তাকদার ব্রিটিশ বাংলোতে ভূত আছে!
ফেসবুকে একটা পোস্টে দেখে আমি তাজ্জব বনে গেছিলাম। আমি একবার,ছেলে দুবার থেকে এসেছে তাকদাতে। ওর কাছে শুনেই আমরা তাকদা যাই এবং বাংলোর শোভা দেখে মুগ্ধ হই।
মেঘ কুয়াশার দেশে,মাথা উঁচু করে রয়েছে সে বিদেশীর বেশে। দার্জিলিং থেকে চব্বিশ কিমি দূরে প্রায় চারহাজার ফিট উচ্চতায় অবস্থিত তাকদা। এখান থেকে দিব্যি ঘুরে আসা যায় তিনচুলে,লেপচা জগত এবং দার্জিলিং।
তাকদা কথার অর্থ লেপচা ভাষায় কুয়াশা আর স্বার্থক এই নাম। মেঘ কুয়াশা আর রোদের লুকোচুরি খেলার প্রিয় জায়গা এই তাকদা। এখানে মজা করে লুকোচুরি খেলে মেঘ আর কুয়াশা রোদের সাথে। পাইনের জঙ্গল ঘেরা অপরূপা তাকদাকে আরও সুন্দর করে তুলেছে এই পুরোনো বাংলোগুলো। এক সময় দার্জিলিংয়ের সাথে সাথে এই তাকদাও মুগ্ধ করেছিল ব্রিটিশদের তাই শখ করেই নির্জনতাকে সঙ্গী করে এই মেঘের দেশে বানিয়েছিল তারা বাংলো একদম পাহাড়ের ওপরে।
আমরা ছিলাম বাংলো নং বারোতে। পাহাড়ের পথ বেয়ে গাড়ি এসে গিয়েছিল একদম বাংলোর লনের কাছে। প্রথমেই মন কেড়ে নিয়েছিল এখানকার নির্জনতা আর ঘন পাইনের বন। তাছাড়া বাংলো সেই বা কম রূপসী নাকি?
সামনে সুন্দর বাগান ফুলে ফুলে সাজানো। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে সাজানো সুন্দর বিদেশী কায়দার ঘর। তাতে ফায়ারপ্লেসও আছে। বাথরুমের সামনে ছোট্ট ড্রেসিং রুম আর তার দরজা খুললেই চোখে পড়ে সাজানো পাইনের সারি। কুয়াশা পড়লে মনে হয় রূপোলি বরণ ধারণ করেছে।
বাথরুমে বাথটব আছে সবই বিদেশী কায়দায় সাজানো গোছানো। বাংলোর পেছনে কমলালেবুর কয়েকটা গাছও আছে।
এবার আসি ভূতের প্রসঙ্গে,রাতে ব্রিটিশ বাংলো হয়ে যায় অদ্ভুত মায়াময়। চারদিকে অন্ধকার,তার মাঝে দাঁড়িয়ে বাংলো। ওদের পোষা কুকুরগুলো পায়চারি করে এদিক ওদিক। হোস্টেস বেড়াল কোলে নিয়ে দাঁড়ায় বলে খানা গোছানো আছে টেবিলে,আমরা যেন খেয়ে নিই। ঘরের আলোগুলো জোরালো নয়,নীচের ঘরটা সুইট টাইপের,অনেকটা বড়। সেখানে ভাইরা ছিল। আমরা ছিলাম ওপরে।
সার্ভিস খুব একটা ভালো নয়,নিজেরাই সব নিয়ে থুয়ে বাসন রেখে খেয়ে যে যার ঘরে গেলাম শুভরাত্রি জানিয়ে।
একটা হাল্কা আলো জ্বালিয়ে চোখ বুজলাম,ঘুমের ঘোরে শুনলাম দরজায় বেশ জোরে কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে। ভূতের না হলেও কেমন যেন লাগলো একটু। আওয়াজ দিলাম কৌন?
