Skip to main content

Posts

Showing posts from November, 2020

রাগে অনুরাগে

#রাগে_অনুরাগে# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "সত‍্যিই একটা মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছিলো বটে! সারাটা জীবন জ্বালিয়ে মারলো আমাকে। কখনো শান্তি দিলোনা গো জীবনে।শোনো আজকে মুড়ি আছে মুড়িই খাও।আজ রুটি করতে পারবোনা,মানে রুটি হয়নি।"        প্রত‍্যেক দিনের মত আজও শান্তির গলা শোনা যায় একতলা থেকে।ওপরে তখন হাতে ঝাড়ন নিয়ে ড্রেসিং টেবিল পরিস্কার করছে রুণা কদিন না ঝাড়লেই মাকড়সার জাল পড়ে যায়।শঙ্খ তখনো বিছানায় গড়াগড়ি করছে.." উফ্ একবার যাও তো নিচে। মা সবসময় এত চেঁচামেচি করে যে কেন? একটু বাদেই বলবে মাথা ধরেছে তারপর শুয়ে পড়বে।বোধহয় আবার প্রেসার বেড়েছে।"         রুণা জানে শাশুড়ি মায়ের মাথা গরম কেন আজ কদিন হলো মালতীদি কাজে আসছেনা। ও যদিও একটু বেলায় রান্নাঘরে ঢুকবে তবুও সকালটা মা সামলায়।     আর বাবা সকালের জলখাবারে রুটি ছাড়া কিছু খেতে চাননা এই নিয়ে গন্ডগোল। রুটি করতে ওদের কারো ভালো লাগেনা তাই ঠিক হয়েছে এই কদিন সকালে মুড়ি পাউরুটি এই দিয়েই চলবে,আর ছেলেমেয়েদের জন‍্য ম‍্যাগি সেদ্ধ বা কর্ণফ্লেক্স অথবা ডিমের ওমলেট আর পাউরুটি।               ...

বড়মা

#বড়_মা# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# " সব শাড়িগুলো খুলতে হবেনা, একটু নামাও আমি দেখে নেবো।" "সে কি ম‍্যাডাম এটা তো আমাদের কাজ, কোন সমস‍্যা নেই আপনি দেখুন।" শাড়ি বাছতে বাছতে নিজের শাড়িগুলো নিয়েই একটু বেশি মাথাব‍্যাথা ছিলো রাণীর, হাজার হোক একমাত্র বৌদি বলে কথা। দেওরের বিয়েতে ওরই সমস্ত দায় দায়িত্ব মানে রজত চোখ বন্ধ করে সব বৌদির ঘাড়ে ফেলে দিয়েছে। রজত চাকরিতে সবে বদলী হয়ে কলকাতার বাইরে যেতে বাধ‍্য হয়েছে। যদিও বাড়ি থেকেই যাতায়াত করে। কি যে হলো ছেলেটার বন্ধুর বিয়েতে বরযাত্রী গিয়ে এক গ্ৰামের মেয়েকে পছন্দ করে এসেছে। ইশ্ এত শাড়ি বেছে আর কি হবে পরবে তো ঐ গাইয়া মেয়েটা। যদিও রাণী বলেছিলো দেওরকে, "আমাকে আর টানা কেন বাপু, ওকে একদিন আসতে বলো, তারপর একসাথে বাজার করে নাও।" "ওদের বাড়ির লোকজন এখনো অতটা এগোতে পারেনি বৌদিভাই। বিয়ের আগে মেয়ে ড‍্যাং ড‍্যাং করে বরের সাথে কেনাকাটা করতে যাবে তা হবেনা।"... "কেমন যে এরা জানিনা, আর ওখানেই তোমার মন বসে গেলো।"..রাণী এর আগে অনেকবার এই কথা বলেছে রজতকে, কিন্তু রজত হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। অভিমান করে দেখতেও যায়নি হবু জাকে। মনে মনে ভেব...

