা সবই বানাতে। এমনকি রান্নাও শিখে ফেলেছিলাম কোন বই বা ইউটিউবের সাহায্য ছাড়াই। তখন অবশ্য ফোনই তো ছিল না সুতরাং সবটাই চোখে দেখে আর চেখে দেখে।
বাবার বাইরের জগত বেশি পছন্দ ছিল,স্কুলের পর বাজার করে রেখে দিয়ে মোটামুটি আউটডোর আর ইনডোর খেলা শেষে সাড়ে আটটা নটা নাগাদ ফিরত। আমি মায়ের তত্ত্বাবধানে পড়তে বসতাম। ঘন্টাখানেক পড়ার পর ঝিমুনি আমার নিত্য অভ্যেস ছিল। মাটিতে মাদুর পেতে পড়তে বসতে হত। মা রান্নাঘরে রান্না করতে করতে হাঁক পাড়ত কী রে ঘুমোলি নাকি? এই একটু বাদেই রান্না হয়ে যাবে খেয়ে ঘুমোস। বুঝতাম আমাকে জাগিয়ে রাখাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল যাতে রাতে আমার খাওয়াটা হয়। পড়াশোনাতে ফাঁকি দিচ্ছি কিনা এ নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না।
সময়ে ওঠা,সময়ে খাওয়া,সময়ে স্কুলে যাওয়া,নিয়মানুবর্তিতা,সত্যি কথা বলা সবই শিখেছিলাম বাবার কাছে। কোথাও দেরিতে যাওয়া,বেলায় ঘুম থেকে ওঠা কিছুই তার পছন্দ ছিল না। ছোটবেলার অনেক সুঅভ্যেস যেমন গড়ে উঠেছিল বাবার শাসনে আর শিক্ষায় তেমন বলি হয়েছিল অনেক শখও। কাঁচের চুড়ির ওপর আমার খুব লোভ ছিল। আসেপাশে দুটো বাড়িতে কাঁচের চুড়ির ঝুড়ি নিয়ে ওরা ফেরিতে যেত। সুযোগ পেলেই সেখানে গিয়ে ওদের ঝুড়িতে উঁকি দিতাম কিন্তু তা হাতে পরার দুঃসাহস দেখাতে পারিনি কখনও।
বাড়ির এই মেজো ছেলে যিনি কারও বড় কাকু,কারও মেজো মামা ছিলেন তার ভয়ে ভাগ্নে,ভাগ্নী,ভাইপো,ভাইঝিরাও কম্পমান ছিল। সুতরাং নিজের কন্যার সাথে তাদেরও চরিত্রদোষ শোধনের দায়িত্ত্বও তিনিই পালন করতেন। তাই অতিরিক্ত সাজগোজ,চোখে কাজল পরা তাদেরও বারণ ছিল।
তবে জামাকাপড়ের ক্ষেত্রে তাঁর পছন্দ ছিল খুব মার্জিত। গ্ৰামে থেকেও প্রায়ই কলকাতার জামা পরার সুযোগ আমার হত। তাঁর কড়া পাহাড়াতেই আমার সাজগোজ,কথাবার্তা,আচার আচরণ কোন কিছুতেই তেমন ভাবে কোন গ্ৰাম্যতা ঘেঁষতে পারেনি। মানসিকভাবে আধুনিকতার পাঠ পেলেও,আধুনিক হতে পারিনি চলনে বলনে তেমন করে। কারণ সেক্ষেত্রেও বাবার ভয় ছিল মেয়েকে বেশি স্বাধীনতা দিলে সে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে,সুতরাং প্রতি পদক্ষেপেই মা বাবার নজর ছিল। তখন এইট,নাইনে পড়ি বোধহয়। মাঝেমধ্যে চোখ চুলকায় বলে মা গরম কাজল প্রদীপের শিখা দিয়ে বানিয়ে চোখে পরিয়ে দেয় রাতে। সকালে মুখ ধুয়ে আয়নাতে নিজেকে বেশ দেখতে লাগে,শক্ত করে গোড়া কষে কলা বেণী বাঁধা একটা বিচ্ছিরি দেখতে মুখের মধ্যে স্বপ্নালু কাজল মাখা দুই চোখ। আবিষ্কার করলাম কাজল পরলে চোখদুটো বেশ লাগে। তবে সেই শখ ধোপে টিকল না,বাবার হুমকি শোনা গেল ঘষে কাজল তুলে দেওয়া হবে। পড়াশোনা করলে আবার এত শখ কিসের?