ম্যাডাম খোলিয়ে থোরা,এক ক্যান্ডেল রাখ লিজিয়ে ইধার লোডশেডিং হোতা হ্যায়।
হাত বাড়িয়ে মোমটা নিয়েই দরজা বন্ধ করলাম। তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। একদম এক ঘুমে সকাল। বাইরে তখন বৃষ্টি হচ্ছে ঝিরিঝিরি,পাইন বন ঠান্ডাতে কুয়াশার চাদর জড়িয়েছে গায়ে।
আমরা বাইরের বেতের চেয়ারে বসে গরম দার্জিলিং চায়ে চুমুক দিতে দিতে মন হারালাম প্রকৃতির মাঝে। তারপর ছাতা মাথায় কর্তা গিন্নী একটু রুম ঝুম রিম ঝিম করে আবার এসে বসলাম বারান্দায়। ডাক এল পুরি সবজি রেডি।
এভাবেই কেটে গেল একটা দিন তাকদা ব্রিটিশ বাংলো বারোতে। এখানকার ভাড়া তিন হাজার থেকে শুরু আমরা যখন গেছি,এখন বলতে পারব না। গুগল ঘাটলেই জানতে পারবেন আশাকরি।©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী।
বাংলোর ভিডিও ছেলের তোলা।
হাম্পির লোটাস মহল
প্রাচীন এয়ারকন্ডিশনড হলের এক অপূর্ব নিদর্শন।
বৌকে আরামে রাখার চিন্তা সব যুগে সব পুরুষেরই ছিল এবং আছে। যতই আমরা তাদের দোষারোপ করি না কেন।
সুতরাং পনেরোশো শতকে রাজা কৃষ্ণদেবরায়ও পিছিয়ে ছিলেন না। বিজয়নগর যে কতটা উত্তাপ ছড়ায় গরমকালে তা আমরা শীতকালে গিয়ে মালুম পেয়েছি। প্রচন্ড তাপ আর রোদের তাপে ডিসেম্বরে গিয়েও ভাজা ভাজা অবস্থা।
সুতরাং এই গরমে রানীকে একটু আরাম দেওয়ার জন্য রাজা কৃষ্ণদেবরায় বানিয়েছিলেন এই লোটাস মহল। প্রস্ফুটিত পদ্মের মত আকার এই মহলের তাই হয়ত এর নাম লোটাস মহল।
শোনা রাজা কৃষ্ণ দেবরায়ের দুই রানীর মধ্যে যিনি তার বেশি প্রিয় ছিলেন তার জন্য বানানো হয়েছিল এই মহল। নিশ্চয় রাজা নিজেও নিভৃত সময় কাটাতেন এখানে রানীর সাথে।
তিনতলা এই মহলে কোন দেওয়াল নেই তেমন করে সবটাই পিলারের ওপর গঠিত। চব্বিশটি অপূর্ব সুন্দর কারুকার্য করা পিলার আছে এখানে। এর গঠনও কিছুটা ইন্দো ইসলামিক।
এবার আসি এই মহলের বিশেষত্ব নিয়ে,ঠান্ডা রাখার জন্য এই মহলের ওপরে বসানো ছিল একটা বড় জলের ট্যাঙ্ক। যেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে জল আসত ছাদের বিমে এবং চ্যানেল করা ছিল পিলারগুলোতেও তার ফলে এই জলভর্তি পিলার আর বিম ঠান্ডা রাখত লোটাস মহলকে।
মহল ঠান্ডা হওয়াতে রানীর কোন অসুবিধা হত না। প্রচন্ড গরমেও কষ্টের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেত। এই মহলের অদূরেই আছে এক ওয়াচ টাওয়ার।