থট রিডিং

শীত আসার আগে থেকেই কুয়াশায় মন ঢাকা সুমেধার কেন যেন ভালো লাগছেনা মনটা কিছুদিন ধরেই। গত শীতের পর পরই গরমের আগে দিয়ে একদম নতুন বিয়ের পর কলকাতা ছেড়ে আসা এখানে অয়নের চাকরির সূত্রে। মানে হঠাৎই অল্প মন খারাপের গল্প,আচ্ছা কেন যে এমন হয়?    প্রথমটায় মনে হাল্কা খুশির পালকের ছোঁয়া ছিলো..শ্বশুরবাড়িতে সবাই বলেছিলো ভীষণ পয়া বৌমা,বিয়ের পরই ছেলের বিদেশে চাকরির অফারটা এলো। সত্যিই তো এদেশের চেয়ে ওখানে সবই বেশি বেশি মানে উন্নত জীবনযাত্রা বেশি মাইনে।          সুমেধার হাবি অয়নের হোটেলের চাকরি, প্রথমে কিছুদিন হায়দ্রাবাদে কাজ করে এতদিন কলকাতার হোটেলেই ছিলো।তারমধ‍্যেই মা হঠাৎই পছন্দ করে ফেললো সুমেধাকে বুক ফেয়ারে গিয়ে। সত‍্যি মা পারে,বুক ফেয়ারে বই কিনতে গিয়ে গলায় ডোকরার লকেট ঝোলানো কপালে বড় টিপ আর কানে গণেশের মোটিফের দুল পরা সুমেধাকে হঠাৎই ভালো লেগে গেলো।          অয়নের মা টুকটাক কবিতা লেখে আর ঐ গ্ৰুপেই নাকি সুমেধা লেখালেখি করতো।একটা বই প্রকাশ করতে এসেই দেখা। উঃ বাবা এতদিন চিরুনী তল্লাশির ফলে না পেলেও অবশেষে পাত্রী মিললো কুম্ভমেলায় না না থুড়ি বই মেলায়।...

