Skip to main content
যে মুহূর্তে আপনি এই পৃথিবীতে ল‍্যান্ড করেছেন সাথে সাথে আপনি কিছু বোঝার আগেই আপনার জাতি আর ধর্ম নির্ধারিত হয়ে যায়। আর তারপর কোন বিশেষ কারণে ধর্মান্তরিত না হলে বাপ ঠাকুরদার ধর্মের শিলমোহর লাগিয়ে একের পর এক পরিচয়পত্র আপনাকে এই দেশের পাকাপোক্ত নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে তৈরি হয়। সুতরাং জাতি,ধর্ম,দেশ এই এক গন্ডীতে থাকতে হলে আমাদের কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। তারমধ‍্যে বোধহয় অন‍্যতম নিজের দেশকে ভালোবাসা,কারণ এই দেশ আমার। এই দেশেই আমার রুজিরোজগার আর পরিবার,দেশের মানুষজন আমার আপনজন। তবে এইসব বস্তাপচা ধ‍্যান ধারণায় আগুন লাগিয়ে ধর্মের সাথে ধর্মকে লড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অনেকদিন আগেই। ধর্মের ভিত্তিতে হয়েছে দেশভাগ,মরেছে মানুষ আর লেগেছে আগুন। ক্ষতি হয়েছে সাধারণ মানুষের,কত মানুষ হয়েছে অত‍্যাচারিত আর গৃহহীন। দিন পার হয়ে গেছে তবুও বন্ধ হয়নি ধর্মের নাম করে মানুষের অন্ধ আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে মানুষকে ধর্মান্ধ বানিয়ে তাদের দিয়ে কুকর্ম করিয়ে ফায়দা লোটা। যারা লাগালো যুদ্ধ তারা মজা দেখলো সাধারণ মানুষকে ধর্মের নামে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলতে দেখে। তাদের ভিটেমাটি চাটি,জীবন কিছুই গেল না বরং রাজনৈতিক অস্থিরতায় সাধারণ মানুষের আবেগ নিয়ে  যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার ফাঁকে গুছিয়ে নিল নিজেদের আখের একে অপ‍রকে দোষারোপ করে। তারপর একদল অশিক্ষিত মূর্খের চোখে ধর্মের পট্টি বেঁধে তাদেরকে ধর্মের নামে নরকে পাঠিয়ে দিল।
       পহেলগাঁও যার সৌন্দর্যের কোন তুলনা নেই,ঋতুর বদলে বদলায় সৌন্দর্যের ক‍্যানভাস। সব ঋতুতেই অনন‍্য এই উপত‍্যকা,যেমন সুন্দর গ্ৰীষ্মে তেমনি তুষারশুভ্র সুন্দরী শীতে। শীতে বরফে মোড়ানো সাদা পথঘাটেও টুংটাং ঘন্টা বাজিয়ে চলে সারিবাঁধা ঘোড়ার দল। সেই পহলগাঁওয়ে স্বর্গীয় দৃশ‍্য দেখার সুখকে মুহূর্তে রক্তাক্ত করে মানুষের জীবন কেড়ে নিল একদল জঙ্গী। তারা যাদের মারল তারা কেউ এই দেশের সরকারের নেতৃত্বে যিনি আছেন তার কেউ নয়। একজনকে বা কোন দলকে জবাব দিতে জবাই করল যাদের তারা হিন্দু। অবশ‍্য এটা নিয়েও কদিন খুব হল যে এসব জিজ্ঞেস করেনি,কিন্তু পরে সংবাদমাধ্যমের খবরে নিশ্চিত হওয়া গেল যে করেছে। একটা দুটো মৃতদেহের প‍্যান্টটা নামানো দেখে আঁতকে উঠলাম,অন‍্য কিছু দেখেনি তো?
     কাউকে বলা হয়েছে কলমা পড়তে,পারলে মুক্তি। জানি না কোনটা ঠিক কোনটা ভুল? সব যেন মাথায় এক জটিল জটের মত রয়েছে। কী করতে চেয়েছে ওরা? 