লোটাস মহল পেরিয়ে কিছুটা হেঁটে গেট পার হয়ে আছে হাতি বান্ধ্যা মহল বা হাতিঘর। যেখানে হাতিশালে রাখা হত হাতিদের।
লোটাস মহল হাম্পি রাজপ্রাসাদের কাছাকাছিতেই। রানীর লোটাস মহলের চারপাশে সবুজে সবুজ। অনেকটা বাগান দিয়ে ঘেরা জায়গাটা।
লোটাস মহল বা পদ্মঘর রেখে গেল একরাশ মুগ্ধতা। এখানে প্রবেশ মূল্য মাত্র দশ টাকা ভারতীয়দের জন্য।
কুইনস বাথ♥️
হাম্পি
আগের দিনের রাজা রানীদের যে স্নান ঘর বিলাস ছিল তা আমরা দেখতে পাই ঐতিহাসিক জায়গাগুলো ভ্রমণ করলেই। এখনকার আধুনিক ঝা চকচকে বাথরুম বা সুইমিংপুলের থেকে তা ছিল অনেক বেশি উন্নত এবং বিলাশবহুল।
এর নিদর্শন পেতে দেখতেই পারেন কুইনস বাথ অর্থাৎ রানীর স্নানঘর। তবে নামে রানী হলেও এই স্নানের জায়গা ছিল রাজা রানীর জলকেলির স্থান। অচ্যুত রায়ের সময় এই কুইনস বাথ বানানো হয় ষোলশো শতাব্দীতে।
এই স্নানঘর আয়তাকার দেখতে বাইরে থেকে এবং নিরাপত্তার জন্য পরিখা ঘেরা ছিল। হাম্পির রাজপ্রাসাদের খুব কাছেই এই স্নানঘর। বুঝতেই পারা যায় নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যই বানানো হয়েছিল এই কুইন বাথ। কুইন বাথের চারপাশ দেওয়াল দিয়ে আটকানো হলেও মাথার ওপরে কোন ছাদ নেই। আমি কল্পনায় চলে গেলাম আজ থেকে পাঁচশো বছর আগে যখন এই স্নান মহল ছিল জমজমাট। রানীদের নুপুরের ছন্দ আর হাসিতে ভরে উঠত স্নান মহল। ১.৮মিটার গভীর এই সুইমিং পুলে জল নিকাশী এবং জল ভরার ব্যবস্থা ছিল পুরো আধুনিক ঢংয়ে। এই পুলের একপাশে ছিল একটা সুন্দর বেদী।
এর কারুকার্য অনেকটাই ইন্দো ইসলামিক রীতিতে তৈরি। হয়ত পরবর্তীকালে এর রূপ বদল হয়েছে। কুইনস বাথের চারদিক দিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটা সুন্দর জানলা দেওয়া ঘরের মত। তারমধ্যে কুইনস বাথে নামার যে সিঁড়ি আছে তার পাশের ছোট কক্ষতে দেখা যায় বসার জায়গা এবং টেবিল। ছাদের কারুকার্য খুব সুন্দর,লতাপাতা,পদ্মফুল ইত্যাদি সুন্দর করে খোদাই করা হয়েছে।
কুইনস বাথ এখন শুকনো খটখটে,এখানে জলসরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে দেওয়া হয় না।
এখানে কোন এন্ট্রি ফি নেই,একসময় চারপাশে বাগান ছিল। সকাল ছটা থেকে সন্ধ্যে ছটার মধ্যে এখানে আসতে পারেন।
মনটা উশখুশ করছে
একটু পাহাড়ে যেতে পারলে ভালো হত এই গরমে।
কিন্তু কোথায় যাব?
