কদিন রান্নার বৌ কাজে আসছে না,তাই এই সময়ে রান্নাঘরে ঢুকে খুন্তি হাতার জোরদার লড়াইয়ে ব্যস্ত নীলা। রাঁধুনী না এলে গৃহিণীকেই সংসারের জ্বালানির জোগান দিতে হয় তাই অফিস থেকে এসেই রান্নাঘরে ঢুকে দুই হাতকে চার হাত করে মোটামুটি যুদ্ধ করে সেরে ফেলে রান্নাটা। কদিন বেশ শীত পড়েছে তাই রান্নাঘরের জানলাটা খোলা হয় না বেশ কিছুদিন। রান্না করতে করতে একটা পছন্দের গান শুনে আনমনা হয়ে যায় পিউ। কান পাতে প্রেসার কুকারের সিটি থামতেই,এই সুর তার বড় চেনা। বরের সাথে হলে গিয়ে বায়না করেই সিনেমাটা দেখে এসেছিল। যদিও সিনেমা শেষে প্রবাল বলেছিল,' উঃ অসহ্য যত সব ইমোশনাল সুড়সুড়ি সারা গল্প জুড়ে। সত্যি বোধহয় মেয়েরা কী চায় তা হয়ত নিজেও জানে না। সবসময় এত চাই চাই কেন? শাড়ি চাই,গয়না চাই,বেড়াতে চাই আবার তাতেও হয় না ভালোবাসা পাচ্ছে না বলে সারাদিন হায় হায় করা।'
সিনেমা দেখতে দেখতে পিউর চোখের কোল কতবার ভিজে গেছিল নিজের দাম্পত্য জীবনে একটু একটু করে ভালোবাসা হারানোর কথা মনে পড়ে। বারবারই মনে হয়েছিল প্রেমিক প্রবালের একটা সময় স্বামী হওয়া তারপর তার সাথে একসাথে পথ হাঁটতে হাঁটতে একটু একটু করে ভালোবাসা হারানোর কথা।
গানটা শুনে জানলাটা একটু ফাঁক করে পিউ, ভালো করে শোনে গানটা। মনটা হারিয়ে যায় আবার। একটু উঁকিঝুঁকি করে বুঝতে পারে তিনতলা থেকে ভেসে আসছে গানের শব্দ।
কিছু সময় গানটা শুনে,আবার জানলা বন্ধ করে পিউ,ডালে ফোড়ন দেবে তাই জানলা বন্ধ করতে হবে এবার। চিমনি চলতে থাকে বো বো করে একটু একটু করে হারিয়ে যায় গানের কথাগুলো, তারপর একটা সময় থেমে যায় গানটা। পিউ মাছ ভাজে ঝোল করে। আবার একটা পরের দিন আসে গানটা আবার বাজে বিষণ্ণ দুপুরে,সেদিন সেকেন্ড স্যাটারডে,পিউর ছুটি তবে প্রবাল অফিসে গেছে। আজকে তেমন কাজ নেই ওর,একটু বাদেই খেতে বসবে। আজ ঠান্ডাটা একটু কম,জানলাটা খুলে দেয় পিউ। পরপর গানগুলো বাজতে থাকে যে গানগুলো একটা সময় ওর মনের ব্যথার সঙ্গী ছিল। কে জানে মন খারাপ থাকলে কেন যে চোখের জল ঝরানো গান শুনতে ইচ্ছে করে আর গান শুনতে শুনতে ঝরে পড়ে অনেকটা জল চোখ থেকে তারপর একটা সময় বুকটা হাল্কা হয়। মন নিজেকেই বোঝাতে শুরু করে যে এ লড়াই ওর একার আর লড়াইটা করতেই হবে বেঁচে থাকতে।
তিনতলায় পূর্বারা থাকে,সুন্দর পরিপাটি সাজানো সংসার ছেলেমেয়েদের নিয়ে। একটা সময় অনেক ঝকমারি থাকলেও এখন অনেকটা মুক্ত ওরা সবাই। সবার ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। আগে রান্নাঘরের জানলা খুলতেই ভেসে আসত ওদের ফ্ল্যাট থেকে হাসির আওয়াজ,কখনও বা পূর্বার গান তার সাথে চায়ের কাপের টুংটাং আওয়াজ। সকালবেলায় ওদের কর্তা গিন্নীর চায়ের কাপের গল্পের টুকরো কথা ছিটকে আসত কখনও নীচেও। ভালো লাগত পূর্বার,মনে হত একদিক দিয়ে হোমমেকারদের জীবনই ভালো।
Comments
Post a Comment