নেলপলিশ পরা যাবে না,নখের রঙ তাতে নষ্ট হয়,কাজল টানা যাবে না,চুল নিয়ে স্টাইল করা যাবে না,তেল চপচপে করে সরু কালো ফিতে দিয়ে তা বেঁধে দুপাশে কলার মত ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। কো এডুকেশন স্কুলে পড়ি সেখানেও বাবা মা দুজনেই পড়ান সুতরাং ঐ যদি ট্যান্ডাই ম্যান্ডাই করেছো তো ডান্ডাই মেরে নাম ভুলিয়ে দেব। একদিনের বেশি দুদিন কোন ছেলে পড়া জানার নামে ঘুরঘুর করলে মা এমন হুলিয়া জারি করেছে যে সে আর ঘেঁষেনি। বড় হচ্ছি যখন তখন পরার জামার কুচি বেড়েছে। পায়ে বেড়ি পড়েছে,বাইরে ঘোরাঘুরি কমেছে। তখন বেরোনোর ওপর ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বাবা মায়ের শাসন মেনে নিয়েছি। যেমনভাবে মেনে নিয়েছিল স্কুলের অগণিত ছাত্রছাত্রীরা। দিদিমণিকে সবাই ভয় পেলেও, এস.এস মাস্টারমশাই ছিল তাদের খুব প্রিয়। গল্পে জমে যেত ছেলেপুলে। বাবার গল্প বলার ধরণ এতটাই ভালো ছিল যে সব বাড়িতে গেলেই বাবাকে ঘিরে ধরত ছেলেমেয়েরা গল্প শোনার জন্য। আমরা যেভাবে ভাইবোনরা মিলে ঠাকুরদা আর বাবার কাছে গল্প শুনেছি এখনকার ফোনজগৎ তার অনেকটাই চুরি করে নিয়েছে ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে।
বাবার বাইরে তাস খেলা,ক্যারাম খেলা ইত্যাদি নিয়ে মা মাঝেমধ্যে খুবই অভিযোগ করত কারণ একটাই যে আমি সন্ধ্যেবেলা ঝিমিয়ে আর ঘুমিয়ে কাটাই। বাবা আমার পড়াশোনার দেখভাল করলে আমি উন্নতি করতে পারতাম। তার উত্তরে বাবার জবাব শুনে মা মাথায় হাত দিয়েছিল। বাবার উত্তর ছিল ও আমার মেয়ে ওর রক্তে পড়াশোনা আছে এমনিতেই হয়ে যাবে। তবে ইংরেজী গ্ৰামারের প্রথম পাঠ আমার বাবার কাছেই শেখা। এত সুন্দর করে টেন্স আর ভয়েস চেঞ্জ শিখেছিলাম যা আজও ছবির মত চোখের সামনে ভাসে।
আমি বড় হলাম,কলেজে ভর্তি হলাম। কিছুদিন বাদে হাতে বড় নখ তাতে নেলপলিশ, কানের দুপাশের চুল কাটা,চোখে কাজল দেখে বাবা প্রমাদ গুনলো মেয়ের অধঃপতনের শুরু হল বোধহয়। মা শখ করে এটা ওটা পোশাক কিনে দিলেও বাবার নির্দেশ ছিল শাড়ি পরেই কলেজ যাবে। অবশ্য আমি ক্লাশ নাইন থেকেই শাড়ি পরেছি,তাই কলেজে যাবার আগে চার বছর হয়ে গেছে শাড়ি পরার। এখন কালের নিয়মে আধুনিক হয়ে শাড়ি মোটামুটি বিদায় নিয়েছে আমাদের অভ্যেস থেকে। শাড়ির নামে অনেকেই এখন আমরা আঁতকে উঠি আর আধুনিক প্রজন্ম তো ওঠেই। তবে এখনকার মেয়েরা বেশ গুছিয়ে শাড়ি পরে যখন পরে। সে পরিপাট্য,আর নানান ধরণের শাড়ি আমাদের ছিল না। মায়ের মিনু বা রাজকমলের ছাপা আর ভয়েল অথবা একটা দুটো সিল্ক আর জর্জেট শাড়িই ছিল তখন সম্বল।
কালের সিঁড়ি বেয়ে বড় হয়ে উঠেছি কিন্তু বয়ে যেতে পারিনি কারণ তোমাদের শিক্ষা,আদর্শ আর মূল্যবোধ এতই দৃঢ় ছিল যে তা ক্ষয়ে যায়নি। বাবা বটগাছের মত,কত ঝড়ঝাপটা থেকে আগলে রেখেছে সেই ছোটবেলা থেকে আবার কখনও সেই বটগাছের দুএকটা ডাল সশব্দে পিঠেও পড়েছে। অভিমান হয়েছে,কেঁদেছি। বাবা আদর করে বুঝিয়েছে যে ভালোবাসে সেই তো শাসন করে। আর মা ছিল গল্প লেখার খাতার মত,সেই খাতাতে লিখে রাখা যায় কত মান অভিমান অভিযোগ আর না পাওয়ার