টুক করে হাতে দুদিন সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে।
পাক্কা প্রমিস দেশে থেকেও একটা বিদেশ ভাইবস পাবেন। আমার মত কল্পনাপ্রবণ হলে মনে হবে অস্ট্রিয়া বা সুইজারল্যান্ডের কোন নিরিবিলি জায়গাতে আছেন। সবটাই অবশ্য মনের পাগলামি।
এনজিপি থেকে বেরিয়ে ভাড়া গাড়ি নিয়ে সবুজে চোখ ভিজিয়ে সেবক ব্রীজের ওপর দিয়ে তিস্তার প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে মোটামুটি ঘন্টা তিনেকের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন এখানে।
অবশ্য আপনার যদি ইচ্ছে হয় পথে গরম পরোটা বা মোমো খাবো দড়ির পাকের মত ঘোরানো লুপ ব্রীজের ভিডিও নেব তাহলে অন্য কথা।
আমি নেমেছি,ফটো তুলেছি। গরমাগরম পরোটা আর ঘুগনি খেয়েছি। আর তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে আহ্ বলে আবার গাড়িতে উঠে জানলা খুলে ডুবে গেছি পাহাড়ের প্রেমে।
বডাভিলিঙ্গম কথাটা শুনে প্রথমে ভেবেছিলাম অনেক বড় শিবলিঙ্গ তাই হয়ত এই শিবলিঙ্গের নাম বডাভিলিঙ্গম। কিন্তু জানতে পারলাম এই শিবলিঙ্গ নির্মাণ করেছিলেন কোন গরীব চাষী মহিলা তাই এর নাম বডাভিলিঙ্গম। কর্ণাটকে এই বডাভি কথার দ্বারা নাকি দরিদ্র বোঝায়। বুঝতে পারলাম বিরূপাক্ষ মন্দিরে রাজাদের জাঁকজমকপূর্ণ পূজায় হয়ত উপস্থিত থাকতে পারতেন না গরীব সম্প্রদায়ের মানুষজন কিন্তু ভগবান তো সবার আপনজন। তাই হয়ত কেউ তাঁর সবটুকু দিয়েই স্থাপনা করেছিলেন এই লিঙ্গের যাতে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষজনও ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারে। ব্ল্যাকস্টোনে তৈরী এই লিঙ্গের উচ্চতা প্রায় তিন মিটার মানে অনেকটাই উঁচু। এই লিঙ্গ হাম্পির উচ্চতম শিবলিঙ্গ। বদাভি+লিঙ্গ মানে দরিদ্রদের শিব। এখানে কোন প্রবেশমূল্য নেই,একসাথেই দেখা যায় বিশালাকার নরসিংহ মূর্তি এবং শিবকে। এই শিব মনোলিথিক স্টোনে নির্মিত,মানে একটা মাত্র পাথরকে খোদাই করে বানানো হয় এই লিঙ্গ। এই লিঙ্গে পাথরে খোদাই করে ত্রিনয়ন করা হয়েছে। ভালো করে লক্ষ্য করলে সেই ত্রিনয়ন দেখা যায়। লক্ষ্মী নরসিংহ মন্দির প্রাঙ্গনেই অবস্থিত এই শিব। সামনে একটা দরজা আছে,সেই দরজা তালাবন্ধ ছিল তাই সবাই বাইরে থেকেই দর্শন করলাম। দেখলাম লিঙ্গের ওপর ফুল ছড়ানো বুঝলাম পূজিত হন এখানে শিব। দেখে অবাক হলাম এই সুবিশাল লিঙ্গের তলদেশ সম্পূর্ণ জলে নিমজ্জিত। শুনলাম তলদেশে টানেল করা আছে এখানে জল আসার। এই জল মা গঙ্গার প্রতীক। শিবই মা গঙ্গাকে মর্ত্যে এনেছিলেন তাই মা গঙ্গা শিবের পা ধুইয়ে দিচ্ছেন। এই শিবের মন্দিরের তিনদিকে পাথরের দেওয়াল তোলা থাকলেও ওপরে কোন ছাদ নেই যার ফলে মহাকাল অনবরত ধৌত হচ্ছেন প্রাকৃতিক সমস্ত শক্তির দ্বারাই। যখন সূর্য ওঠে আকাশে তখন এখানে প্রবেশ করে রোদ। আবার ঝরঝর বারিষে সিক্ত হন মহাদেব। বৃষ্টির ধারা ধুইয়ে দেয় তাঁকে। আমরা কোন পূজারীকে দেখতে পাইনি তবে শুনেছিলাম এই মন্দিরে পুজো হয়। একজন বৃদ্ধ পুরোহিত এই মন্দিরে নিজের উদ্যোগেই জলে নেমে শিবকে স্নান করিয়ে,তাঁর অঙ্গচর্চা করিয়ে পুজো করেছেন প্রায় চুয়াল্লিশ বছর। তখন তাকে দেওয়া হত তিনশো টাকা এবং পঁচিশ কেজি চাল। তাঁর অবর্তমানে তাঁর পুত্র এখানে পূজা করেন। ছাদবিহীন বিরাটাকায় শিবের মন্দির আমি কখনও দেখিনি তাই অবাক বিস্ময়ে দেখলাম। হাম্পি নানাভাবে ধ্বংসের মুখে পড়লেও এই মন্দির এবং শিবলিঙ্গ কিন্তু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। মনে করা হয় বিজয়নগর সম্রাজ্যের সময়ই এই বডাভিলিঙ্গম মন্দির তৈরি করা হয়। অদ্ভুত এই মন্দির দেখে বিস্ময়ে মুগ্ধ হলাম। পুজো দিতে এখানে দেখিনি কিন্তু গুগলে দেখা ছবি দেখে অবাক হলাম যে জল সাঁতরে বৃদ্ধ পুরোহিত লিঙ্গের গা বেয়ে উঠছেন পুজোর জন্য। সত্যিই অদ্ভুত আমাদের দেশ আর অতিউন্নত দেশের প্রাচীন সভ্যতা। তাই তো বলতে ইচ্ছে করে সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমি। জয় শিবশম্ভু,ওম্ নমঃ শিবায়ঃ।
গুগল থেকে নেওয়া দুটো ছবি কমেন্ট বক্সে দিলাম।©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী।
গাইডের কথা শুনতে শুনতে মন চলে গেল অতীতের কোন এক পূর্ণিমার রাতে,কল্পনায় ভেসে উঠলেন রাজা কৃষ্ণদেবরায়। হয়ত বা এমন কোন রাতে মন্দির চত্বরে বসে তিনি মুগ্ধ হয়ে শুনছেন ঐ ছাপ্পান্নটি পিলার থেকে ভেসে আসা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সুর।©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
তুঙ্গভদ্রার তীরে অবস্থিত হাম্পির বিরুপাক্ষ মন্দির এখানকার অন্যতম পবিত্র স্থান। বিরুপাক্ষ অর্থ শিব এবং তাঁর স্ত্রীকে এখানে পম্পা বলা হয়। পম্পা এবং বিরুপাক্ষ শিব পূজিত হন এই মন্দিরে। এই মন্দির বিখ্যাত এর সুউচ্চ গোপুরমের জন্য। প্রধানত তিনটি গোপুরম নিয়ে মন্দিরটি। গোপুরমগুলি মুগ্ধতার রেশ রেখে যায়। মূল মন্দির চত্বরটি বিশাল বড় এবং এখানে প্রবেশের মুখে গজরাজকে দেখা যায়। তবে গজরাজ খুবই বুদ্ধিমান,দক্ষিণার বিনিময়ে ভক্তদের আশীর্বাদ দেন। মন্দিরের অসামান্য গাণিতিক নক্সা এবং ছাদে আঁকা ফ্রেস্কো সবাইকে মুগ্ধ করবে। এই মন্দিরের উৎস অত্যন্ত প্রাচীন তবে দেবরায় এবং কৃষ্ণদেবরায়ের আমলেই এই মন্দিরের চূড়ান্ত শিল্পায়ন হয়। কিন্তু মুঘল আমলে ১৫৬৫তে হাম্পির অনেক মন্দির ধ্বংস করা হলেও কোন অজ্ঞাত কারণে বিরুপাক্ষ মন্দির পুরো ধ্বংস করা যায়নি। সুতরাং বিরুপাক্ষ স্বামী পুজো পেয়ে এসেছেন। হাম্পি ভ্রমণকালে দেখেছি কয়েকটা মন্দির ছাড়া এখানে প্রায় সবগুলোই শিবমন্দির কিন্তু বেশিরভাগই ভগ্নদশায়,কিছু মন্দিরে নন্দীর