দুয়ো

#দুয়ো# হঠাৎই একদিন ভেতরের বাড়িতে খবর গেলো তাড়াতাড়ি বরণডালা সাজাও অতীন নামছে গাড়ি থেকে দেখে তো মনে হচ্ছে সাথে বৌ নিয়ে ঢুকছে। কোন কথা নেই বার্তা নেই একেবারে বিয়ে করে এলো! নিভা শুনে যে কি করবেন বুঝতে পারেননা, এর আগে দুই ছেলের বিয়ে নিজে দেখেশুনে দিয়েছেন। একদম মাথার চুল থেকে পায়ের নখ দেখে বংশ মর্যাদা যাচাই করে এনেছেন দুই বৌকে। নাতি নাতনি আর দুই বৌকে নিয়ে ভরা সংসার নিভার। তবে চোখের মণি ওনার ছোটছেলে।তা নিয়ে অবশ‍্য মাঝে মাঝেই আড়ালে কথা বলে বৌমারা..."তোমরা যতই মা মা করো মায়ের চোখের মণি কিন্তু সেই ছোটছেলে।" অবশ‍্য ছেলেরা খুব একটা গায়ে মাখতোনা, কারণ মা বাবাকে চটিয়ে লাভ নেই এখনো সব বিষয় সম্পত্তিই বাবার হাতে। "অযথা তোমরা কি সব যে বলো বুঝিনা অতীন আমাদের সবার প্রিয়। সবচেয়ে ভালো পড়াশোনায় ছিলো এখন কলেজে পড়ায়। সবাই ওকে ভালোবাসে।" সবার নয়নের মণি অতীন যার ওপর সবার আশা ভরসা সে বন্ধুর বিয়েতে সাতদিনের জন‍্য ভাগলপুর গিয়ে শেষপর্যন্ত বিয়ে করে ফিরলো! কি এমন হলো? ভেতর বাড়িতে খবর যেতেই বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিভা চোখের জলে ভেসে শাপ শাপান্ত করলেন ছোটবৌমাকে না দেখেই। "ওরা কতক্ষণ বাইরে দ...
গুপী গাইন বাঘা বাইন যখন দেখতে গেছি অথবা সোনার কেল্লা তখন খুব ছোট আমি। আমরা গ্ৰামে থাকতাম সেখানে কোন সিনেমা হল ছিলোনা তাই গরমের ছুটিতে বা পুজোর ছুটিতে যখন মালদা   যেতাম তখন বাচ্চাদের কোন সিনেমা এলেই বাবা নিয়ে যেতেন দেখতে। তখন বাড়িতে টিভি ছিলোনা,সিনেমা দেখা মানে একটা বেশ বেড়াতে যাওয়া যাওয়া ভাব।সকাল থেকেই যাবো কোথাও একটা এই ভেবে মনে খুব খুশি তাইজন‍্য একটু আগে বেরিয়ে বাবা কিনে আনতেন হলুদ রঙের পাতলা কাগজের টিকিট আবার কখনো গোলাপী রঙেরও দেখেছি। তারপর একটা ভালো জামা আর নিউকাট জুতো পরে বাবা মায়ের সাথে রিক্সায় সিনেমায় যাওয়া।এই ভাবেই ছোটবেলায় হাতে গোনা যে কয়েকটা সিনেমা দেখেছি তারমধ‍্যে মনে দাগ কেটে গেছিলো খুব বেশি করে সোনার  কেল্লা,হীরক রাজার দেশে কারণ দুটোই রঙীন ছবি আর তার মধ‍্যে যে মানুষটাকে খুব মনে আছে তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আমি অবশ‍্য তাকে তখন ফেলুদা বলেই চিনতাম।একটু বড় হয়ে পরে বই পড়ে জেনেছিলাম ফেলুদা আসলে একটা গোয়েন্দা চরিত্রের নাম। কোন সিনেমায় বাবা নিয়ে যেতে চাইলেই বলতাম.." ফেলুদা দেখতে যাবো তো?" ছোট্ট শিশুমন অবাক হয়ে ভেবেছিলো এত বুদ্ধি আছে ফেলুদার!   একটা সময় আবৃত্তি...

মুক্ত করো ভয়

"হ‍্যাঁ মানে কতদিন আপনাদের শারীরিক সম্পর্ক নেই? নাকি ছিলো এখানে বলছেন নেই। তাহলে আপনার এই সন্তান যাকে আপনি আপনার নিজের ছেলে বলে খুব গলাবাজি করছেন তাকে কি মানে অভিজিতবাবুর সাহায‍্য ছাড়াই..নাকি অন‍্য কারো সাহায‍্যে এনেছেন?" কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কেমন যেন দম আটকে আসে পৌষালীর। উঃ আর যেন লড়তে পারছেনা, গলাটা পুরো শুকনো খটখটে।জিভ আড়ষ্ট হয়ে আসছে মুখের ভাষারা আজ যেন লজ্জাতে নির্বাক। পান খাওয়া রঙছোপ লাগানো দাঁত বার করে ওদিকে একটা হাসি হেসে উকিলবাবু আবার শুরু করেন," কি পৌষালী দেবী কিছু বলুন? ডিভোর্স নেবেন, আপনি অত‍্যাচারিত, মোটা খোরপোষ দাবী করেছেন আর এতটুকু কথার কোন উত্তর দিতে পারছেননা? বলুন কতদিন আপনাদের শারীরিক সম্পর্ক নেই? আপনিই কি তাহলে শারীরিক ভাবে অক্ষম তা স্বীকার করছেন?" কানে হাত চাপা দেয় পৌষালী,ওদিকে ওর উকিল তখন মৃদুস্বরে আপত্তি জানায় আপনি কিন্তু আমার মক্কেলকে অযথা হেনস্থা করছেন। কোন ভারী হাতুড়ির শব্দ হয়না তাই পৌষালীকে বলতে হয়, "প্রথমদিকে দুএকদিন হয়েছিলো অনেক চেষ্টায় আর তাতেই আমার সন্তান আসে। তারপর শুধুই অত‍্যাচার করেছে আমার ওপর। ও বিকৃতকাম এক পুরুষ, নিজের শরীর সায় না দ...

সীতাহারটা

#সীতাহারটা# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# অর্ণাদের পুরোনো বাড়ি খড়দহতে গঙ্গার ধারে ।যদিও এখন ওরা মানে ও, বাবা আর মা কলকাতাতেই ওদের বাগুইহাটির ফ্ল্যাটে থাকে। তবুও বাবার খুব ইচ্ছে একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা সুতরাং খড়দহ থেকেই বিয়েটা হোক। তাছাড়া সাগ্নিকদের বাড়িও তো নৈহাটি সুতরাং একদিক দিয়ে ভালোই হবে,অসুবিধার কিছুই নেই। যতই কলকাতায় ছোট একটুকরো পাখির বাসা থাকুকনা কেন শিকড় তো সেই খড়দহতেই।ওখানেই ঠাকুর মন্দির আর আত্মীয়স্বজন আর ওদের মাঝেই বড় হয়ে ওঠা তাই ছোটবেলার স্মৃতি আর মাটির টান বলে তো কিছু একটা আছেই।                           যদিও অর্ণা কিছু না বললেও মৌমি একটু আপত্তি করেছিলো," ইশ্ এখানে ফ্ল্যাটে মেয়েটা বড় হয়েছে।আমার আর ওর সব বন্ধুবান্ধব তো এখানেই তা এখান থেকে বিয়ে না দিয়ে সেই টেনে নিয়ে যাচ্ছো খড়দহতে।ওখানে এক গাদা আত্মীয়স্বজন,খরচ কত বাড়বে হিসেব আছে?"         "তা বাড়ুক,একমাত্র মেয়ে আমাদের আর তো তেমন কোন অনুষ্ঠান নেই ওর বিয়েটা ছাড়া।বাবা মা আছেন তাছাড়া আমাদের প্রতিষ্ঠিত বিগ্ৰহ নিত‍্যানন্দ মহাপ্রভু আছেন তার সামনেই মেয়ের ব...

#স্বপ্ন_না_সত‍্যি#

#স্বপ্ন_না_সত‍্যি# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# কদিন থেকেই লম্বা ফর্দ হচ্ছে,অবশ‍্য সবটাই দীপার মাতৃদেবী নন্দার ডিপার্টমেন্ট। নন্দার ভীষণ চিন্তা অতদূরে পোস্টিং কে জানে কিভাবে থাকবে এই মেয়ে? সব সময় তো ওকেই সবটা গুছিয়ে দিতে হয় মেয়েকে। ছোট থেকেই পড়া পাগল তাছাড়া অনেক ভুগেছে একটা সময়, তাই খুব রুগ্ন মেয়েটা।                       একটা সময় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হত বাঁচবে তো মেয়েটা? অথচ ওকে বাঁচিয়ে রাখার জন‍্যই তো এত তোড়জোড় মানে নন্দার একার লড়াই।       বারান্দায় সেই খোঁড়া কাকটা এসে এই সাতসকালেই ওর মত করে দাবী জানাচ্ছে খাবারের। কেন যেন নন্দার খুব মায়া ওর ওপরে।বিস্কুটের কৌটো থেকে একটা বিস্কুট নিয়ে বাড়িয়ে দেয় ওর দিকে, মানে ঐ জানলার শেষ প্রান্তের বাড়ানো জায়গাটাতে। ও নিজের প্রাপ‍্য পেয়ে খুশি হয়ে উড়ে যায়। নিচে কলিংবেল বাজে টুংটাং করে একটু বিরক্ত হয় নন্দা,ইশ্ এই সময়ে আবার কে এলো?            একটু বিরক্ত হয়েই দরজা খুললো নন্দা..ওহ্ ম‍্যাগাজিনটা আবার আলাদা করে দিয়ে গেলো।          মে...