কথা। যে খাতার ছত্রে ছত্রে হয় কতই বানান ভুল আবার কাটি আবার ঠিক করি তারপর মনের সব কথা বলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি। এখন আমার মেয়ে কাজের ফাঁকে শুকনো গলায় ফোন করে কখনও তারপর অভিযোগ করে এই হয়েছে,ঐ হয়েছে। আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনি তারপর একটু কথার মলম লাগিয়ে দিই। ও ফোন রাখে আবার কাজ করে। ছেলেটা ছোটবেলায় কলকল করে স্কুল থেকে এসে কত বকবক করত। যত বড় হল,বকবক কমতে লাগল। বুঝতে শিখল বোধহয় সব কথা মাকে বলতে নেই। কিছু সমস্যা নিজেকে সমাধান করতে হয়। মেয়েটা বড় হল কিন্তু কলকলানি বন্ধ হল না।
আসলে মেয়েটা আমার মতই,আমি যেমন প্রায় বুড়ো হবার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও বড় হতে পারলাম না মনে মনে। আসলে একটা সময় আমাদের কলকলানি শোনার মত আর তেমন কেউ থাকে না। কত কথা আর ব্যথা বাষ্প হয়ে মিলিয়ে যায় আকাশে। । তবুও আমরা ছেলে মানুষের মত কলকলিয়ে উঠি কখনও কাজের জায়গায় কখনও গুটিকয়েক প্রিয় বন্ধুর কাছে। আর অন্য জায়গায় নিজেকে গাম্ভীর্যের মোড়কে মুড়িয়ে গম্ভীর থাকি। আসলে একটা সময়ের পরে আমরাই বটগাছ হয়ে যাই,আমরা ছায়া দিই কিন্তু আমাদের গল্প কথা শোনানোর জন্য ঐ দূরের আকাশটা ছাড়া আর কাউকে পাই না। তাই শরীর খারাপের মুহূর্তে চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে অজান্তেই বেরিয়ে আসে বেশ কয়েক বছর আগে হারিয়ে যাওয়া দুটো নাম উঃ মাগো...উঃ বাবা,আর পারছি না। মা হঠাৎই দেখা দেয় স্বপ্নে,বুঝতে পারি এবার ভালো হয়ে যাবো। আমার ছোট বেলার এক বন্ধু আমাকে একদিন ফোনে বলেছিল মা বাবা তো আগেই যান। এত মন খারাপ করিস কেন? কিন্তু ঐ যে সে চলে গেল বলে গেল না..সে কোথায় গেল ফিরে এলো না। প্রিয় মানুষের হঠাৎই হারিয়ে যাওয়া বড় ব্যথার। অত্যন্ত ভালোবাসার কারও সামনে মরতেও বোধহয় তাদের মন চায় না,হয়ত বা ভগবানও জানেন এদের এভাবে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তাই আমাদের আড়ালে আমরা যখন ঘুমের দেশে স্বপ্নে ভাসি তখন হঠাৎই রথ এসে দাঁড়ায় তাদের স্বর্গপুরীতে নিয়ে যেতে। ঘুম ভাঙে টেলিফোনের ঝনঝনানি শুনে,গলা কাঁপে আর চোখ ভাসে। মার্চ মাসকে ঘিরে কত স্মৃতি। এখন আবার এই মাসটা ভালো কাটে না,এবারও বেশ অসুস্থ হলাম। অনেকদিন ভুগলাম,বিছানা নিলাম। বাবা প্রথমে স্বপ্নে এলো। ছেলে ওষুধ দিলো। সবশেষে এলো মা,বুঝলাম এবার ভালো হয়ে যাবো।
ভালো হয়ে উঠলাম। রঙের উৎসব এল,এমনি এক রঙের উৎসবের দিন দেখবে বলে বৃন্দাবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বাবার আর ফেরা হয়নি। সব রঙ হারিয়ে মা ফিরে এসেছিল। মন ভালো থাকে না,কিন্তু ঐ যে শোকও পুরোনো হয়। ভগবান সবার ক্ষতে প্রলেপ দেন। না হলে তো মানুষ আর বাঁচতেই পারত না। প্রকৃতির রঙে রঙ মিশিয়ে একটা দুটো দিন আনন্দে কাটাবো বলে আমরাও রওনা দিলাম এক নতুন জায়গার দিকে। যাত্রাপথে ঘুম এল না,কত স্মৃতি ঘুরে ফিরে এল। যা মনে হল লিখে ফেললাম একলা রাত জাগার একাকীত্ব হঠাৎই কমিয়ে দিল স্মৃতি।
Comments
Post a Comment