মাথাও কেটে নেওয়া হয়েছে। পুজো হয় না সেই মন্দিরগুলোতে। তবে বিরুপাক্ষ স্বামীর মন্দিরের দেবতা নিয়মিত পুজো পান এবং প্রচুর ভক্ত সমাগম হয় এখানে। এই মন্দিরটি ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত। আমরা এই মন্দিরে পৌঁছেছিলাম সন্ধ্যেবেলায়,আলোর ছটাতে অপূর্ব লাগছিল মন্দির। ভেতরে অনেক জায়গা এবং বসারও জায়গা আছে। আমার পুরীর মন্দিরের কথা মনে হচ্ছিল। এখানে বিবাহ মন্ডপও আছে। খুব ইচ্ছে ছিল দিনের আলোতে একবার বিরুপাক্ষ মন্দিরে যাবো কিন্তু সময়ের অভাবে তা সম্ভব হয়নি। তবে মুগ্ধ করেছিল মন্দিরের সুবিশাল গোপুরম এবং গাণিতিক নকশায় গঠনশৈলী আর ছাদের রঙীন কারুকার্য। শিবরাত্রিতে এখানে শিব ও পার্বতীর বিয়ে উপলক্ষ্যে রথ বের করা হয় এবং দেওয়ালীতেও মন্দিরকে সুন্দর করে সাজিয়ে উৎসব হয়। সূর্যোদয়ের আগেই খুলে দেওয়া হয় মন্দির। মন্দিরের ভেতরে ফোন নিয়ে যাওয়া যায়। মন্দির দর্শন করে মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে এলাম..ওম নমঃ শিবায়ঃ🙏
লেখা ও ভিডিও©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
শিব স্বর্গের সমস্ত দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তাই হয়ত তিনি দেবাদিদেব। কিন্তু তবুও তিনি স্বর্গের সুখ আর বিলাস ব্যসনে দিন কাটান না। শ্মশানে মশানে ঘোরা তাঁর ছাইমাখা রূপে আলোকিত ত্রিভূবন। সামান্য বেলপাতাতে যেমন তিনি তুষ্ট তেমন তিনি রুষ্ট হলে তাঁর প্রলয় নাচনে কাঁপে স্বর্গ,মর্ত্য,পাতাল। কিন্তু এই শিবের নামেই প্রসন্ন তাই হয়ত সয়ে আছেন অনেক কিছুই নীরবে। কর্ণাটকের অনেকটা অংশ এবং মোটামুটি সারা হাম্পিতে অনেকগুলো শিবের মন্দির থাকায় বোঝা যায় রাজা কৃষ্ণদেবরায় ছিলেন শৈব এবং দ্রাবিড়রা মূলতঃ শিবের আরাধানা করতেন। এখানকার বিরুপাক্ষ মন্দিরের কথা আগেই বলেছি। আমাদের ড্রাইভার বলেছিলেন শুধু দেখে চলে আসতেএই শিবা টেম্পলকে। তবে আমরা প্রসন্ন বিরুপাক্ষমন্দিরে ঢোকার লোভ সম্বরণ করতে পারলাম না। এই মন্দিরকে এখন ভূগর্ভস্থ বা আন্ডারগ্ৰাউন্ড শিবমন্দিরও বলে। আনুমানিক চোদ্দশো শতকে নির্মিত হলেও প্রায় চারশোবছর এই মন্দির ছিল মাটির নীচে,উনিশশো আশিতে এই মন্দির পুনরায় আবিষ্কৃত হয়। চারদিকে অনেকটা সবুজ তারমধ্যে পাথরের গেট পেরিয়ে বেশ কয়েকটা সিঁড়ি বেয়ে আমরা নীচে নামলাম। আবার একটা পাথরের দরজা পেরিয়ে প্রবেশ করলাম মন্দিরের সামনে। এই মন্দিরের ছাদ মাটির লেভেলে কিন্তু মন্দির বেশ নীচে। অদ্ভুতভাবে সারাবছরই এখানে জল জমে থাকে। শীতকালেও মোটামুটি হাঁটুজল পেরিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়। বর্ষাতে নিরাপত্তার কারণে ঢুকতে দেওয়া হয় না শুনলাম কারণ সেইসময় আরও গভীর জলে মগ্ন থাকে মন্দির। এই জল যে কোথা থেকে আসে সেটা