কদিনের নানা পোস্টে বুঝলাম ওরা যা করতে চেয়েছে সেই ভাইরাস মোটামুটি দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে গেছে। সম্প্রীতির মধুতে বিষ মেশানো হচ্ছে সুকৌশলে। আর এই বিষ ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের মনেও। হয়ত ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়াও বাদ যাচ্ছে না তার থেকে। তাই যারা পাশাপাশি বসে টিফিন ভাগ করে খেত,হঠাৎই সেদিন বললো ওরা খারাপ। স্কুল পড়ুয়া মুসলিম মেয়েটা যে কোনদিন পাকিস্তানে যায়নি সে নিজেকে বেশ কেউকেটা প্রমাণ করতে বলল আমি মুসলিম তাই আমি পাকিস্তানি। মনে হল সত‍্যি কী মানুষের মন বদলাচ্ছে আর ছড়াচ্ছে বিষ? ভারতবর্ষে যাদের জন্ম,সবেতেই যারা ভারতীয় তারা হঠাৎই মনে করছে যে তারা পাকিস্তানি? নাকি এ দেশে বসবাস করে সব সুবিধা ভোগ করেও মনটা বন্ধক রেখেছে পাকিস্তানে? কিন্তু কেন? যদি সত‍্যি তাই হয় তবে বলব এক চরম দুঃসময় আসছে সবার জন‍্যই। যে আগুন দেশের একটা দুটো রাজ‍্যে লাগছে তাকে ছড়াতে দেবেন না। আপনার ধর্ম হিন্দুই হোক বা মুসলিমই হোক যা জঘন‍্য অপরাধ তাকে অপরাধ বলেই স্বীকার করতে শিখুন। প্রতিবাদ করুন আর রুখে দাঁড়ান যেমন দাঁড়িয়েছিল অনেকের মাঝে সেই পহেঁলগাওয়ের ঘোড়াওয়ালা। তাতে কিছু লাভ হয়নি অবশ‍্য, কাফের বলে তাকেও মারা হয়েছিল। ধর্ম আমাদের ধারণ করে,সংযম শেখায়,সংশোধন করে। কোন ধর্মই বলেনি মানুষের প্রাণ নিতে,সে যে কোন জাতিরই হোক। আর যারা তা মানে না তারা আমাদের সবার চোখে জঘন্য অপরাধী। এমনকি যারা পরোক্ষভাবে সেই অপরাধকে সমর্থন করছে তারাও।
 অনেকেই আমরা ওসব ধর্ম টর্ম মানি না বলি তবে আমাদের অনিচ্ছা সত্বেও রিলিজিয়ন কলামটা আমাদের ভর্তি করতে হয় আর সেখানে ধর্ম লিখতেও হয়। যদিও ধর্ম একটাই হওয়া উচিত যার নাম মানব ধর্ম তবে তা কোনদিনই হবে না। তাই মেনে নিতে হয়েছে অনেক কিছুই তবে মানতে আর সইতে গিয়ে অন্ধ আর কালা হয়ে যাবেন না। বিষের স্রোত কিন্তু একটু একটু করে ঢুকে পড়ছে আমাদের সমাজের আনাচে কানাচে একদল কুৎসিত লোকের ষড়যন্ত্রে। এই জলকে বেশি বাড়তে দিলে বিপদ সবার। সমাজের মধ‍্যে যে বিদ্বেষ বিষ জমছে তা নাশ হোক এই কামনা করি। ধর্মের দোহাই দিয়ে খুনোখুনি আর নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা বন্ধ হোক। 

কিছু নিরীহ লোককে অকারণে মারা হল যারা পরিবারের সাথে সময় কাটাবে বলে বেড়াতে গেছিল। সবাই আমরা টগবগিয়ে ফুটলাম,কত গরম গরম বার্তা এলো নেতৃত্বের পক্ষ থেকে। সংবাদমাধ্যম কত বিখ‍্যাত মানুষদের নিয়ে আলোচনাসভা বসালো। আমরা কেউ হিন্দু বলে গর্ব করলাম,কেউ বা মুসলিম বলে। চায়ের দোকান সরগরম হল,ফেসবুকে রীল বানানো হল। আমাদের মত কিছু সামান‍্য মানুষ লেখালেখি করে মনের কষ্ট মেটালাম। কিছু হল? না কিছু হল না। আসলে বোধহয় সত‍্যিই এদেশে কিছু হয় না। শুধু হঠাৎই ঘটে যায় অনেক এমন ঘটনা যা ঘটবে বলে কেউ স্বপ্নেও ভাবে না কক্ষনো। নিজের পড়াশোনার জায়গায় হঠাৎই মেরে ফেলা হয় ছাত্রকে,ধর্ষিতা হয় ছাত্রী। ন বছর চাকরি করার পর হঠাৎই অযোগ্য প্রমাণিত হয়ে সরকারি চাকরি যায়। বেড়াতে গিয়ে ফুচকা,চাট খেতে খেতে হঠাৎই  খেতে হয় গুলি। খবরের চ‍্যানেলগুলো আবার ব‍্যস্ত হয়ে পড়ে নাটকীয় সুরে সংবাদ পরিবেশনে,কারও ফলোয়ার্স বাড়ে। কিছু সংবেদনশীল মানুষ কয়েক রাত ঘুমোতে,খেতে পারে না। তারপর আবার প্রত‍্যেকে ব‍্যস্ত হয়ে পড়ি নিজেদের জীবন সংগ্ৰাম নিয়ে। কারণ বিপদগুলো আবার বোধহয় নতুন করে শেখায় আজকের জন‍্য বাঁচতে। 
        সাম্প্রতিক ঘটনা প্রসঙ্গে ছোটবেলায় পড়া একটা গল্প খুব মনে পড়লো। তখন খুব ছোট আমি ভালো করে ইংরেজী পড়তে পারি না। বাবার খুব বই কিনে দেবার শখ ছিল। তাই শহরে গেলেই কিনে আনতেন নানান বই। ইংরেজী গল্পগুলো বাবা পড়ে শোনাতেন। ছবিতে দেখা ছোট্ট ভেড়ার বাচ্চাটা এখনও চোখে ভাসে। সে জল খেতে এসেছিল একটা ছোট্ট জলাশয়ে,হঠাৎই নজরে পড়ে যায় এক নেকড়ের সে বললো তুই এখানে জল খেতে এসেছিস কেন?

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...