নিয়েও মতভেদ আছে কেউ বলেন এই জল বর্ষার জমা জল কারণ মন্দিরের পাশ দিয়ে টানেল মত করা আছে। আবার অনেকেই বলেন এই জল তুঙ্গভদ্রার পবিত্র জল। নদীর সঙ্গে এই মন্দিরের মাটির তলা দিয়ে জল যাতায়াতের জায়গা আছে সেই পথেই আসে এই জল। বিশেষতঃ যখন বাঁধের জল ছাড়া হয় তখন জল বাড়ে। বর্ষার বৃষ্টির জল এভাবে সারাবছর থাকতে পারে না। মন্দিরের গর্ভগৃহ সম্পূর্ণ অন্ধকার। মন্দিরের মেইনটেন্যান্স একদমই কিছু নেই। এখানে প্রবেশের কোন টিকিট নেই। তবে জল ডিঙিয়ে ভেতরে সাবধানে যাওয়া উচিত,স্থানীয় কিছু মানুষ বললেন কখনও সাপ বেরোয়। এই মন্দির হাম্পি রাজপ্রাসাদের খুব কাছেই,ধারণা করা হয় এই মন্দির খাস রাজপরিবারের পুজোর জন্যই ব্যবহৃত হত। আমার কেন যেন মনে হল তুঙ্গভদ্রায় স্নান করে রানীরা সুড়ঙ্গপথে এখানে আসতেন জল দিতে আর পুজো করতে। তাঁদের নিরাপত্তার এবং পর্দার জন্যই মাটির নীচে এই প্রসন্ন বিরুপাক্ষ মন্দির করা হয়েছিল। এই মন্দিরেও বেশ অনেকগুলো পিলার আছে কিন্তু সেগুলো নিরাভরণ তেমন কোন কারুকাজ নেই। তবে মাটি থেকে উঠে গেছে একটা স্তম্ভ মন্দিরের ছাদ পেরিয়ে। এই মন্দিরের দেবতা পূজিত না হলেও ভ্রমণপিপাসু মানুষজন ভিড় করেন এই জলমগ্ন ভূগর্ভস্থ মন্দির দেখতে। এককালের রাজপরিবারের দেবতা প্রসন্ন বিরুপাক্ষ জলমগ্ন হয়ে রয়েছেন কয়েকশো বছর পরেও একইভাবে। শুধু নেই কোন পূজাউপাচার আর জাকজমক।
প্রথমেই বলি এটি অরাজনৈতিক পোস্ট, কারণ আমার কাছে রামচন্দ্র কোন দলের নয়। আমি রামকে চিনেছি ছোটবেলায় মায়ের কাছে শোনা রামায়ণের গল্প থেকে। আর তারপর খুব ছোটবেলায় পড়েছি রামায়ণের গল্প অমরচিত্র কথার রামায়ণে। ভগবান রামচন্দ্র সত্য যুগে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন ভগবান বিষ্ণুর অবতার রূপে। আজ হাম্পিতে অবস্থিত হাজারা রামা মন্দিরের কথা বলব। ডিসেম্বর মাসে গিয়েও আমরা রোদে গরমে খুব ক্লান্ত তখন,হাম্পির রাজাদের মূল প্রাসাদ প্রাঙ্গন দেখার পর আমাদের অটো নিয়ে এল হাজারা রামা(হাজার রাম) মন্দিরে। এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল দ্বিতীয় দেবরায়ের আমলে পনেরো শতকের শুরুতেই। রাজপ্রাসাদের কাছেই অবস্থিত এই মন্দির রাজপরিবারের পূজার স্থান ছিল। এই মন্দিরকে হাজারা রামা বলা হয় এই কারণে এখানে হাজার বা তারও বেশি রামের খোদাই করা মূর্তি আছে। সারা মন্দির জুড়েই রামকথা। রামের জীবনের বিভিন্ন সময়ের বর্ণনা। কিছু চিত্রে আনা হয়েছে রাম এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণকেও। এছাড়াও এখানে আছে তখনকার সময়ে দশেরা উৎসব কিভাবে পালিত হত তার কিছু খোদাই করা চিত্র। মন্দিরটি খুব একটা বড় নয়। একটা বারান্দা, গর্ভগৃহ এবং হল নিয়েই মন্দির। মন্দিরের চূড়াতেও ভগবান রামচন্দ্রের নানা সাজের মূর্তি দেখা যায়। এই মন্দিরের ভাস্কর্য শুধুই রামকথা বলে বলে এই মন্দিরের নাম হাজারা( হাজার রাম)। মনে হতে পারে হাম্পিতে রাম কেন? হাম্পির সাথে রামের সম্পর্ক খুবই গভীর কারণ সীতাকে যখন রাবণ হরণ করেন তখন রামচন্দ্র কিষ্কিন্ধ্যা পর্বতে এসেছিলেন বানরবাহিনীর কাছে সাহায্য চাইতে। সুতরাং এখানে ভগবান রামচন্দ্রের পবিত্র চরণ স্পর্শের কারণে রামকেও আরাধনা করেছেন বিজয়নগরের রাজারা। বিজয়নগরের গৌরব মিশেছে প্রায় মাটিতে লুন্ঠনকারীদের জন্য এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে। তবুও তাঁদের কিছু কীর্তি এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। এখানকার পিলারের কারুকার্য খুব সুন্দর। আমি কমেন্ট বক্সে আরও কিছু ছবি দিলাম। মন্দিরের বাইরের উঁচু প্রাঙ্গনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম আর অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম এই অনন্য রামমন্দিরের দিকে।
বয়েস বেড়েছে,তাই নিয়ম মেনে নারী জীবন থেকে মুছে গেছে অনেক কিছুই। এক সময় প্রখরা হরমোনেরাও তখন প্রায় অন্তঃসলিলা।
তবুও নারী বাঁচতে চায় পঞ্চাশ বা ষাট পেরিয়েও স্বমহিমায়। অবশ্য সংসার তবুও মুক্তি দিতে চায় না তাকে,কখনও হাজার কর্তব্য পায়ে বেড়ি বাঁধে। সেই ভারী শেকল বাঁধা পায়ে হোঁচট খেয়ে পড়েও আবার নারী ওঠে,কারণ আবেগ আর স্বপ্ন দেখার চোখদুটোই তাকে হাতছানি দেয়। বলে আয় আয়,সময় যে বয়ে যায়।
বয়েস হয়ে যাচ্ছে বলে হাহুতাশ করে লাভ নেই। পরাধীনতার শৃঙ্খল পায়ে পুরোপুরি জড়িয়ে বুকে পাথর রেখে বসে পড়ার আগে এই সময়টুকুই তো আছে আপনার জন্য। তাই পঞ্চাশ পেরোনো নারী এবার চোখ সাজাও নিজের জন্য,আলমারিতে যে শাড়িগুলো পরা হচ্ছে না সেগুলো পরে সাজো শুধু নিজের জন্য।
ষাট হয়েছে তো কী?
এখন তো নিজেই বড়লাট😊
সুতরাং যতদিন পারো ধরে রাখো ঠাটবাট,আর অবশ্যই নিজের যত্ন করে নিজেকে রেখো ফিটফাট।
বাইরে বেড়াতে গিয়ে দেখতে পাই বেশিরভাগ বয়স্ক মানুষজন নিজের মত জীবনকে উপভোগ করছেন। মৃদুস্বরে বসে সঙ্গীর সাথে চোখে চোখ রেখে গল্প করছেন। কেউ বা ধরেছেন হাত অথবা জড়িয়েছেন কাঁধ। বুঝতে পারি যে ভালোবাসার ডালপালা শুকিয়ে গেছিল প্রায় হয়ত তা আবার যৌবনের ফেলে আসা দিনের মত সবুজ হয়ে ফুল ফোটালো।
জাহাজে তখন নাচগান হচ্ছে,সবাই উপভোগ করছেন। লাঠি হাতে চিরতরুণী মহিলা গা ভাসালেন সেই আনন্দে। আনন্দে লালচে গালে আরও লালচে আভা। হাতের লাঠি থাক পড়ে,জীবনকে চেটেপুটে নিলেন প্রাণভরে। আমি ভিডিও করলাম আর মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। হয়ত বা কিছু শিখলামও।
বয়েস হয়েছে বলেই অন্তর্বাস ত্যাগ করে অন্তঃপুরবাসিনী হবেন না বরং দূর দ্বিপবাসিনী হবার ইচ্ছেটুকু নিয়ে বাঁচুন।
Comments
Post a Comment